অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫ ০৯:২৯ এএম
তিন বেলা একসঙ্গে খাওয়ার অনন্য সংস্কৃতি যে গ্রামে!
ভিয়েতনামের তাই হাই—একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রাম, যেখানে প্রায় ২২ বছর ধরে তিন বেলা একসঙ্গে খাওয়ার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে গ্রামবাসী। দিন শুরু হয় ভোর ৫টায় কাঠ কাটার ঠকঠক শব্দে। ধীরে ধীরে খুলে যায় ৩০টি ঘরের দরজা, প্রস্তুতি নিতে থাকে সকালের নাশতার।
প্রায় ২০০ জনের এই গ্রামে সকালের নাশতা থেকে রাতের খাবার পর্যন্ত সবই একসঙ্গে খাওয়া হয়। খাওয়ার সময় নির্ধারিত—সকাল, দুপুর ও রাত। সকাল এবং সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট ঘণ্টা বাজিয়ে সবাইকে খাবারের জন্য ডাকা হয়। দুপুরে ১১টায় কাঠ কাটার শব্দই মধ্যাহ্নভোজের সংকেত দেয়।
শুধু খাওয়াই নয়, কাজেও রয়েছে একতা। কেউ কাজ করেন চা-বাগানে, কেউ কাঠের তৈরি সামগ্রী, কেউ মধু সংগ্রহ বা গবাদি পশু পালন করেন। শিক্ষার্থীরা গ্রামের নার্সারি ও স্কুলে যায়, নারীরা ব্যস্ত থাকেন রান্না ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে। সন্ধ্যার খাবারের পর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ঘুমাতে যান সবাই।
তাই হাইয়ের এই সামাজিক জীবন ব্যবস্থায় সকল আয় জমা হয় গ্রামপ্রধান ও একটি কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে থাকা তহবিলে। সেখান থেকেই খরচ চলে খাদ্য, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, ঘরের মেরামত এমনকি বিয়ের খরচ পর্যন্ত। ব্যক্তিগত সম্পদ বা আয় নিয়ে এখানে নেই কোনো প্রতিযোগিতা। কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া কেউ কিনতে পারেন না মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপও।
এই ব্যতিক্রমধর্মী গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা নগুয়েন থি থান হাই, যিনি ২০০৩ সালে ৩০টি ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঘর কিনে থাই গুয়েন শহরের বাইরে ২০ হেক্টর জায়গায় গড়ে তোলেন এই ‘কমিউনাল গ্রাম’। গ্রামের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তাই জাতিসত্তার সংস্কৃতি রক্ষা।
গ্রামটির স্বকীয়তা ও ঐক্যবদ্ধ জীবনযাত্রা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। ২০১৪ সালে সরকার এটিকে আনুষ্ঠানিক পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করে। পরে ২০২২ সালে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা ‘তাই হাই’কে বিশ্বের অন্যতম সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এখানকার শিশুরা শিখছে তাই লোকসংগীত, খেলছে দেশীয় খেলনা দিয়ে, কথা বলছে নিজস্ব তাই ভাষায়। এখানকার তরুণরা বিশ্বাস করে—‘এক হাঁড়ি, এক পয়সা’—এই দর্শনেই শান্তি।
তাই হাই যেন একটি জীবন্ত উদাহরণ, যেখানে ঐতিহ্য, একতা ও ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে সুখী ও সুষম সমাজ।
ভোরের আকাশ//র.ন