ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৪০ পিএম
সংগৃহীত ছবি
হিমালয়ের দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার আগ্রহের কোনো কমতি নেই। কারণ কাঞ্চনজঙ্ঘার একই অঙ্গে অনেক রূপ। মেঘের কোলে রোদ-কুয়াশার সঙ্গে খেলতে খেলতে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম এই পর্বতশৃঙ্গ প্রথমে কালচে, এরপর ক্রমান্বয়ে টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা রং ধারণ করে। ভোরের প্রথম কিরণ যখন কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া স্পর্শ করে তখন শ্বেতশুভ্র এই পর্বতটি হয়ে ওঠে উত্তপ্ত লাভার মতো লাল।
প্রতিবছর শীত মৌসুমে রূপ-লাবণ্যে বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকরা ছুটেন ভারতের সিকিমে নয়তো নেপালের তাপ্লেজুংয়ে। সীমান্ত পার না হতে চাইলে রয়েছে বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। যদিও ভারত কিংবা নেপালে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের গণ্ডি না পেরিয়ে অর্থাৎ তেঁতুলিয়াপ্রান্ত থেকেই পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া দেখা যায় অনিন্দ্য সুন্দরে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা।
সামান্য দূরত্বের মধ্যে থাকা এত সুন্দর পর্বতশৃঙ্গ দেখতে উন্মুখ হয়ে থাকেন পর্যটকেরা। যেন মনের প্রশান্তি মিলে তখন যখন কি না চোখে চোখ রাখে কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভোরে ঠিক তেমনি দৃশ্যের অবতারণা করেন হিমালয়কন্যার দেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শ্বেতশুভ্র এ পর্বতটি।
এদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মৌহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে তেঁতুলিয়ায় পর্যটকের সমাগম ঘটছে প্রতিনিয়ত। পর্যটকরা এ অঞ্চলের পর্যটন স্পট ডাকবাংলোর পিকনিক কর্ণার ও মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দেখছেন রূপশ্বৈর্য পর্বতমালা কাঞ্চনজঙ্ঘা। তারা দেখছেন, ছবি তুলছেন ও ভিডিও করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে, গত কয়েক দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় তেমন দেখা মিলছে না কাঞ্চনজঙ্ঘার। এজন্য অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরছে।
স্থানীয়রা জানায়, আকাশ পরিষ্কার হলে দেখা মিলবে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য। শরৎ, হেমন্ত ও শীতকালেই দেখা মেলে শ্বেতশুভ্র এই মহানায়কের। ভোরের আলো মেখে জাগতে শুরু করে সে। তারপর ক্ষণে ক্ষণে রং পালটাতে থাকে। ভোরের সূর্যের আভা ছড়িয়ে পড়লে কাঞ্চনজঙ্খা হয়ে ওঠে লাল টকটকে। দিন পেরোনোর সঙ্গে রং বদলাতে থাকে তার। কমলা, তারপর হলুদ আবার সাদা। অপার সৌন্দর্যের বিস্তৃতি ঘটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মনে হয় হাসছে পাহাড়। তার শরীর ঘেঁষে চলে গেছে বিস্তৃত হিমালয়। সবুজ ও কালো রং মেখে হিমালয়ও হয়ে ওঠে অপরূপ। তবে বর্তমান আবহাওয়ায় কখন পর্বতশৃঙ্গটির দেখা মিলবে বলা ভার। এই দেখা মিলছে আবার কয়েক দিন দেখা মেলে না।
সাজেক ভ্যালি থেকে দেখা যাচ্ছে পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর তৃতীয় এবং হিমালয় পর্বতমালার দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা প্রায় ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট বা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার। এটি ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে চারটি নদীর উৎপত্তি ঘটেছে। নদীগুলি বাংলাদেশেও প্রবাহিত হয়। এখান থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব কাছে থাকায় খুব কাছ থেকে দেখা মেলে অপরূপ সৌন্দর্যের মায়াবী কাঞ্চনজঙ্খা।
প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়। ছবির মতো ভেসে ওঠা শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য ছাড়াও দেখা মেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল।
রাজশাহী থেকে পরিবার নিয়ে আসা নাসিম জানান, সমতলের চা-বাগান ঘুরে দেখেছি। আর কয়েক দিন ধরেই ফেসবুকে চোখ রাখছিলাম ও খোঁজখবর রাখছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় কিনা। কিন্তু গত কয়েক দিনেও পর্বতশৃঙ্গটি দেখতে না পেয়ে খারাপ লাগছে।
এদিকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ ও পর্যটন ঘিরে গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারিভাবে আবাসন ব্যবস্থা। ফলে কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নাট্যদল ভূমিজ প্রতি বছর আয়োজন করছে কাঞ্চনজঙ্জ্জা পালাটিয়া উৎসব।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক কে এম আজিমিরুজ্জামান জানান, পর্যটকদের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের কন্টাক্ট নম্বরগুলি বিভিন্ন জায়গায় বিল বোর্ডেও প্রদর্শন করেছি। যাতে যে কোনো প্রয়োজনে পর্যটকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। জরুরি ফোন এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।
নির্বাহী কর্মকর্তারা জানান, 'পর্যটকদের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছি।
ভোরের আকাশ/তা.কা