নিখিল মানখিন
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫০ পিএম
বিশ্বজুড়ে তোলপাড়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক গতকাল বুধবার থেকে বিশ্বজুড়ে কার্যকর হয়েছে। ওই শুল্ক আরোপ কার্যকরের পর থেকে দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় চলছে। বিভিন্ন শেয়ারবাজারে দরপতন শুরু হয়েছে। তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ওষুধের বাজারে পড়বে বড় প্রভাব। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৯ এপ্রিল এই বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে চীনের শুল্কহার ৫৪ শতাংশ বাড়ায় ট্রাম্প প্রশাসন। এতে দেশটির শুল্ক বেড়ে ১০৪ শতাংশে পৌঁছেছে। এর জবাবে মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে চীন।
আজ ১০ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্ককে নিপীড়নমূলক আখ্যা দিয়ে এই শুল্ক আরোপ করেছে চীন। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলো। এখন নতুন সিদ্ধান্তের ফলে চীনা পণ্যে শুল্কহার আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। গত ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মোট ৬০টি দেশকে তিনি বড় অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কী হারে শুল্ক আরোপ করছে তা নিরূপণ করে তাদের ওপর অর্ধেক হারে শুল্ক আরোপ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার অর্থনৈতিক লক্ষ্যের জন্য এই শুল্ক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে পূর্ণোদ্যমে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার এক দিনের মাথায় গত ৩ এপ্রিল চীনও সমান হারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় তারা দেশটির বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করলে দেশটির ওপর আরও ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হবে। তার ভাষ্য, ‘আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে নতুন ও অনেক বেশি হারে শুল্কের মুখোমুখি হবে।’
এর প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছে, ‘চীনকে চাপ বা হুমকি দিয়ে কখনোই লাভ হবে না।’ কিন্তু চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও সাফ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়বে তারা এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘ব্ল্যাকমেইলিং আচরণ’ তারা কখনোই মেনে নেবে না। চীনের অবস্থান হলো- শুল্ক আরোপের এই পরিকল্পনা প্রত্যাহার করা হোক এবং দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার মত-পার্থক্যের সমাধান করা হোক।
গতকাল বুধবার সকাল থেকেই বৈশ্বিক গণমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতেই জানা যায়, চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্কে খেপে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন। ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক আরোপের জবাবে চীন মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা আগে ছিল ৩৪ শতাংশ। ১০ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্ককে নিপীড়নমূলক আখ্যা দিয়ে তারা এই শুল্ক আরোপ করেছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতে হতেই বড় ধরনের পতন হয়। এরপর ইউরোপের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পরপরই সূচকের পতন হয়। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক আঞ্চলিক সূচক প্যান-ইউরোপীয় স্টকস ৬০০ কমেছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আঞ্চলিক এই সূচকের অন্তর্ভুক্ত সব খাতের শেয়ারের দামেই নেতিবাচক প্রবণতা চলছে।
আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবা, খনি ও তেল ও গ্যাস খাতের সূচকগুলো ব্যাপক হারে পড়ে গেছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, খনি, তেল ও গ্যাস খাতের শেয়ারের দাম যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। সেই সঙ্গে দাম কমেছে জ্বালানি তেলের। চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম নেমে এসেছে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। দর কমেছে ডলারের। সব মিলিয়ে মন্দার আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
বিশ^জুড়ে যেসব প্রভাব পড়ল
শেয়ার বাজারে পতন : আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা নিউইয়র্ক টাইমস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় পতন হয়েছে। এশিয়ার বাজারে গতকাল সকালে যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার্স সূচকের পতন হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। জাপানের নিক্কি এশিয়া সূচকের পতন হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও গতকাল বুধবার এই সূচকের ৬ শতাংশ উত্থান হয়। তাইওয়ানের মূল সূচক টিডব্লিউআইআইয়ের পতন হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। নাসডাক ফিউচার্সের পতন হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
এ ছাড়া ইউরোপের ইউরোস্টক্স ৫০ ফিউচার্সের পতন হয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এফটিএসই ফিউচারের পতন হয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে চীনের ব্লু চিপস সূচকের পতন হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ আর হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকের পতন হয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। গত মঙ্গলবার এশিয়ার বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। সেই ধারায় মার্কিন বাজারও শুরুতে ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু এরপর ট্রাম্প চীনের পণ্যে ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৪ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট পড়ে যায়। এটি ৫০ বছরের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ উল্টে যাওয়ার ঘটনা। দিনটি শুরু হয়েছিল সূচকের ২ শতাংশ উত্থান দিয়ে। কিন্তু শেষমেশ দিন শেষ হয় ১ শতাংশের বেশি পতনের মধ্য দিয়ে।
চার বছরের মধ্যে তেলের দাম সর্বনিম্ন : বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পরপরই বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আজ আরও কমেছে। জ্বালানির তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ট্রাম্পের ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘটনায় চীনের অর্থনীতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ চীন। ফলে আজ বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৪ শতাংশের বেশি কমেছে। ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্সের দাম ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ৬০ দশমিক ৩৬ ডলারে নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে প্রতি ব্যারেল ৫৬ দশমিক ৯৬ ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ তেলের দাম এখন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার পুরোটাই মেটানো হয় আমদানি থেকে। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ভোক্তার ব্যয় বেড়ে যায়। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে বেশি চাহিদা ডিজেলের। কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও পরিবহন খাতে এ তেল ব্যবহৃত হয়। তাই এটির দাম বাড়লে পণ্যের দামও বেড়ে যায়, বাড়ে জীবনযাত্রার ব্যয়। এখন বিশ্ববাজারে অব্যাহতভাবে তেলের দাম কমতে থাকায় এখন বেশি পরিমাণে তেল কেনা গেলে সরকারের মুনাফা হবে; মানুষও উপকৃত হবে। অর্থাৎ দেশের বাজারে তেলের দাম কমানো সম্ভব হবে।
নীতি সুদহার কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া : রয়টার্স’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক বাস্তবায়িত হওয়ার পরপরই রেপো বা নীতি সুদহার কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। গতকাল বুধবার সকালে রেপো হার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমানোর কথা ঘোষণা দিয়েছেন আরবিআইয়ের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা। ফলে রেপো হার ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াল ৬ শতাংশ।
এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি রেপো হার কমিয়েছিল আরবিআই। যে সুদের হারে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ককে আরবিআই ঋণ দেয়, সেটাই রেপো হার; এই রেপো হার কমলে এর সঙ্গে যুক্ত সব ঋণের সুদের হার কমে। ফলে ব্যাঙ্ক ঋণ নেওয়া গ্রাহকেরা স্বস্তি পায়। ঋণের মাসিক কিস্তির অঙ্ক কমে যায়।
ডলারের দর পড়েছে : বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শিয়ার মুদ্রাবাজারে ইয়েন ও সুইস ফ্রাঁর মতো নিরাপদ মুদ্রাগুলোর দর ডলারের বিপরীতে বেড়েছে। ইয়েনের বিপরীতে ডলারের দরপতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ এবং সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউজিল্যান্ড নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট হ্রাস করায় কিউই মুদ্রার দর ডলারের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। যদিও বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার দেশটির বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মার্কিন ডলার অবশ্য ভারতীয় মুদ্রার বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে।
বুধবার ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দর উঠেছে ৮৬ দশমিক ৫৬ রুপি। সোমবার যা ছিল ৮৫ দশমিক ৮৪ টাকা। ২০ মার্চের পর এই প্রথম ভারতীয় মুদ্রার দর ৮৬ রুপির ওপরে উঠল। গত দুই অধিবেশনে ভারতীয় মুদ্রার দর ডলারের তুলনায় ১.৩২ শতাংশীয় পয়েন্ট পড়েছে। চীনের মুদ্রা দুর্বল হওয়ার কারণেও ভারতীয় মুদ্রার ওপর প্রভাব পড়েছে।
ওষুধ খাতে শুল্ক আরোপের চিন্তা, জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে : নিউইয়র্ক টাইমস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের আওতায় নেই ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর। তবে এসব খাতও বেশি দিন শুল্কের আওতার বাইরে থাকতে পারবে না।
ভারতের এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শিগগিরই ওষুধ খাতে বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করতে পারেন। সেই শুল্কবাণে রীতিমতো ক্ষত-বিক্ষত হতে পারে ভারতের ওষুধ শিল্প। ভারতের ওষুধ রপ্তানির মূল বাজার হচ্ছে আমেরিকা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যত রপ্তানি করেছে, তার ৩১ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে; অর্থের পরিমাণের দিক থেকে যা ৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৮৭০ কোটি ডলার। গত মঙ্গলবার ন্যাশনাল রিপাবলিকান কংগ্রেশনাল কমিটির সভায় ট্রাম্প বলেন, এমনভাবে ওষুধ শিল্পে শুল্ক আরোপ করা হবে যে কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে।
বেড়েছে বন্ডের সুদহার : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাসমূহের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদহার কিছুটা বেড়েছে। মূলত বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দীর্ঘমেয়াদি বন্ড বিক্রি করে দিচ্ছেন। সে কারণে বন্ডের সুদহার এভাবে বাড়ছে। সেই সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি বন্ডের সুদহারও বেড়েছে। শিগগিরই ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাবে-এই আশাবাদ থেকে বাজারে স্বল্পমেয়াদি বন্ডের সুদহার বেড়েছে।
১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার আরও ৫ ভিত্তি পয়েন্ট বেড়ে ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ফলে গত তিন দিনে এই বন্ডের সুদহার ৩৪ ভিত্তি পয়েন্ট বেড়েছে। দুই বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ছয় ভিত্তি পয়েন্ট বেড়ে ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
বেড়েছে স্বর্ণের দাম : বিশ্ববাজারে গতকাল বুধবার সকালে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। এই ঘোর অনিশ্চয়তার সময় স্বর্ণের দাম বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। যদিও ২ এপ্রিলের পর স্বর্ণের দামও পড়ে গিয়েছিল। গতকাল আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম আবার ৩ হাজার ডলার পেরিয়ে গেছে। আউন্সপ্রতি দাম বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৬৯ ডলার বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
ক্ষতির মুখে পড়বে অ্যাপলঅ্যাডিডাস : যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। এদের ওপর পাল্টা শুল্কের হার যথাক্রমে ১০৪ শতাংশ, ৪৬ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ। বৈশ্বিক ব্র্যান্ড অ্যাপল তাদের বেশিরভাগ হার্ডওয়্যার চীনে তৈরি করে। কিছু উৎপাদিত হয় ভারতে। বিখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএমও তাদের অধিকাংশ পোশাক চীন ও বাংলাদেশে তৈরি করে।
ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেং লুর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ব্র্যান্ড গ্যাপের পরিচালনায় থাকা ওল্ড নেভি, ব্যানানা রিপাবলিক ও অ্যাথলেটার প্রায় ২১ শতাংশ পোশাক ভিয়েতনাম থেকে রপ্তানি হয়। নাইকির প্রায় অর্ধেক ও অ্যাডিডাসের ৩৯ শতাংশ জুতা ভিয়েতনামে তৈরি হয়। এ ছাড়া বিখ্যাত ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ড স্যামসাংয়েরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পণ্য ভিয়েতনামে উৎপাদিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড নাইকি ও অ্যাপলের মতো অনেক ব্র্যান্ড নিজেদের পণ্য বিদেশে উৎপাদন করে। পাল্টা শুল্কের ফলে গত কয়েক দিনে তাদের শেয়ার মূল্য অনেকটা কমেছে। ফলে ব্র্যান্ডগুলো ভবিষ্যতে আরও ক্ষতির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের শুল্ক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে- এডিবি : চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গতকাল এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে বলা হয়, প্রবৃদ্ধির এই হিসাব ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের আগে করা হয়েছে।
এডিবির ঢাকা কার্যালয়ের অর্থনীতিবিদ চন্দন সাপকোটা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি আরোপিত হলে প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর গড় মূল্যস্ফীতি হতে পারে ১০ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা : বিবিসি জানিয়েছে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি জরিপে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬২ শতাংশ আশঙ্কা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শ্লথ হবে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মনে করছে, বিশ্ব এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সতর্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্যে জানা যায়, সে দেশে দেউলিয়া ঘোষণার হার বাড়ছে। গত বছরের মতো চলতি বছরেও এই আবেদন বৃদ্ধির হার অব্যাহত। সাধারণ মানুষ তেমনভাবে অবসর বা বিনোদনে অর্থ ব্যয় করছেন না। তার ওপরে আমদানি পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার আবারও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিশোধমূলক শুল্কে দেশটির রপ্তানিও মার খেতে পারে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ