আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫ ০১:১০ এএম
গাজায় পানির তীব্র সংকট, সমুদ্রের পানি পানে বাধ্য মানুষ
ইসরাইলি আগ্রাসনে ধ্বংস হয়েছে গাজার শত শত পানীয় জলাধার ও অবকাঠামো। খাদ্যের পাশাপাশি এখন পানির জন্যও মরিয়া হয়ে উঠেছে গাজার মানুষ। বাধ্য হয়ে অনেকে এখন দূষিত ও নোনতা সমুদ্রের পানি পান করছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানায়, গত ১৯ মাসে গাজায় পানির সরবরাহব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।
৭১৯টি কূপ ধ্বংস, বন্ধ সুপেয় পানির উৎস
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি অভিযানে গাজায় ৭১৯টি পানির কূপ ধ্বংস করা হয়েছে। এপ্রিলের শুরুতে গাজা সিটির গুরুত্বপূর্ণ ঘাবায়েন পানিশোধন প্ল্যান্টেও বোমা হামলা চালানো হয়। এরপর ৫ এপ্রিল ইসরাইলি পানি সরবরাহকারী কোম্পানি মেকোরোট গাজায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, যা উপত্যকার প্রায় ৭০ শতাংশ সুপেয় পানির উৎস ছিল।
এর আগে, মার্চ মাসে ইসরাইল গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে করে পানি পরিশোধনের ট্যাংকগুলোও অকেজো হয়ে পড়ে।
৯০ শতাংশ পানি পরিশোধনকেন্দ্র অচল
হামাস সরকারের উপমন্ত্রী জুহদ আল-আজিজ জানান, জ্বালানি ঘাটতি ও ধারাবাহিক হামলায় গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ সরকারি ও বেসরকারি পানি পরিশোধনকেন্দ্র (মোট ২৯৬টি) বন্ধ হয়ে গেছে।
মাত্র ৩০টি কূপ সচল, ঘাটতি ভয়াবহ
গাজা সিটি মিউনিসিপ্যালিটির মুখপাত্র আসেম আল-নাবীহ জানান, ইসরাইল কেবল গাজা সিটিতেই ধ্বংস করেছে ৬৪টির বেশি পানির কূপ এবং প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মিটার দীর্ঘ পানি সরবরাহ লাইন। বর্তমানে টিকে থাকা মাত্র ৩০টি কূপ পুরো জনসংখ্যার পানি চাহিদার সামান্য একটি অংশই পূরণ করতে পারছে।
জনপ্রতি পানি সরবরাহ ৩-৫ লিটারে নেমে এসেছে
আল-নাবীহ আরও জানান, বর্তমানে গাজায় প্রতিদিন একজন মানুষ গড়ে ৩ থেকে ৫ লিটার পানি পাচ্ছেন, যেখানে ন্যূনতম স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫০ লিটার। এর ফলে পানির দামও ভয়াবহভাবে বেড়েছে। আগে প্রতি গ্যালন পানি যেখানে ১.৩০–২.২০ শেকেলে পাওয়া যেত, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫–৮ শেকেলে।
মানবিক বিপর্যয় বাড়ছে
বিশ্লেষকরা বলছেন, খাবার ও চিকিৎসার পাশাপাশি এখন সুপেয় পানির সংকট গাজাকে মানবিক বিপর্যয়ের নতুন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ না থাকায় ডায়রিয়া, পানিবাহিত রোগ ও অপুষ্টিজনিত জটিলতাও বাড়ছে।
ভোরের আকাশ//হ.র