হোসনেয়ারা পারভীন খুকু, খুলনা
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ০৩:৪৬ পিএম
পিটিআই মোড়ের ফুটওভার ব্রিজসহ সৌন্দর্য্য বর্ধনের নকশা
সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা, অতিরিক্ত ইজিবাইক আর দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে শান্ত-নিরিবিলি খুলনা শহর তার সুনাম হারিয়েছে অনেক আগেই। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর ছিল শ্রীহীন দশা। শহরের সৌন্দর্যর অবশিষ্টটুকু রক্ষায় গত বছর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ২২টি মোড় পুনর্নির্মাণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। কিন্তু সড়ক বিভাগের আপত্তিতে বন্ধ হয়ে গেছে ৭টি মোড়ের সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ। এর মধ্যে নগরীর পিটিআই মোড়ে ফুটওভার ব্রিজের কাজ বন্ধ থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে স্কুল শিক্ষার্থীদের। প্রকল্পের আর দুই মাস বাকি থাকায় অবশিষ্ট টাকাও ফেরত চলে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় খুলনার সড়কগুলো প্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর সৌন্দর্য্যবর্ধনের দাবি জানিয়ে আসছে সাধারণ মানুষ। জনদাবীর প্রেক্ষিতে ‘খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ২২টি মোড়ের উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্যবর্ধনের প্যাকেজটি অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এতে ব্যয় ধরা ছিল প্রায় ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
সড়কে যানবাহনের চাপ ও আশপাশের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মোড়গুলোর নকশা প্রণয়নের জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিনের ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডিজাইন কনসালটেন্সি ইউনিটকে (আরডিসিইউ) দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ২০২৩ সালে নকশা জমা দেয়। প্রকল্পের আওতায় মোড়গুলো সম্প্রসারণ এবং দৃষ্টিনন্দন, নগরীর পিটিআই মোড়ে একটি ফুটওভার ব্রিজ, বেশ কিছু মোড়ে ফোয়ারা নির্মাণ, নতুন ফুটপাত, সড়ক বিভাজক, জেব্রা ক্রসিং, বসার জায়গা ও আধুনিক সড়ক বাতি স্থাপনের কথা ছিল।
কাজটি তদারকির দায়িত্বে থাকা কেসিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান জানান, নগরীর ফুলবাড়ীগেট, নতুন রাস্তা, গোয়ালখালী, জোড়াগেট, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়, খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতাল, কেসিসি মার্কেট ও ময়লাপোতা মোড়ের কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়। এর মধ্যে নগরীর নতুন রাস্তা মোড়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো মাঝপথে রয়েছে। তিনি বলেন, সড়ক বিভাগের আপত্তির কারণে পিটিআই মোড়ে ফুটওভার ব্রীজ, পাওয়ার হাউজ মোড়, শান্তিধাম, রয়েল মোড়, বয়রা কলেজ মোড়, বৈকালী মোড়, রূপসা ট্রাফিক মোড়ের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।
সরেজমিন নগরীর কয়েকটি মোড় ঘুরে দেখা গেছে, কাজ হওয়ার পরে নগরীর নতুন রাস্তা মোড়টি পুরোপুরি বদলে গেছে। মোড় ও সড়কের পাশে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ, নতুন সড়ক বাতি নজর কাড়ছে পথচারীদের। অন্যান্য মোড়ের কাজ চলছে। পিটিআই মোড়ের ফুটওভার ব্রীজের জন্য ড্রেনের ওপর পিলার তৈরি করা হয়েছে। এরপরই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
মনিরুজ্জামান জানান, আহসান আহমেদ রোডে সেন্ট জোসেফস স্কুল, সরকারি করোনেশন বালিকা বিদ্যালয়, শিশু বিদ্যালয়সহ অর্ধশত কোচিং সেন্টার ও শিক্ষকদের প্রাইভেট ব্যাচ রয়েছে। প্রতিদিন পিটিআই মোড়ে পারাপার করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। প্রায় সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় ওই মোড়ে একটি ফুটওভার ব্রীজ খুবই জরুরী ছিল। কেসিসি কাজ শুরুর পর সবাই আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি।
কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো. মাসুদ করিম বলেন, সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সম্মতি নিয়েই প্রকল্পের নকশা তৈরি করা হয়েছে। কাজ শুরুর সময় তাদের সব ধরনের সম্মতি ছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আগের কর্মকর্তারা বদলি হয়েছেন। নতুন কর্মকর্তাদের আপত্তিতে কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা তাদের বোঝানোর জন্য দফায় দফায় বৈঠক করছি।
সড়ক বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, মহাসড়কের মাঝে ও পাশে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ নিষেধ রয়েছে। কেসিসিকে নকশা পরিবর্তন করে কাজ করতে বলা হয়েছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান জানান, খানজাহান আলী রোড সড়ক ও জনপথ বিভাগের মহাসড়ক হলেও এটি নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত এবং নগরীর প্রধান সড়ক। যানজট কমাতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং নগর পরিকল্পনাবিদরা নকশা তৈরি করেছে। এই আপত্তি অমূলক। তিনি বলেন, প্রকল্পের আর এক মাস বাকি রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারলে টাকাগুলো ফেরত চলে যাবে। তখন আগের মতো শ্রীহীনভাবেই পড়ে থাকবে নগরী।
ভোরের আকাশ/আজাসা