সংগৃহীত ছবি
প্রতিটি দিন সময়ের নদীতে হারিয়ে যায়, কিন্তু কিছু দিন রয়ে যায় স্মৃতির পাতায়, ইতিহাসের পাতায়। এসব দিনেই ঘটে যায় কিছু যুগান্তকারী ঘটনা— মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রা, প্রথম আবিষ্কার, বিপ্লব কিংবা বেদনাবিধুর মুহূর্ত।
আজ রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। ইতিহাসের পাতায় এই দিনটির রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নানা দেশে, নানা প্রান্তে এই দিনে ঘটেছে নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা আজও আমাদের ভাবায়, শিক্ষা দেয় এবং ইতিহাসকে বুঝতে সহায়তা করে।
চলুন, ফিরে দেখি ২৮ সেপ্টেম্বরের ক্যালেন্ডারে খোদাই হয়ে থাকা কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দিকে—
১৮৬৫ - এলিজাবেথ গ্যারেট এন্ডারসন প্রথম শল্যাচিকিৎসক হিসেবে ব্রিটেনে নিবন্ধিত হন।
১৯০৬ - হংকং এ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে দশ হাজার লোকের মৃত্যু।
১৯২৩ - বুলগেরিয়ায় ফ্যাসিস্ট বিরোধী এক অভ্যুত্থান ঘটে।
১৯২৮ - স্যার অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং প্রথমবারের মতো পেনিসিলিন আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন।
১৯৭১ - ভারতের ডিমাপুরে গঠিত হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।
১৯৭৪ - বাংলাদেশের জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘ফুলকুঁড়ি আসর’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
২০০২ - বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক শিক্ষার জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি চালু করে।
ভোরের আকাশ/তা.কা
সংশ্লিষ্ট
সভ্যতার ইতিহাস মূলত মানুষের উত্থান-পতনেরই ইতিহাস। প্রাচীন যুগে পৃথিবীর নানা প্রান্তে গড়ে উঠেছিল জ্ঞান, শিল্প ও স্থাপত্যে সমৃদ্ধ অসংখ্য নগর। কিন্তু সময়ের প্রবাহে অনেক শহর হারিয়ে গেছে—কিছু ভেঙে পড়েছে, কিছু মাটির নিচে চাপা পড়েছে। আজও তাদের ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দ সাক্ষীর মতো।ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা শত চেষ্টা করেও অনেক রহস্যের পূর্ণ উত্তর খুঁজে পাননি। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই হারানো শহরগুলোর কথা, যেগুলো এখনো ঘেরা রহস্যে—আটলান্টিস — কল্পনা না বাস্তব?প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো প্রথম লেখেন আটলান্টিস নিয়ে—একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ নগররাষ্ট্রের গল্প, যা হঠাৎ কোনো ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায়।শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ এই হারানো শহরের সন্ধানে ঘুরছে—কেউ বলছেন ভূমধ্যসাগরে, কেউবা আটলান্টিক মহাসাগর বা ক্যারিবীয় অঞ্চলে এর অবস্থান।স্যাটেলাইট ছবি ও আধুনিক গবেষণার পরও এর অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি। প্রশ্ন থেকে গেছে—আটলান্টিস কি সত্যিই ছিল, নাকি প্লেটোর কল্পনা মাত্র?মাচু পিচু — ইনকা সাম্রাজ্যের রহস্যময় দুর্গপেরুর আন্দিজ পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত মাচু পিচু, ইনকা সভ্যতার অন্যতম বিস্ময়। ১৫শ শতকে নির্মিত এই শহর ইউরোপীয়দের চোখে আসে ২০শ শতকের শুরুতে।পাথর কেটে পাহাড়ের মাথায় এমন নিখুঁত স্থাপত্য কীর্তি রচনা সত্যিই অবাক করে। কেউ বলেন এটি ইনকা রাজাদের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ, কেউ বলেন ধর্মীয় কেন্দ্র, আবার অনেকে মনে করেন এটি ছিল জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণাগার। এত উচ্চতায় পানি ও কৃষি ব্যবস্থা কীভাবে চলত—সে প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা।মোহনজো-দারো — সভ্যতার প্রাচীনতম নগরপাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত মোহনজো-দারো ছিল সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র। প্রায় ৪৫০০ বছর আগেই এখানে গড়ে উঠেছিল পরিকল্পিত শহর, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও স্নানাগার—যা আধুনিক নগর ব্যবস্থাকেও হার মানায়।কিন্তু রহস্যজনকভাবে শহরটি হঠাৎ করেই ধ্বংস হয়ে যায়। কেউ বলেন বন্যা বা ভূমিকম্পে, কেউ বলেন কোনো আক্রমণে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা শহরজুড়ে অসংখ্য কঙ্কাল পেয়েছেন—যাদের মৃত্যু হয়েছিল হঠাৎ ও অপ্রত্যাশিতভাবে। তবুও, ধ্বংসের প্রকৃত কারণ আজও অজানা।পম্পেই — ছাইয়ের নিচে বন্দি এক শহরখ্রিস্টাব্দ ৭৯ সালে ইতালির পম্পেই শহর মুহূর্তেই ইতিহাসে হারিয়ে যায়। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতে পুরো শহর ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে।আজও প্রত্নতত্ত্ববিদরা খননের সময় প্রায় অক্ষত বাড়িঘর, দেয়ালচিত্র ও মানুষের দেহাবশেষ খুঁজে পান—যা তখনকার রোমান জীবনের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়—মানুষ কেন বিপদের পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও আগ্নেয়গিরির এত কাছে বসবাস করছিল?অ্যাঙ্কর ওয়াট — জঙ্গলের বুকে হারানো সাম্রাজ্যকম্বোডিয়ার ঘন জঙ্গলে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাঙ্কর ওয়াট শুধু একটি মন্দির নয়, এটি ছিল বিশাল খেমার সাম্রাজ্যের কেন্দ্র।হাজার হাজার মন্দির, প্রাসাদ ও বসতির এই শহর ১৫শ শতকের দিকে রহস্যজনকভাবে বিলুপ্ত হয়।ভোরের আকাশ//হ.র
বাংলাদেশে গবাদিপশুর ভাইরাসজনিত রোগগুলোর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স অন্যতম। তবে বর্তমানে দেশের উত্তর অঞ্চলের মানুষও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অ্যানথ্রাক্স হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটিত একটি রোগ; যা প্রথমত গবাদিপশুকে আক্রান্ত করে। পরে আক্রান্ত পশুর মাধ্যমে মানুষও আক্রান্ত হয়। তবে মানুষ থেকে মানুষে এ রোগ ছড়ায় না। তাই অ্যানথ্রাক্সকে জুনোটিক ডিজিজ বলা হয়।এটি বাংলায় ‘তড়কা রোগ’ নামে পরিচিত। এটি তীব্র ও গুরুতর সংক্রামক রোগ। তাই জেনে নিন অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং কীভাবে মানবদেহে ছড়ায়।অ্যানথ্রাক্স কীভাবে মানবদেহে ছড়ায়গবাদিপশু থেকে তিন ভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এ রোগ সংক্রমণ ঘটায়:ত্বকের মাধ্যমে: পশুজাত পণ্য (পশম, হাড়) থেকে ত্বকের কাটা বা আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে: ব্যাকটেরিয়ার রেণু শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে।খাবারের মাধ্যমে: অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়ার কারণে সংক্রমণ হতে পারে।অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মূলত ছড়ায় আক্রান্ত প্রাণীর মাধ্যমে। এ জীবাণু মাটিতেও থাকতে পারে। কেউ যদি অসুস্থ প্রাণীর মাংস খায় কিংবা শ্বাসের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু তার শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া ত্বকে কোনো ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়েও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে।উপসর্গ১. কারো দেহে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু কীভাবে প্রবেশ করছে, এর ওপর উপসর্গ নির্ভর করে।২. মাংস খাওয়ার মাধ্যমে কেউ আক্রান্ত হলে দেখা দেয় বমিভাব, বমি, রক্তবমি, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, জ্বর, গলা ব্যথা বা ঘাড় ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা। এ ছাড়া রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা হতে পারে।৩. শ্বাসের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হলে দেখা দিতে পারে গলা ব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি, পেশি ব্যথার মতো সাদামাটা উপসর্গ। এরপর বুকে অস্বস্তি ও শ্বাসকষ্ট, বমিভাবও হতে পারে। শুধু তাই নয়, কফের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। ঢোঁক গিলতে গেলে গলা ব্যথা হতে পারে। জ্বরের তীব্রতাও বাড়তে পারে। একইসঙ্গে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।৪. ত্বকের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ালে ত্বকে পোকার কামড়ের মতো ফোলা ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থানের মাঝখানটা কালো হয়ে যায় এবং আশপাশেও ফুলতে থাকে। একই সঙ্গে চুলকানিও হয়। শরীরে জ্বরও থাকে।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স রোগের মূল কারণ হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়া দীর্ঘদিন মাটিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং অনুকূল পরিবেশ পেলে সক্রিয় হয়ে গবাদিপশুর মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। সংক্রমণ সাধারণত সংক্রমিত চারণভূমি, দূষিত পানি, দূষিত খাবার বা মৃত পশুর সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ঘটে। এটি মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে। বিশেষত পশুর মৃতদেহ বা সংক্রমিত মাংসের সংস্পর্শে এলে।’এ রোগ থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে এই অধ্যাপক বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স থেকে বাঁচার প্রধান উপায় হলো সংক্রমিত প্রাণী ও পশুজাত পণ্যের সংস্পর্শ এড়ানো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং অসুস্থ পশুর মাংস কাঁচা বা কম রান্না করা অবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকা।’তিনি আরও বলেন, ‘গবাদিপশুকে প্রতি বছর একবার অ্যানথ্রাক্স টিকা দিলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকলে আশপাশের সব গরুকে টিকা দেওয়া উচিত। এ ছাড়া চারণভূমি, খাবার ও পানির উৎস পরিষ্কার রাখা জরুরি। সন্দেহজনক মৃত পশু বা নোংরা জায়গা থেকে পশুকে দূরে রাখা জরুরি। আক্রান্ত পশুর জন্য বিশেষ প্রতিষেধক সিরাম আছে, যা প্রাণী চিকিৎসক প্রয়োগ করতে পারেন। তবে রেজিস্টার্ড প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পশুকে চিকিৎসা করাতে হবে।’মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও জানান ড. মো. সহিদুজ্জামান।অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের উপায়১. খুব ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করা হয়নি এমন কোনো মাংস খাওয়া যাবে না।২. ত্বকে কোনো কাটাছেঁড়া থাকলে কাঁচা মাংস খালি হাতে নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকবেন।৩. গবাদিপশু পালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে পশুকে নিয়মমাফিক অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।৪. যিনি অসুস্থ পশুর দেখাশোনা করেন, তার সুরক্ষাসামগ্রী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং যত্নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।৫. অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস খাওয়া, কাটাকাটি করা বা নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকুন।৬. অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে সচেতন হওয়া জরুরি। এটি ভয়ংকর সংক্রমণ হলেও সঠিক প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।ভোরের আকাশ/মো.আ.
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রাম এখন দেশের মানুষের কাছে ‘শাপলার গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। গ্রামের বিস্তীর্ণ জলাভূমি, স্থানীয়রা যাকে শাপলার বিল নামে ডাকে, পুরো মৌসুমে লাল, সাদা ও বেগুনি শাপলার ফুলে ছেয়ে থাকে। প্রায় ১০ হাজার একরের এই বিল ভোরের প্রথম আলোয় যেন লাল কার্পেটের মতো ছড়িয়ে যায়, যা দেখতে প্রতিটি দর্শক মুগ্ধ হয়।স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, শাপলা দেখতে সবচেয়ে ভালো সময় আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। ভোরবেলা ফুলগুলো পুরোপুরি ফুটে থাকে, কিন্তু দিনের বেলায় ধীরে ধীরে ফুলগুলো বুজে যায় বা স্থানীয়রা বাজারের জন্য তুলতে শুরু করে। তাই শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভোরে বিলে পৌঁছানোই উত্তম।পর্যটকরা সাধারণত রাতে গ্রামে এসে ভোরে বিল দেখতে যান। ঢাকা থেকে সাতলা যেতে হলে বরিশাল পর্যন্ত বাস বা লঞ্চে পৌঁছাতে হয়। ঢাকা থেকে বরিশালের বাস যাত্রীদের জন্য শাকুরা, হানিফ ও ঈগল পরিবহন রয়েছে। এছাড়া সদরঘাট থেকে বরিশালগামী লঞ্চে ভ্রমণ করা যায়, যেগুলো পরদিন ভোরে বরিশালে পৌঁছে। বরিশাল শহর থেকে সাতলা পৌঁছাতে হলে শিকারপুর বা নুতনহাট পর্যন্ত বাসে যেতে হয়, এরপর অটো বা মহেন্দ্র গাড়িতে গ্রামে প্রবেশ করা যায়।সাতলায় বড় কোনো হোটেল না থাকলেও স্থানীয় বাড়ি বা স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করা যায়। বরিশাল শহরে থাকলে গ্র্যান্ড পার্ক, হোটেল এথেনাসহ অন্যান্য মানসম্মত হোটেল পাওয়া সম্ভব।স্থানীয়রা অতিথিপরায়ণ। শাপলার মৌসুমে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কেউ শুধু ফুল দেখার জন্য, কেউ ছবি তোলার জন্য বিলে আসে। এছাড়া এই গ্রামের শাপলা ফুল দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়।প্রকৃতি প্রেমী ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আগ্রহীদের জন্য সাতলা গ্রাম হতে পারে এক অনন্য গন্তব্য।সূত্র: কুহুডাকভোরের আকাশ // হ.র
"অপার সৌন্দর্যের রানী শ্রীমঙ্গল" উক্তিটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে উঁচু-নিচু পাহাড়, ঘন সবুজ অরণ্য, চা বাগান এবং নয়নাভিরাম নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী রয়েছে, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। চায়ের রাজধানী খ্যাত পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল। প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া দৃষ্টিনন্দন শহর শ্রীমঙ্গল। প্রায় দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন চা শিল্পের ঐতিহ্যের গৌরব বহনকারী দীর্ঘকালের পথ পরিক্রমায় প্রাকৃতিক আশ্রয়ে গড়ে উঠা পাহাড় ও সমতল ভূমির ওপর ছোট এই শহরের অবস্থান।অপরুপ নৈসর্গিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের মধ্যে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা মেঠো পথ, পাহাড়ি ঝর্ণা, পাহাড়, হাইল-হাওরের মত জলাভূমি এবং অতিথি পাখির বিচরণের অভয়ারণ্য বাইক্কাবিল, লেক এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি ও বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ এই উপজেলা।সংগৃহীত ছবিউঁচু-নিচু পাহাড় ঘেরা বন-বনানী আর নীল আকাশের সাথে যেন সবুজ পাহাড়ের মিতালি। নিজ চোখে না দেখলে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এই বিচিত্র রূপ আর সৌন্দর্য একনজর দেখার জন্য প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছুটে আসেন প্রকৃতির রানী শ্রীমঙ্গলকে দেখতে।প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন শ্রীমঙ্গলে আপনি দেখতে পাবেন দৃষ্টিনন্দন চা-কন্যা ভাস্কর্য, মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১ বা স্মৃতিস্তম্ভ বধ্যভূমি ৭১, চা জাদুঘর, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, অথিথি পাখিদের অভারণ্য বাইক্কাবিল, সবুজে ঘেরা চা-বাগান, তার্কিস স্থাপত্য শিল্পের জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, লেক, ডিনস্টন সিমেট্রি, লালটিলা শিব মন্দির, হাইল হাওর, লেবু-আনারস আর রাবার বাগান।নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠি খাসিয়া পুঞ্জি-মণিপুরি-গারো সম্প্রদায়ের জীবনাচার, হরিনছড়া গল্ফ মাঠ, বিটিআরআই, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন ও ত্রিপুরা মহারাজার কাচারি বাড়ি সাড়ে পাঁচ শ’ বছরের পুরোনো নির্মাই শিববাড়ী মন্দিরসহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে এখানে। আর দেশের ৯০ শতাংশ চা বাগান ও চায়ের উৎপাদন হয় এ অঞ্চলে।শ্রীমঙ্গলে এসে ভানুগাছ সড়ক ধরে কিছুদূর এগুলেই ফিনলের চা কোম্পানীর ভুরভুরিয়া চা-বাগানের সামনে নির্মিত বধ্যভূমি ৭১, যা মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতা যুদ্ধের এখানকার অনেক চা শ্রমিক ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আত্মত্যাগের ইতিহাস।সেখান থেকেই দু’পাশে সবুজ চা বাগানের মাঝ দিয়ে রাস্তা। সামনেই চোখে পড়বে পথের দু’পাশে উঁচু-নীচুঁ পাহাড়, লেবু ও আনারসের বাগান। আঁকাবাঁকা পথ ধরে আরেকটু সামনে এগিয়ে দেখা মিলবে জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়ার। প্রবেশ মুখ থেকেই শোনা যাবে নাম না জানা নানা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।সংগৃহীত ছবিস্থানীয়ভাবে এটাকে ফরেষ্ট মিউজিক বলা হয়। লাউয়াছড়ার প্রাচীনসব গাছ-গাছালি, গুল্ম লতা উদ্ভিদ এর দেখা মেলে। নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী বানর আর হনুমানের অবাধ বিচরণ রয়েছে এ বনে। এসব বন্য প্রাণীদের এ গাছ থেকে অন্য গাছে লাফালাফি, অদ্ভুদ ডাকাডাকি মুহুর্তেই নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। ভাগ্য সুপশ্রন্ন হলে ভোরের নির্জনতায় রাস্তাতেই দেখা মিলতে পারে হনুমান, বানর, বন মোরগ, সাপ, উড়ন্ত কাঠবিড়ালী, সজারু, হরিণ, মেছো বাঘ, উল্লুকসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর।শীতের মৌসুমে মাছের অভায়রণ্য বাইক্কা বিলে ভীর করে হাজারো প্রজাতির পরিযায়ি ও অতিথি পাখি। বাইক্কাবিল পাখিদেরও অভয়ারণ্য। পাখিদের কাছ থেকে দেখার জন্য এখানে রয়েছে সুউচ্চ পরিদর্শন টাওয়ার। পাখি প্রেমীরা দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে নানা প্রজাতির পাখিদের জীবনাচার দেখে মুগ্ধ হয়ে উঠেন। বাইক্কা বিল শুধু পাখি নয় হাজারো জলজ উদ্ভিদের ভান্ডার।শ্রীমঙ্গলে এলে ঘুড়ে আসতে পারেন ভাড়াউড়া চা-বাগানের লেক থেকে। চারিদিকে সারি সাড়ি উঁচু পাহাড়। সবুজ চা বাগান দিয়ে এসব পাহাড় সৃজন করা। এর মাঝখানে ভাড়াউড়া লেক আর উপরে সুনীল আকাশ। এ যেন আকাশের সাথে পাহাড়ের মিতালি।ভাড়াউড়া লেক এর পাশেই রয়েছে জাগছড়া গরমটিলা মাজার। এই টিলা থেকে থেকে দেখতে পারেন প্রকৃতির অপরুপ দৃশ্য।শ্রীমঙ্গলে রয়েছে প্রায় ৯৩টিরও বেশী নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বাস। খাসিয়া, মনিপুরী, সাঁওতাল, টিপরা ও গারো সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র জীবনাচার এবং বৈচিত্র্যময় জীবনধারা ও সংস্কৃতি দেখলে খানিক সময়ের জন্য হলেও প্রকৃতির কোলে মিশে যেতে মন চাইবে।প্রতি বছর চা বাগানগুলোতে ‘ফাগুয়া উৎসব’, টিপরাদের ‘বৈসু উৎসব’ ও গারোদের ‘ওয়ানগালা উৎসব’ মনিপুরীদের ’রাস পূর্ণিমা’ উৎযাপিত হয় খুব জাঁকজমকভাবে। তাদের এই আনন্দ উৎসবে মিশে যেতে পারেন আপনিও।স্বর্গের দেবতা যেন এখানে এসে নিজ হাতে ছুঁয়ে গেছেন প্রকৃতিকে। যার চোখ ধাঁধাঁনো সৌন্দর্য যে কাউকে খুব সহজে প্রকৃতির প্রেমে পড়তে বাধ্য করবে।ভোরের আকাশ/তা.কা