ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৫ ১০:৪৮ পিএম
দেশের ১১ জেলায় বন্যার শঙ্কা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণ ও বন্যা অব্যাহত রয়েছে। ভারতের ওই অঞ্চলের পানি নেমে আসে বাংলাদেশে। এভাবে উজানের পানি এবং দেশজুড়ে গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। সিলেট বিভাগের চার জেলা, তিন পার্বত্য জেলা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লালমনিরহাটে পানি বাড়ছে। বন্যাপ্রবণ তিন নদীর মধ্যে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও মৌলভীবাজারের মনু নদ পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের নিচু এলাকা বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আরও বাড়তে পারে এসব নদ-নদীর পানি। বুধবার তিন জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, সিলেট জেলার সুরমা, কুশিয়ারা নদী ও মৌলভীবাজার জেলার মনু নদের পানি সমতল বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা নদী, মনু ও খোয়াই নদের পানি সমতল আগামী ৪৮ ঘণ্টা বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এর পাশাপাশি সারি, গোয়াইন, জাদুকাটা, ধলাই ও সোমেশ্বরীর পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এসময়ে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নদ-নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এতে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ইত্যাদি নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে, দ্বিতীয়য় দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী এক দিন হ্রাস পেতে পারে। এই সময়ে মুহুরী, ফেনী, হালদা সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র নদের ও যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীগুলোর পানি সমতল আগামী ৪ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে বিপদসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী একদিন নদ-নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
এতে বলা হয়, গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে ও পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ৫ দিন গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে অতি ভারী বর্ষণের কারণে সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুদিনের বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ি ঘাগড়া এলাকায় কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সড়ক সচল রাখতে কাজ করছে সড়ক বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস। তবে কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পানিবন্দি মানুষের জন্য ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন। উপজেলা সদরে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় বান্দরবানের লামার বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। লালমনিরহাটে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বেড়েছে। এতে নদীর উভয় তীরে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি-বন্যা : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৩৬। আক্রন্ত হয়েছেন কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ। সিকিমে সেনা ক্যাম্পে ভূমিধস হয়েছে। তাতে মারা গেছেন তিন জন। নিখোঁজ ৬ জন।
বার্তা সংস্থা পিটিআইকে উদ্ধৃত করে অনলাইন দ্য হিন্দু বলছে, সোমবার বন্যা পরিস্থিতি জটিল অবস্থায় ছিল। গত কয়েক দিনে সেখানে ভারী বর্ষণ হয়। এর ফলে দেখা দেয় মারাত্মক বন্যা ও ভূমিধস। এতে আসামে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১ জন। এরপরে অরুণাচল প্রদেশে নিহত হয়েছেন ১০ জন। মেঘালয়ে ৬, মিজোরামে ৫, সিকিমে তিন এবং ত্রিপুরায় একজন মারা গেছেন। আসামের ২২টি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। খবর এনডিটিভি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ