ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫ ১০:৪৫ পিএম
যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ ভারত-পাকিস্তানের
দুই দেশের সীমান্তে কয়েক দিনের টানা সংঘর্ষের পর গত শনিবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। তবে এরপরও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিস্ফোরণের শব্দ ও আকাশে আলোর ঝলক দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকেরা।
সদ্য ঘোষিত যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একে অপরের বিরুদ্ধে শর্ত লঙ্ঘন করার অভিযোগ তুলেছে ভারত ও পাকিস্তান। দুই দেশের সীমান্তে কয়েক দিনের টানা সংঘর্ষের পর শনিবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। তবে এরপরও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিস্ফোরণের শব্দ ও আকাশে আলোর ঝলক দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকেরা। খবর রয়টার্স।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘গত কয়েক ঘণ্টায় আমরা যে সমঝোতায় পৌঁছেছিলাম, তা একাধিকবার লঙ্ঘন করা হয়েছে। এটি আজকের দিনের বোঝাপড়ার লঙ্ঘন।
তিনি আরো জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনী যথোপযুক্ত জবাব দিচ্ছে এবং পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন থামানোর আহ্বান জানান।
এর জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘ভারত কিছু এলাকায় লঙ্ঘন করলেও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের বাহিনী দায়িত্বশীলতা ও সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। এর আগে চার দিন ধরে চলা সংঘর্ষ ছিল সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সামরিক সংঘাত। কাশ্মীরের পেহেলগামে এক প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও আর্টিলারি হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তান অবশ্য পেহেলগাম হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই শনিবার সকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, এই সমঝোতা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্ভব হয়েছে। পরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এই কূটনীতিক প্রচেষ্টায় তিন ডজন দেশের অংশগ্রহণ ছিল।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, ‘দুই দেশ গোলাগুলি ও সামরিক অভিযানে বিরতি দিতে একটি বোঝাপড়ায় পৌঁছেছে। ভারত বরাবরই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও আপসহীন অবস্থানে থেকেছে এবং তা অব্যাহত।
৮৭ ঘণ্টার যুদ্ধে ভারতের ক্ষতি শত বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই : ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর বদলা হিসাবে পাকিস্তান ‘অপারেশন বানিয়ান মারসুস’ চালায়। মাত্র ৮৭ ঘণ্টা স্থায়ী এ যুদ্ধ ছিল বহুমাত্রিক। তবে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এ যুদ্ধে সব চেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। এ সংঘাতে ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারতের শেয়ার বাজারÑ নিফটি ও সেনসেক্স মিলিয়ে উবে যায় প্রায় ৮২ বিলিয়ন ডলার। উত্তর ভারতের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বিমান চলাচলে। আইপিএল বন্ধ হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হয় ৫০ মিলিয়ন ডলার। সামরিক ব্যয়ে যোগ হয় আরও ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং যুদ্ধবিমান হারিয়ে ক্ষতি হয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। লজিস্টিক ও বাণিজ্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে পাকিস্তানের মোট ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৪ বিলিয়ন ডলার। করাচি শেয়ারবাজারে সূচক পড়ে গিয়ে ক্ষতি হয় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) বন্ধ থাকায় ক্ষতি হয় আরও ১০ মিলিয়ন ডলার। আকাশসীমা বন্ধ থাকায় ক্ষতি হয়েছে ২০ মিলিয়ন ডলার, আর সামরিক খাতে প্রতিদিন ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পাশাপাশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যয় হয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। এই যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে, আধুনিক যুগে যুদ্ধ মানে শুধু বোমা, ট্যাংক আর যুদ্ধবিমান নয়। এখন যুদ্ধ মানেই শেয়ারবাজারে ধস, বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানো, বৈদেশিক বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক দুর্দশা। ঘণ্টায় এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতিÑ এটি প্রমাণ করে, সীমিত সময়েও সংঘর্ষ দুই দেশের অর্থনীতিকে কতটা ঝাঁকুনি দিতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধের আসল শক্তি এখন আর শুধু সামরিক নয়; বরং অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও মনস্তত্ত্বের ওপর নির্ভরশীল। এই সংঘর্ষের মূল বার্তা— প্রতিরোধই প্রকৃত কৌশল।
সূত্র : ইন্টারন্যাশনাল দ্য নিউজ।
ভোরের আকাশ/আমর