× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঐকমত্যের প্রত্যাশায় বৈঠক শুরু আজ

ফ্যাসিবাদ বিতাড়নে অভিন্ন সুর

এম. সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫ ০২:৫১ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় ঐকমত্যের প্রত্যাশা নিয়ে আজ ফের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক শুরু করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ বলেছেন, রাষ্ট্র যেন কখনো স্বেরাচারী না হয় সেটি নিশ্চিত করাই সংস্কারের লক্ষ্য। ৩০টি রাজনৈতিক দল  কমিশনের সাথে বৈঠকে অংশ নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরবেন। এ বৈঠকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন ও নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই জাতীয় সনদ (জুলাই সনদ) করা হবে।  আগামী মাসে জুলাই সনদ তৈরির লক্ষ্য রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের। যেসব প্রস্তাবে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো জুলাই সনদে যুক্ত হবে না বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে মাথাায় রেখেই মৌলিক বিষয়ে সবাই একমত হবে সেটাই আশা করছি। রাষ্ট্র যেন কখনো স্বৈরাচারী অবস্থায় ফিরিয়ে না আসে সেটিই চাওয়া।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, সব বিষয়ে সবাইকে একমত হতে হবে এটা গণতান্ত্রিক চিন্তা নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে তো আমরা বাকশাল করতে যাচ্ছি না। সবাইকে যে একমত হতে হবে- এটা বাকশালী চিন্তা, যেটা শেখ হাসিনার পিতা করেছিলেন। কারণ বিভিন্ন দলের বিভিন্ন দর্শন, বিভিন্ন চিন্তা থাকবে, ভিন্নমত থাকবে। যেখানে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর বাইরে সংস্কার করার সুযোগ নেই। এর বাইরে কিছু করতে হলে  জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়ার সরকারের হাত ধরে আসতে হবে ।

জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, এবারের বৈঠকে কয়েকটি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত হতে পারে। আমরা আমাদের মত দেবো। যে সব বিষয়ে দ্বিমত আছে সেগুলো নিয়ে ফের বৈঠকের পর চূড়ান্ত হবে বলে আশা করি। আমরা চায় রাষ্ট্র আর কখনো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা নিয়ে না আসুক।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেছেন, মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে একমত না হওয়া গেলে রাষ্ট্রের পরিবর্তন সম্ভব না। সেটি গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার বিপরীত। যারা অন্তত মৌলিক বিষয়গুলোতে সংস্কারে একমত হবেন না তাদের উদ্দেশ্যে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে এ বিষয়ে বলেছেন, সংস্কার এবং বিচার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। তা না হলে আমরা ফের আগের অবস্থায় ফিরে যাব। জুলাই অভ্যুত্থানের আরেকটা আকাক্সক্ষা ছিল বিদ্যমান পচাগলা রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন। সেটি যদি না হয় তাহলে এতো জীবন আত্মত্যাগের কোনো মানে হয় না। সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০ মার্চ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করে কমিশন। গত ১৯ মে পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, সিপিবি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনে আলোচনা করেছে কমিশন।

প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় অনেক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলেও মৌলিক সংস্কারের কিছু প্রস্তাব নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। সেসব প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ২ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরের দিন বিষয়ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তিনটি বিষয়ে (সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন ও নারী প্রতিনিধিত্ব) আলোচনার পর ওই দিন অধিবেশন মুলতবি করা হয়। সেই মুলতবি বৈঠকই মঙ্গলবার আবার শুরু হচ্ছে।

গত রোববার কমিশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবারের আলোচ্যসূচি হিসেবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো আগের অসমাপ্ত আলোচনা সমাপ্ত করা (সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন ও নারী প্রতিনিধিত্ব), দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া।

এদিকে, এর আগের বৈঠকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন বা সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু স্বাধীনতা দেওয়া হবে, সে প্রশ্নে অনেকটাই কাছাকাছি অবস্থানে এসেছে রাজনৈতিক দলগুলো। কিছু সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে করার বিষয়েও অনেকটা ঐকমত্য হয়েছে। তবে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ উন্নীত করা এবং নারী আসনে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্য দূর হয়নি।

বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। তাতে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। এই বিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। তাদের প্রস্তাব ছিল, অর্থবিল ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম পর্বের আলোচনায় বেশির ভাগ দল ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত ছিল। তবে অর্থবিলের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাব ছিল দলগুলোর। সেই আলোচনার ভিত্তিতে গতকালের আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব উত্থাপন করে, তা হলো অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধন বিল ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন। কোনো কোনো দল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, এমন সব বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া যাবে না, এমন শর্ত যুক্ত করার কথা বলে।

এদিকে, সাধারণ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন ও গণভোট এবং জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনে শক্ত আপত্তি আছে বিএনপির।

বিএনপি মনে করছে, ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন বাধ্যতামূলক করা হলে নির্বাচিত সংসদের ক্ষমতা কমে যাবে। আবার সংবিধানের যে কোনো সংশোধনের জন্য গণভোট বাধ্যতামূলক হলে সংসদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হবে।

বিএনপির আশঙ্কা, এনসিসি গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের ক্ষমতা কমে যাবে। আবার সংসদ ভেঙে দেওয়া অবস্থায় উচ্চ ক্ষমতার এই এনসিসির জবাবদিহির কোনো কাঠামো থাকবে না। আবার নির্বাচনকালীন অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এনসিসি চাইলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করারও সুযোগ থাকবে। ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে একমত হলেও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপির প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয়। এছাড়া এনসিপি এ বিষয়ে অবস্থান হলো- অর্থবিল ও আস্থা ভোট বাদে অন্য বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধন বিল ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন এ বিষয়ে অনেকটাই ঐকমত্য হয়েছে। তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

এত আলোচনার  নেপথ্যে কী

এত আলোচনার নেপথ্যে কী

জরুরি অবস্থা নিয়ে সংসদে বিস্তারিত বিতর্ক হওয়া উচিত: সালাহউদ্দিন

জরুরি অবস্থা নিয়ে সংসদে বিস্তারিত বিতর্ক হওয়া উচিত: সালাহউদ্দিন

সংশোধনী প্রস্তাব আনছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন: আলী রীয়াজ

সংশোধনী প্রস্তাব আনছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন: আলী রীয়াজ

বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনে ঐকমত্য হয়েছে : আলী রীয়াজ

বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনে ঐকমত্য হয়েছে : আলী রীয়াজ

 গণমাধ্যম সংস্কারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ, ১২ নতুন সিদ্ধান্ত

গণমাধ্যম সংস্কারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ, ১২ নতুন সিদ্ধান্ত

 গাইবান্ধায় এসএসসিতে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

গাইবান্ধায় এসএসসিতে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

 ইন্দুরকানী উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ইন্দুরকানী উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

 লামার সব রিসোর্ট বন্ধ ঘোষণা

লামার সব রিসোর্ট বন্ধ ঘোষণা

 সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ ডাকার নিয়ম বাতিল

সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ ডাকার নিয়ম বাতিল

সংশ্লিষ্ট

‘শাপলা’ প্রতীক পাচ্ছে না এনসিপি

‘শাপলা’ প্রতীক পাচ্ছে না এনসিপি

রাতে রাজধানীতে জামায়াতের মিছিল

রাতে রাজধানীতে জামায়াতের মিছিল

গণহত্যার বিচার চেয়ে সোহেল তাজের স্ট্যাটাস

গণহত্যার বিচার চেয়ে সোহেল তাজের স্ট্যাটাস

গণহত্যার জন্য শুধু হাসিনা নয়, আওয়ামী লীগেরও বিচার হওয়া উচিত: ফখরুল

গণহত্যার জন্য শুধু হাসিনা নয়, আওয়ামী লীগেরও বিচার হওয়া উচিত: ফখরুল