স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
প্রকাশ : ০২ মে ২০২৫ ০৩:৩৩ পিএম
ইউএনওর অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে মিয়ানমারে পণ্য পাচার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, কৃষিপণ্য ও নির্মাণসামগ্রী পাচারের মহোৎসব চলছে। এবার কক্সবাজারের টেকনাফ ইউএনও অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে মিয়ানমারে পাচার করা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী বোঝাই একটি ট্রলার। একটি সিন্ডিকেট বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে নেওয়ার পথে পাচার করে এসব নির্মাণসামগ্রী। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হওয়ায় সেখানে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ। জরুরি প্রয়োজনে কোনো নির্মাণসামগ্রী নৌরুটে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে টেকনাফ ইউএনও’র অনুমতিপত্র সংগ্রহের আইনগত বিধান রয়েছে।
সম্প্রতি টেকনাফের ইউএনও সেন্টমার্টিনে যান। সেখানে পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রটি ভেঙে গেলে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ টিআর প্রকল্পের অধীনে মেরামতের জন্য বরাদ্দ প্রদান করেন। ওই বরাদ্দের অনুকূলে ইউএনও কেন্দ্রের ইনচার্জ আসেকুর রহমানকে কিছু নির্মাণসামগ্রী সেন্টমার্টিনে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেন।
আর সেই অনুমতিপত্রটি জালিয়াতি করে বুধবার (৩০ এপ্রিল) টেকনাফের কেরুণতলী ঘাটে মো. আলম নামের সেন্টমার্টিনের এক বাসিন্দার মালিকানাধীন একটি ট্রলারে বোঝাই করা হয় নির্মাণ সামগ্রীসমূহ। যেখানে অনুমতিপত্রে উল্লেখ থাকা নির্মাণসামগ্রীর অতিরিক্ত বোঝাই করা হয়। ওই অনুমতিপত্রে দেখা মেলে জালিয়াতির প্রমাণ। ইউএনও কার্যালয় থেকে পাওয়া স্মারকটি সব নম্বর ঠিক রেখে দুটি অঙ্ক পরিবর্তন করা হয়েছে যেখানে ৮১৭-এর স্থলে লেখা হয়েছে ৮১৬। আর সিমেন্ট ২০ ব্যাগের স্থলে লেখা হয়েছে ৪০০ ব্যাগ।
সেন্টমার্টিন ঘাটের সার্ভিস বোটের লাইনম্যান করিম উল্লাহ বলেন, সেন্টমার্টিনের মো. আলমের মালিকানাধীন সার্ভিস ট্রলারটি যাত্রী নিয়ে দ্বীপঘাট থেকে টেকনাফ যায় ২৮ এপ্রিল বিকেলে। স্বাভাবিকভাবে ট্রলারটি ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে দ্বীপে পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু ১ মে (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রলারটি ঘাটে পৌঁছায়নি।
খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা গেছে, ট্রলারটি মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। টেকনাফ ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন অনুমতিপত্র জালিয়াতি এবং মিয়ানমারে এসব পণ্য পাচারের তথ্য স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যে কার্যালয় থেকে দেওয়া অনুমতিপত্র এবং ট্রলারে মালামাল বোঝাইকালে প্রদর্শিত অনুমতিপত্র মিলিয়ে দেখেছি, যেখানে জালিয়াতির বিষয়টি পরিষ্কার। একই সঙ্গে সামগ্রী বোঝাই ট্রলারটি দ্বীপে না নিয়ে মিয়ানমারে পাচারের বিষয়টিও অবহিত হয়েছি।
এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আর এই পাচারের নেপথ্যে অনুসন্ধানে মিলেছে সাতজনের সিন্ডিকেটের একটি চক্রের নাম। যে চক্রটি দীর্ঘদিন নানা জালিয়াতির মাধ্যমে মিয়ানমারে খাদ্যপণ্য, কৃষিপণ্য, সার ও নির্মাণসামগ্রী পাচার করে আসছে। যেখানে উঠে এসেছে ট্রলার মালিক মো. আলম, সেন্টমার্টিন ঘাটের স্পিডবোট লাইনম্যান জাহাঙ্গীর আলম, নারী ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার, জেলা প্রশাসনের কর্মচারী আসেকুর রহমান, সেন্টমার্টিন ইউপি সদস্য আকতার কামাল, ট্রলার মাঝি নুরুল ইসলাম, টেকনাফের কেফায়েত উল্লাহর নাম। এই সিন্ডিকেটটি গত বছরের ১২ নভেম্বর একই প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির মাধ্যমে আরও দুটি ট্রলারে নির্মাণসামগ্রী পাচার করেছিল।
ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার বলেন, এসবের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রটির সভাপতি তিনি। এই কেন্দ্রের বিপরীতে নির্মাণসামগ্রী দ্বীপে আনার অনুমতি পান কর্মচারী আসেকুর রহমান। বিষয়টি জানার পর তিনিও খোঁজখবর নিয়েছেন।
এই ধরনের জালিয়াতি এবং পাচারে জেলা প্রশাসনের কর্মচারী জড়িত থাকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর বলে মন্তব্য করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
প্রকাশ : ১২ ঘন্টা আগে
আপডেট : ১২ ঘন্টা আগে
ইউএনওর অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে মিয়ানমারে পণ্য পাচার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, কৃষিপণ্য ও নির্মাণসামগ্রী পাচারের মহোৎসব চলছে। এবার কক্সবাজারের টেকনাফ ইউএনও অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে মিয়ানমারে পাচার করা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী বোঝাই একটি ট্রলার। একটি সিন্ডিকেট বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে নেওয়ার পথে পাচার করে এসব নির্মাণসামগ্রী। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হওয়ায় সেখানে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ। জরুরি প্রয়োজনে কোনো নির্মাণসামগ্রী নৌরুটে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে টেকনাফ ইউএনও’র অনুমতিপত্র সংগ্রহের আইনগত বিধান রয়েছে।
সম্প্রতি টেকনাফের ইউএনও সেন্টমার্টিনে যান। সেখানে পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রটি ভেঙে গেলে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ টিআর প্রকল্পের অধীনে মেরামতের জন্য বরাদ্দ প্রদান করেন। ওই বরাদ্দের অনুকূলে ইউএনও কেন্দ্রের ইনচার্জ আসেকুর রহমানকে কিছু নির্মাণসামগ্রী সেন্টমার্টিনে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেন।
আর সেই অনুমতিপত্রটি জালিয়াতি করে বুধবার (৩০ এপ্রিল) টেকনাফের কেরুণতলী ঘাটে মো. আলম নামের সেন্টমার্টিনের এক বাসিন্দার মালিকানাধীন একটি ট্রলারে বোঝাই করা হয় নির্মাণ সামগ্রীসমূহ। যেখানে অনুমতিপত্রে উল্লেখ থাকা নির্মাণসামগ্রীর অতিরিক্ত বোঝাই করা হয়। ওই অনুমতিপত্রে দেখা মেলে জালিয়াতির প্রমাণ। ইউএনও কার্যালয় থেকে পাওয়া স্মারকটি সব নম্বর ঠিক রেখে দুটি অঙ্ক পরিবর্তন করা হয়েছে যেখানে ৮১৭-এর স্থলে লেখা হয়েছে ৮১৬। আর সিমেন্ট ২০ ব্যাগের স্থলে লেখা হয়েছে ৪০০ ব্যাগ।
সেন্টমার্টিন ঘাটের সার্ভিস বোটের লাইনম্যান করিম উল্লাহ বলেন, সেন্টমার্টিনের মো. আলমের মালিকানাধীন সার্ভিস ট্রলারটি যাত্রী নিয়ে দ্বীপঘাট থেকে টেকনাফ যায় ২৮ এপ্রিল বিকেলে। স্বাভাবিকভাবে ট্রলারটি ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে দ্বীপে পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু ১ মে (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রলারটি ঘাটে পৌঁছায়নি।
খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা গেছে, ট্রলারটি মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। টেকনাফ ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন অনুমতিপত্র জালিয়াতি এবং মিয়ানমারে এসব পণ্য পাচারের তথ্য স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যে কার্যালয় থেকে দেওয়া অনুমতিপত্র এবং ট্রলারে মালামাল বোঝাইকালে প্রদর্শিত অনুমতিপত্র মিলিয়ে দেখেছি, যেখানে জালিয়াতির বিষয়টি পরিষ্কার। একই সঙ্গে সামগ্রী বোঝাই ট্রলারটি দ্বীপে না নিয়ে মিয়ানমারে পাচারের বিষয়টিও অবহিত হয়েছি।
এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আর এই পাচারের নেপথ্যে অনুসন্ধানে মিলেছে সাতজনের সিন্ডিকেটের একটি চক্রের নাম। যে চক্রটি দীর্ঘদিন নানা জালিয়াতির মাধ্যমে মিয়ানমারে খাদ্যপণ্য, কৃষিপণ্য, সার ও নির্মাণসামগ্রী পাচার করে আসছে। যেখানে উঠে এসেছে ট্রলার মালিক মো. আলম, সেন্টমার্টিন ঘাটের স্পিডবোট লাইনম্যান জাহাঙ্গীর আলম, নারী ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার, জেলা প্রশাসনের কর্মচারী আসেকুর রহমান, সেন্টমার্টিন ইউপি সদস্য আকতার কামাল, ট্রলার মাঝি নুরুল ইসলাম, টেকনাফের কেফায়েত উল্লাহর নাম। এই সিন্ডিকেটটি গত বছরের ১২ নভেম্বর একই প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির মাধ্যমে আরও দুটি ট্রলারে নির্মাণসামগ্রী পাচার করেছিল।
ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার বলেন, এসবের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রটির সভাপতি তিনি। এই কেন্দ্রের বিপরীতে নির্মাণসামগ্রী দ্বীপে আনার অনুমতি পান কর্মচারী আসেকুর রহমান। বিষয়টি জানার পর তিনিও খোঁজখবর নিয়েছেন।
এই ধরনের জালিয়াতি এবং পাচারে জেলা প্রশাসনের কর্মচারী জড়িত থাকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর বলে মন্তব্য করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ