নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫ ০৫:২৯ এএম
ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে বাংলাদেশ সফরে আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। চলতি আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে তার ঢাকা আগমন নির্ধারিত রয়েছে। সফরকালে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সফরের মধ্য দিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় ইসলামাবাদ।
সরকারের এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নির্ধারিত সফরটি অনিবার্য কারণে স্থগিত হয়েছিল। এবার সেই সফরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পাকিস্তানের কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, ২২ বা ২৩ আগস্ট ইসহাক দার ঢাকায় পৌঁছাতে পারেন।
উল্লেখযোগ্য যে, গত ২৭ এপ্রিল তার ঢাকা সফরের কথা ছিল। কিন্তু ভারতের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে সীমান্তে উত্তেজনার কারণে সফরটি বাতিল করে পাকিস্তান।
ঢাকা সফরে ইসহাক দারের প্রধান বৈঠক হবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে ইসহাক দার ও তৌহিদ হোসেনের মধ্যে চতুর্থবারের মতো সাক্ষাৎ হয়। সেই সাক্ষাতেই বাংলাদেশের জন্য ভিসা সহজীকরণ এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন ইসহাক দার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরের পরপরই ঢাকায় আসার আগ্রহ দেখান।
সফরকে ঘিরে সম্ভাব্য চুক্তি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক জানান, “আগে যে বিষয়গুলো আলোচনায় ছিল না, এবার সেগুলোও আলোচনায় আসতে পারে। কিছু অগ্রগতিও হয়েছে। এখনই নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন কতটি চুক্তি হবে।”
গত দেড় যুগ ধরে স্থবির থাকা বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক এখন কিছুটা গতিশীল। এরই অংশ হিসেবে ১৫ বছর পর এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক। সেখানে পাকিস্তানের নেতৃত্ব দেন আমনা বালুচ।
সরকার পরিবর্তনের পর ঢাকা-ইসলামাবাদের সম্পর্কে দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে করাচি থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বাংলাদেশিদের জন্য পাকিস্তান ভিসা ফি প্রত্যাহার। সরাসরি বিমান চলাচলের উদ্যোগও রয়েছে আলোচনায়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অন্তর্বর্তী সরকারের পর থেকে ইসহাক দার এবং মো. তৌহিদ হোসেন চারবার দেখা করেছেন, টেলিফোনেও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া গত মাসে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি ঢাকায় সফর করেন।
তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে— ১৯৭১ সালের যুদ্ধ এবং গণহত্যার প্রসঙ্গ এড়িয়ে সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “একাত্তরের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রশ্নই আসে না। সম্পর্ক চাই, তবে ইতিহাস ভুলে নয়।”
বাংলাদেশের কূটনীতিক মহল মনে করছে, সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে পারস্পরিক আন্তরিকতা জরুরি। কিন্তু একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, আটকে থাকা সম্পদের হিস্যা, এবং যুদ্ধকালীন বৈদেশিক সহায়তার প্রাপ্যতা নিরসনের মতো বিষয়গুলোর সুরাহাও প্রয়োজন।
সফরকালে এসব অমীমাংসিত ইস্যু তুলবে কিনা জানতে চাইলে এক কূটনীতিক বলেন, “এসব ইস্যু আলোচনার অংশ। কোনটি আলোচনায় আসবে তা বৈঠকে নির্ধারিত হবে। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে বিরাজমান কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসব ইস্যুর সমাধানে একটি নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে, এবং তা কাজে লাগানোই হবে কৌশলী পদক্ষেপ।
ভোরের আকাশ//হ.র