স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৬:০১ এএম
ঘুমের মধ্যে দম আটকে যাচ্ছে? হতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়া, কী করবেন জানুন
আপনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ মাঝরাতে শ্বাস বন্ধ হয়ে ঘুম ভেঙে গেল—বুক ভার হয়ে আসছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, যেন কেউ গলার ওপর চেপে বসেছে। কিছুক্ষণ পর সব স্বাভাবিক হলেও সেই আতঙ্ক পিছু ছাড়ে না।
যদি এমন ঘটনা বারবার ঘটে, তবে একে অবহেলা করা উচিত নয়। এটি হতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়া নামক একটি ঘুমজনিত শ্বাসপ্রশ্বাসের জটিলতা। বর্তমান সময়ে এই সমস্যায় ভুগছেন বহু মানুষ। চিকিৎসকদের মতে, এটি সাধারণ হলেও দীর্ঘমেয়াদে হতে পারে প্রাণঘাতী।
স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো এমন এক অবস্থা, যেখানে ঘুমের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাস কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এই বিরতি কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বিষয়টি ঘনঘন ঘটলে ঘুমের গুণগত মান নষ্ট হয়ে শরীর ও মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
স্লিপ অ্যাপনিয়া প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে—
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (OSA): গলার পেশি শিথিল হয়ে শ্বাসনালি আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া (CSA): মস্তিষ্ক শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ ঠিকভাবে দেয় না।
শুধু বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা নয়, স্লিপ অ্যাপনিয়া হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, এমনকি ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘদিন উপেক্ষা করলে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ হ্রাস পায়। দেখা দিতে পারে মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ।
কীভাবে বুঝবেন আপনি এই সমস্যায় ভুগছেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে:
ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া
অতিরিক্ত ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও দিনের বেলায় ঝিমুনি
মনোযোগে ঘাটতি ও আচরণগত পরিবর্তন
সকালে গলা শুকিয়ে যাওয়া বা গলা ব্যথা
জোরে ও অনিয়মিত নাক ডাকা
করণীয় কী?
🔹 ঘুমের ভঙ্গি ঠিক করুন: চিত হয়ে না শুয়ে পাশ ফিরে ঘুমান। এতে শ্বাসনালির ওপর চাপ কমে।
🔹 ওজন নিয়ন্ত্রণে আনুন: অতিরিক্ত ওজন গলায় চর্বি বাড়িয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা তৈরি করে।
🔹 ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: এগুলো শ্বাসনালির পেশি শিথিল করে দম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
🔹 ঘুমের রুটিন তৈরি করুন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং পর্যাপ্ত সময় ঘুমান।
🔹 চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: প্রয়োজনে ‘স্লিপ স্টাডি’ বা ‘পলিসোমনোগ্রাফি’ করিয়ে রোগের মাত্রা নির্ধারণ করুন। গুরুতর হলে সিপিএপি (CPAP) মেশিন ব্যবহার উপকারী হতে পারে, যা ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখে।
দম বন্ধ হয়ে ঘুম ভাঙা কেবল শারীরিক নয়, মানসিক চাপেরও বড় উৎস। এটি থেকে প্যানিক অ্যাটাক কিংবা উদ্বেগের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই প্রয়োজনে কাউন্সেলিং গ্রহণে দ্বিধা না করাই ভালো।
ঘুম শুধু বিশ্রাম নয়, এটি শরীর ও মনের পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া। তাই ঘুমের মধ্যে দম আটকে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখলে তা হালকাভাবে নেবেন না। সময়মতো সচেতন না হলে ভবিষ্যতে বড় বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ভোরের আকাশ//হ.র