স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৫৩ এএম
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি: কীভাবে কাজ করে, ওজন বাড়ে কি?
গর্ভনিরোধে বিশ্বজুড়ে নারীরা নানা ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হলো জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল। তবে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই—বিশেষ করে, বড়ি খেলে কি শরীর মোটা হয়ে যায়?
কীভাবে কাজ করে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি
চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জন্মনিরোধক বড়ি মূলত নারীদের জন্য তৈরি একটি ওষুধ, যাতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টিন হরমোন থাকে। এগুলো ডিম্বাশয় থেকে ডিম নিঃসরণ বন্ধ রাখে এবং গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে। নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে এ পদ্ধতি প্রায় ৯৯ শতাংশ কার্যকর।
বর্তমানে বাজারে তিন ধরনের বড়ি পাওয়া যায়—কম্বাইন্ড পিল, প্রোজেস্টেরন-অনলি পিল (মিনিপিল) ও ইমার্জেন্সি পিল। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কম্বাইন্ড পিল, যাতে দুটি হরমোনের মিশ্রণ থাকে। সাধারণত একটি পাতায় ২৮টি বড়ি থাকে—২১টি সক্রিয় ও ৭টি নিষ্ক্রিয় (আয়রনযুক্ত)। মাসিকের প্রথম দিন থেকেই প্রতিদিন নিয়ম করে বড়ি খেতে হয়।
বড়ি খেলে কি মোটা হয়?
বছরের পর বছর ধরে অনেকেই মনে করেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে নারীরা মোটা হয়ে যান। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মূলত ভ্রান্ত ধারণা।
হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের অধ্যাপক কিশোয়ার লায়লা বলেন, “আগে হরমোনের মাত্রা বেশি থাকায় কিছুটা ওজন বেড়ে যেত। তবে বর্তমানে যে লাইট পিল পাওয়া যায়, তা খেলে মোটা হওয়ার আশঙ্কা নেই।”
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম কাজল জানান, পুরনো প্রজন্মের বড়িগুলোতে ক্ষুধা বাড়ানো ও শরীরে পানি জমার প্রবণতা ছিল, তাই তখন ওজন কিছুটা বাড়ত। তবে আধুনিক পিলে এই ঝুঁকি নেই।
সন্তান জন্মদানের সক্ষমতায় প্রভাব ফেলে কি?
আরেকটি প্রচলিত ধারণা হলো, বড়ি খেলে নারীদের প্রজননক্ষমতা নষ্ট হয়। চিকিৎসকরা এটিকে ভুল বলে জানিয়েছেন। পিল বন্ধ করার পর মাসিক নিয়মিত হতে কিছুটা দেরি হতে পারে, তবে সন্তান ধারণের সক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসে।
অধ্যাপক রেজাউল করিমের মতে, “তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের পিল দীর্ঘদিন খাওয়া হলেও ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না।”
যাদের সতর্ক হওয়া উচিত
চিকিৎসকরা জানান, কিছু ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনে সতর্ক থাকতে হয়। যেমন—৪০ বছরের বেশি বয়সী নারী, অজ্ঞাত কারণে যোনিপথে রক্তক্ষরণ, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকা বা রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা থাকলে বড়ি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেস্ট ক্যানসার, লিভারের রোগ বা আগে স্ট্রোক হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে এ পিল ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
অন্যদিকে, বড় কোনো অস্ত্রোপচারের আগে বড়ি চালু রাখা বা বন্ধ করার বিষয়ে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভোরের আকাশ//হ.র