সহায়তার দায়ে এক্সিম ব্যাংককে জরিমানা
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫ ১০:৩৮ এএম
রপ্তানির আড়ালে ১৫শ কোটি টাকা পাচার
রপ্তানির আড়ালে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচার করেছে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান ফ্যাশন কমফোর্ট লিমিটেড। কোটি টাকা অর্থ পাচারে সহযোগিতার দায়ে ইসলামী ধারার এক্সিম ব্যাংককে জরিমানা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জরিমানার অর্থ পরিশোধে ব্যাংকটি এগিয়ে না আসায় বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত রিজার্ভ একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ এক বিশেষ পরিদর্শনে এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখার মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়টি সম্প্রতি উদ্ঘাটন করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হলেও ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানা যায়নি।
পরিদর্শন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখার মাধ্যমে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ফ্যাশন কমফোর্ট লিমিটেড ৪৬টি বিক্রয় চুক্তির আওতায় ১৬১টি রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়েছে। এই সময়ে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৮ লাখ ২৯ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
এসব রপ্তানিতে প্রতি ইউনিট তৈরি পোশাকের দাম দেখানো হয়েছে ২৮ থেকে ৭৮ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে, এসব পোশাকের দাম ছিল প্রদর্শিত মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ১২ গুণ বেশি। এই রপ্তানিগুলোর মাধ্যমে ৩ কোটি ৪০ ডলার দেশে আসার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ২৮ লাখ ২৯ হাজার ডলার। পণ্যের দাম কম দেখিয়ে ফ্যাশন কমফোর্ট লিমিটেড পাচার করেছে প্রায় ৩ কোটি ১২ লাখ ডলার।
বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩শ ৮১ কোটি টাকা। শুধু রপ্তানি মূল্য কম দেখিয়েই নয়, রপ্তানি পণ্যের ওজন বেশি দেখিয়েও (ওভার শিপমেন্ট) তৈরি পোশাকের সঙ্গে অন্য কোনো পণ্য রপ্তানি করেছে ফ্যাশন কমফোর্ট। বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের প্রতিবেদন বলছে, রপ্তানির সময় প্রতিটি গার্মেন্টস পণ্যের ওজন ৯৮০ গ্রাম দেখিয়েছে পাচারকারী প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু সরেজমিন এসব পণ্যের ওজন ৩ থেকে ৪ গুণ কম পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল। অর্থাৎ, একটি পণ্যের বিপরীতে আরও তিন থেকে চারটি পণ্য বেশি রপ্তানি করেছে ফ্যাশন কমফোর্ট। এই হিসাবে রপ্তানির আড়ালে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে ফ্যাশন কমফোর্ট লিমিটেড।
রপ্তানির আড়ালে বিপুল অংকের অর্থ পাচারের বিষয়টি এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অবহিত করেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ কারণে এক্সিম ব্যাংককে চলতি বছরের ১৮ মার্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ।
জরিমানার অর্থ জমা দেওয়ার জন্য ওইদিন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেওয়া হলেও এক মাসেও উত্তর দেয়নি এক্সিম ব্যাংক। এর প্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত রিজার্ভ একাউন্ট থেকে জরিমানার অর্থ কেটে নিয়েছে।
অর্থ পাচারে সহায়তাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতার হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাদেরকে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হলেও তারা সাড়া দেননি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ