তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫ ০৯:২৯ এএম
দশ মাসের রপ্তানি আয় ৪০ বিলিয়ন ডলার
চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে রপ্তানি খাত থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৪০ বিলিয়ন ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৪ লাখ ৮৮ হাজার কোটি। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা এই পরিমাণ অর্থ আয় করেছে। আগের অর্থ বছরের তুলনায় এই আয়ের পরিমাণ ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে রপ্তানি আয় এসেছিল ৩৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে দশ মাস মিলিয়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো থাকলেও একক মাস হিসেবে এপ্রিলে রপ্তানি আয় ধাক্কা খেয়েছে। গত মাসে রপ্তানি আয় এক শতাংশেরও কম হারে বেড়েছে। এই সময়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে এই আয় ছিল ২ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের অধিকাংশই এসেছে পোশাক খাত থেকে। এই খাতে প্রবৃদ্ধিও ভালো হয়েছে। ইপিবি’র হিসাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ১০ শতাংশ বেড়ে ৩২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৯ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ওভেন পণ্যের রপ্তানি আয় ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর নিটওয়্যার পণ্যের রপ্তানি আয় হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।
এদিকে এপ্রিল মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৪ সালের এপ্রিলে ছিল ২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানির মন্থর প্রবৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে রপ্তানিকারকেরা দীর্ঘ ঈদুল ফিতরের ছুটিকে দায়ী করেছেন। অল্প কর্মদিবসের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়েছে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ এপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ভোরের আকাশ’কে বলেন, দীর্ঘ ঈদের ছুটির কারণে পণ্য প্রস্তুতের জন্য আমাদের হাতে কর্মদিবস কম ছিল, ফলে চালানও কম হয়েছে। এ কারণেই গত মাসগুলোর তুলনায় এপ্রিলে রপ্তানি আয়ে ধীরগতি দেখা গেছে। তবে চলতি মাসে তা আবার স্বাভাবিক প্রবাহে ফিরে আসবে বলে আমরা আশা করি।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে রপ্তানিকারকদের সংগঠনগুলো জানিয়েছে, তারা চরম গ্যাস সংকটে ভুগেছেন, যা উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোর মতো প্রবৃদ্ধি ফেরাতে গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৮৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের ৮২৪ মিলিয়নের তুলনায় ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি। হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৭৩ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ বেড়ে ৯৩২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, আর প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি আয় ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৬ মিলিয়ন ডলার। চামড়ার তৈরি জুতার রপ্তানিতে ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা আগের বছরের ৪৩২ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৪৫ মিলিয়ন ডলার। তবে চামড়াজাত অন্য পণ্যের রপ্তানি ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৮০ মিলিয়ন ডলারে। পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমে ৬৮৫ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
হোম টেক্সটাইল খাতে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যেখানে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৭৪০ মিলিয়ন ডলার। নন-লেদার ফুটওয়্যার খাত, যা দেশের একটি উদীয়মান খাত হিসেবে বিবেচিত, রপ্তানি আয়ে ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ৪৪৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা আগের বছর ছিল ৩৪০ মিলিয়ন ডলার। ফার্মাসিউটিক্যালস খাত থেকে রপ্তানি আয় ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭ মিলিয়ন ডলারে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ