ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫ ০৮:১৭ পিএম
ফাইল ছবি
করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু ও করোনায় একজন করে মারা গেছেন। আর সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪৯ জন ডেঙ্গুরোগী এবং শনাক্ত হয়েছেন ২৬ জন করোনা রোগী। পর্যান্ত শনাক্তের ব্যবস্থা থাকলে করোনা রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, এ বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৩০ জনের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারী। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩ জন, খুলনা বিভাগের ২ জন, আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মৃত্যু হয়েছে।
৩০ জনের মধ্যে জানুয়ারি মাসে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, ফেব্রুয়ারি আর মে মাসে ৩ জন করে, মার্চে কারও মৃত্যু হয়নি, এপ্রিলে ৭ জনের এবং চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত ৭ জন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৪৯ জনসহ চলতি বছর এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯৮৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ২৪৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকার হাসপাতালে ৩৫ জন, ঢাকা বিভাগে ৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটি এলাকা ও খুলনা বিভাগে ৮ জন করে, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন, রংপুরে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগের হাসপাতালে ১ জন ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫ হাজার ৯৮৮ জনের মধ্যে জানুয়ারি মাসে ভর্তি হয়েছেন ১১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন, মে মাসে ১৭৭৩ জন এবং চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৬৪৩ জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ২৯৯ জন।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় আরও ২৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় চারজন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ যাবত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪১০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ যাবত এক কোটি ৫৭ লাখ ২৭ হাজার ২২৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এই যাবত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত একজন পুরুষ। তার বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তিনি ঢাকা বিভাগের সরকারি হাসপাতালে হাসপাতালে মারা গেছেন। ৫ জুন দেশে প্রায় এক বছরের অধিক সময় পর করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছিল।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর থেকে করোনা আক্রান্ত হলেও দীর্ঘ সময়ে আর কেউ মারা যায়নি। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
করোনা প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা : অধ্যাপক সায়েদুর রহমান
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার। পজিটিভ রোগীদের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আগামী এক মাস ফলোআপ করা হবে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্টগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া যাবে। রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে এখনও আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। তবে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আগাম সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে যারা বয়স্ক মানুষ ও বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে ভুগছেন তাদের বেশি সাবধানতা অবলম্বনে পরামর্শ দেন তিনি।
রাজধানীসহ সারাদেশে বর্তমানে কত শতাংশ রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত খুবই কম সংখ্যক ব্যক্তি নমুনা পরীক্ষার জন্য আসছেন। এই সংখ্যা শতাধিকের বেশি হবে না। এত অল্পসংখ্যক ব্যক্তির নমুনা দিয়ে শতাংশের হিসেব করলে সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, স্বল্প সংখ্যক নমুনা হিসেবে আক্রান্ত রোগীর হার শতকরা ৮ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে থাকছে। শুধু একদিন ১৩ শতাংশের বেশি আক্রান্ত ছিল। তবে এই শতাংশের হিসাব দিয়ে সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে না বলে তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী সত্যিকার অর্থে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনিসহ আরও যে কয়েকজন মারা গেছেন তাদের সবারই বয়স ৬০ বছরের বেশি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে আগের মতোই বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে তিনি জানান।
ভোরের আকাশ/এসএইচ