× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইউরোপের রপ্তানি বাজার

তীব্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৫ ১১:২২ এএম

তীব্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

তীব্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয় বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গত এক দশক ধরে আধিপত্য বাড়াচ্ছে- চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া সব কয়েকটি দেশ। এতে এই বাজারে সামনে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে পারেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, নতুন মার্কিন শুল্ক কাঠামো প্রবর্তনের পর এই বাণিজ্য প্রতিযোগিতা তীব্রতর হতে পারে। কারণ চীনের ওপর উচ্চ হারের শুল্ক আরোপের ফলে দেশটি এখন তাদের তৈরি পোশাকের নতুন গন্তব্য হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে বেছে নিতে পারে।

পাশাপাশি ৯০ দিনের শুল্ক অবকাশ শেষ হওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসন যদি বাকি দেশগুলোর ওপর উচ্চ হারের শুল্ক বহাল করে তাহলে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো বাংলাদেশের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিরাও ইউরোপের বাজারে তাদের আধিপত্য বাড়ানোর চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে বড় প্রতিযোগিতা ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ তৈরি পোশাক বা গার্মেন্ট খাত। এজন্য এখুনি সরকারি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও প্রস্তুতির পরামর্শ বাণিজ্য বিশ্লেষকদের।

ইউরোপের বাজারের ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১২ সালে চীনের মোট পোশাক রপ্তানির ৫৬ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে গিয়েছিল। ১১ বছরের ব্যবধানে এখানে ১২ শতাংশ বেড়েছে চীনের রপ্তানি। ২০২৩ সালে দেশটির ৬৮ শতাংশ পোশাক রপ্তানি হয়েছে ইউরো ব্লকে। একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি ১২ শতাংশ কমেছে। মার্কিন মুল্লুকে দেশটির রপ্তানি ৪৪ শতাংশ থেকে কমে ৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। একইভাবে, ২০২৩ সালে ভিয়েতনামের মোট পোশাক রপ্তানির ৩২ শতাংশ ইইউতে (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) গেছে, যা ২০১২ সালে ছিল ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানির হার ৭৪ শতাংশ থেকে কমে ৬৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

কম্বোডিয়ার রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে দেশটির মোট রপ্তানিকৃত পোশাকের ৬৩ শতাংশ ইইউতে গেছে, যা ২০১২ সালে ছিল ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১২ সালে তাদের পোশাক রপ্তানির ৬০ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও ২০২৩ সালে তা কমে ৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একইভাবে ২০১২ সালে পাকিস্তানের মোট পোশাক রপ্তানির ৫২ শতাংশ ইইউতে গিয়েছিল, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে।

একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানির হার ৪৮ শতাংশ থেকে কমে ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার পোশাক রপ্তানির ৪৬ শতাংশ ইইউতে এবং ৫৪ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও ২০২৩ সালে এই হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- ৫৭ শতাংশ ও ৪৩ শতাংশে। এই দেশগুলোর রপ্তানি ইউরোপে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও ভারতের ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।

২০১২ সালে তাদের মোট পোশাক রপ্তানির ৪৮ শতাংশ ইইউতে এবং ৫২ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও ২০২৩ সালে এই হার চার শতাংশ পরিবর্তন হয়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- ৪২ শতাংশ ও ৫৮ শতাংশে। এদিকে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশেরও অংশীদারত্ব বেড়েছে। তবে একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির হার ২৮ শতাংশ থেকে কমে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে।  প্রতিযোগী দেশগুলোর ইউরোপের বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। 

অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক বলেন, মার্কিন বাজারের বাইরেও বড় চিন্তার বিষয় রয়েছে। মার্কিন শুল্কের কারণে সরবরাহকারীরা তাদের পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে সরিয়ে নিতে বাধ্য হতে পারে। এতে বাংলাদেশ বড় প্রতিযোগিতায় পড়বে- চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো তৈরি পোশাকের উৎপাদনকারীদের সঙ্গে। এতে প্রতিযোগী দেশগুলো ইউরোপের বাজারে পণ্যের দাম কমিয়ে দিলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরাও দাম কমিয়ে দিতে বাধ্য হবেন। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ওপর পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিদেশি প্রতিযোগীদের পাশাপাশি স্থানীয় রপ্তানিকারকদের জন্যও ইউরোপের বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপ করে বসলে তখন আমাদের যারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে তারাও ইউরোপের বাজারে নতুন করে প্রবেশ করতে পারে। এতে প্রতিযোগী দেশগুলোর উৎপাদকদের পাশাপাশি দেশীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও অস্বাস্থ্যকর মূল্য প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। এতে সামগ্রিক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দেন এই উদ্যোক্তা।

এদিকে রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন সময়ে দাবি করে আসছেন, তারা স্থানীয়ভাবে তৈরি পোশাকের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না এবং কিছু ক্ষেত্রে তারা ব্যবসা চালু রাখা ও শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে অর্ডার নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে মূল্য প্রতিযোগিতা শুরু হলে এই খাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪.৮৬ শতাংশ বেড়ে ১৯.৭৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই বাজারের ২০ শতাংশই বাংলাদেশের দখলে। অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের যে পরিমাণ তৈরি পোশাক প্রয়োজন হয় তার ২০ ভাগ সরবরাহ করে বাংলাদেশ।

রপ্তানি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে 
এদিকে ইউরোপের বাজারে নতুন ঝুঁকির মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে তৃতীয় হলেও প্রবৃদ্ধির হিসাবে শীর্ষে উঠেছে বাংলাদেশ। গত বছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেখানে এক হাজার ৭৫৬ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২২৩ মিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিও বেড়েছে ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ওটেক্সার তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি করেছে ২০ হাজার মিলিয়ন ডলারের। গত বছর একই সময়ে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৬৯ মিলিয়ন ডলার। সংস্থাটির হিসাবে, বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। 

এই সময়ে চীনের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার বেড়েছে ২০ শতাংশ, ভারতের ২৪ শতাংশ, মেক্সিকোর ২ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও কোরিয়ার ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুধু হন্ডুরাসের পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ১১ শতাংশ কমেছে।

এই তিন মাসে চীনকে পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। দেশটি ৩ হাজার ৮৭৫ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন ৩ হাজার ৫৯৬ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যার মোট পরিমাণ ২০ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় যার প্রবৃদ্ধি ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ভোরের আকাশকে বলেন, ওটেক্সার প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির গতিশীল পরিস্থিতি এবং শিল্পের ক্রমবিকাশমান প্রবণতাগুলোকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে। আশা করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের অবস্থান আরও সুসংহত হবে।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা: আসিফ মাহমুদ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা: আসিফ মাহমুদ

সংশ্লিষ্ট

দেশের বাজারে ফের কমল সোনার দাম

দেশের বাজারে ফের কমল সোনার দাম

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি

তীব্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

তীব্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

ঝুঁকিতে দেশের অর্থনীতি

ঝুঁকিতে দেশের অর্থনীতি