× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন

আ.লীগ নিষিদ্ধে লাগবে সুনির্দিষ্ট মামলা

এম বদি-উজ-জামান

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫ ০৮:৪৭ এএম

আ.লীগ নিষিদ্ধে লাগবে সুনির্দিষ্ট মামলা

আ.লীগ নিষিদ্ধে লাগবে সুনির্দিষ্ট মামলা

এবার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পাশাপাশি দলটিকে বিচারের মুখোমুখি করার পথ প্রশস্ত করে দিলেন। এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও পথ খুলে দিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে গত শনিবার রাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সংশোধিত এই আইনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হলে দলটির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা বা অভিযোগ করতে হবে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ভোরের আকাশকে বলেন, ট্রাইব্যুনালে অনেকগুলো হত্যা মামলা হয়েছে। ওইসব মামলায় বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। সেখানে কোনো দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে কিনা- জানি না। মামলায় হত্যার অভিযোগের পাশাপাশি যদি কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়ে থাকে, তাহলে তাতেই দলের বিচার করার সুযোগ আছে। আর যদি ওইসব মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকে তবে আলাদা মামলা করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আরেক সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ভোরের আকাশকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে হলে ট্রাইব্যুনালের সামনে সেই দলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা মামলা থাকতে হবে। এটা পৃথক মামলার মাধ্যমেও হতে পারে কিংবা কোনো ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় দলের বিরুদ্ধে আলাদা ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। ট্রাইব্যুনালে দলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করতে হবে। এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করলেই কেবল একটি দলের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হতে পারে।

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে তা শুধুই হত্যা বা গুমের অভিযোগে। সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আলাদা অভিযোগ দাখিল হয়েছে বলে শুনিনি। তাই রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আলাদা মামলা করতে হবে। তখন ওই মামলায় ট্রাইব্যুনালের সামনে ফরমাল চার্জ দাখিল করতে হবে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু করবেন। এরপর অভিযোগের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ, সাক্ষ্য হাজির করতে হবে ট্রাইব্যুনালে। এসবের ভিত্তিতে বিচার কাজ সম্পন্ন হতে হবে।  

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, সংশোধনীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) মনে করে, এটি একটি যথোপযোগী উদ্যোগ। 

তিনি বলেন, যদিও বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনেও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বা সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়ার বিধান আছে। তারপরও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের আইন বা ট্রাইব্যুনালে সংগঠন বা ব্যক্তির বিচার হলে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এ ট্রাইব্যুনালে রাজনৈতিক দলের বিচার করার সুযোগ না থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার শনিবার রাতে আইনটি সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দিয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকাশিত এই গেজেটে বলা হয়, সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (দ্বিতীয় সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স, ২০২৫ প্রণয়ন ও জারি করেছেন। 

এতে বলা হয়, এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারা উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদত দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যে কোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, তবে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা থাকবে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনের নিষিদ্ধ ঘোষণার, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত অথবা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার। আইনে সংগঠন শব্দটির সংজ্ঞায়নও করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় সংগঠন বলতে যে কোনো রাজনৈতিক দল এবং দলের অধীনস্থ, সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন অথবা গোষ্ঠীকে বোঝাবে।

এ বিষয়ে শনিবার (১০ মে) রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।

নতুন আইন অনুযায়ী, সংগঠন সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি আন্তর্জাতিক অপরাধে সহায়তা, নির্দেশনা, প্ররোচনা, ষড়যন্ত্র বা অংশগ্রহণ করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করতে এরই মধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। আগে থেকে এটি ট্রাইব্যুনালে বিচার চললেও এর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ২০১২ সালের ২২ মার্চ সরকার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে দুটি করে। ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ২০১৩ সাল থেকে একে একে রায় আসা শুরু হয়। 

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে দুই নম্বর ট্রাইব্যুনাল অকার্যকর হয়ে পড়ে। এরপর একটি ট্রাইব্যুনালেই বিচার শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই নম্বর ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে জুলাই গণআন্দোলন শুরু হলে এই আন্দোলন দমাতে সরকার ব্যাপক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়।

আন্দোলনকারী ছাড়াও নিরীহ নিরস্ত্র শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, শিশু, নারী রক্ষা পায়নি সরকারের হাত থেকে। সরকারি হিসেবে ৮শ’র বেশিজনকে হত্যা করা হয়েছে জুলাই-আগস্টে। আর শিক্ষার্থীদের দাবি ১৪শ’র বেশি জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি। এ ঘটনায় একে একে কয়েকশ অভিযোগ জমা পড়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। 

এরই মধ্যে কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত শেষে মামলায় রূপ নিয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের একাধিক মন্ত্রী, এমপি, বড় সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যরা আসামি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত আট মাসের একটিরও বিচার না হওয়ায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আন্দোলনে নামে। আন্দোলনের মুখে সরকার ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করলো।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 বরগুনায় বজ্রপাতে নারীর মৃত্যু

বরগুনায় বজ্রপাতে নারীর মৃত্যু

 মিয়ানমারে জান্তার বিমান হামলায় ১৭ শিক্ষার্থী নিহত

মিয়ানমারে জান্তার বিমান হামলায় ১৭ শিক্ষার্থী নিহত

 বাণিজ্য অস্থিরতার মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে বাংলাদেশ

বাণিজ্য অস্থিরতার মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে বাংলাদেশ

সংশ্লিষ্ট

তদন্ত প্রতিবেদনে হাসিনার বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ

তদন্ত প্রতিবেদনে হাসিনার বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ

শেখ হাসিনা-কামাল-মামুনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা

শেখ হাসিনা-কামাল-মামুনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা

আ.লীগ নিষিদ্ধে লাগবে সুনির্দিষ্ট মামলা

আ.লীগ নিষিদ্ধে লাগবে সুনির্দিষ্ট মামলা

রাজনৈতিক দলের বিচারে ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ

রাজনৈতিক দলের বিচারে ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ