ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫ ০৪:২২ পিএম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের পুশইন রুখে দিল বিজিবি-জনতা
তখন রাত আড়াইটার মতো হবে, হঠাৎই সাইরেন এর শব্দে ঘুম ভাঙে! মসজিদের মাইকে ঘোষণা হচ্ছে... প্রিয় সিংগারবিল ইউনিয়নবাসী, সবাই ঘুম থেকে উঠুন এবং যার যা কিছু আছে তা নিয়ে ভারত সীমান্তে চলে আসুন। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবিকে সহায়তা করুন। অনুরোধক্রমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ মাইকিং শুনেই কোনরকম বিলম্ব না করে পরিবারের ছেলেরা বেরিয়ে যায় সীমান্তের দিকে, আর আমরা মেয়েরা মনে অজানা ভয়-অস্থিরতা নিয়ে সময় গুনছিলাম! একবার ঘর থেকে বের হয়ে ভারত সীমান্তের দিকে তাকিয়ে থাকি, আবার ঘরে আসি। এমন করতে করতে ভোর হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্ম পাওয়ার এন্ড মেশিনারি বিভাগের প্রভাষক মোছা: সাবিনা আলীম ভোরের আকাশের প্রতিবেদক আশরাফুল ইসলাম সুমনের কাছে এভাবেই গভীর রাতে সীমান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন।
বিজিবি ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তবর্তী সিংগারবিল ইউনিয়নের নোয়াবাদী-নলগড়িয়া এলাকায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে (১৬ মে) পুশইনের খবরে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও স্থানীয় মানুষদের বাধার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় ভারতীয় বিএসএফ। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে মসজিদে মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহ্বানের মাধ্যমে সিঙ্গারবিল, নোয়াবাদী, নলগড়িয়া, কাশিনগর, মেরাশানী, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, ভাগলপুর, কাশিমপুর গ্রামের মানুষজ সীমান্তে জড়ো হয়। ঘন্টাখানেকে মধ্যে শতশত মানুষ সীমান্তে অবস্থান নিলে বিএসএফ পিছু হটে এবং কোনো সংঘর্ষ ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সূত্রে জানা গেছে, বিএসএফ বৃহস্পতিবার রাতে আগরতলা বিমানবন্দরের পাশের গেটের কাছে কয়েকশত ভারতীয় নাগরিককে জড়ো করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি জানার পর বিজিবির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে সীমান্তে টহল জোরদার করে বিজিবি। ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘটনাস্থলের ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে, যা আরও আতঙ্ক বাড়িয়ে দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকাগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে টহল দেওয়া হচ্ছে, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো অবস্থাতেই বাসিন্দাদের সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে চলাফেরা না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ মে) দুপুরে সরেজমিনে বিজয়নগর উপজেলার নোয়াবাদী ও নলগড়িয়া সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিজিবির সদস্যরা সীমান্তে টহল দিচ্ছেন। অবৈধভাবে যেন কোনো ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছেন সীমান্তে।
সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বাচ্চু মিয়া জানান, বিজিবির কাছ থেকে খবর পেয়ে রাতেই আমরা এলাকায় মাইকিং করি। গ্রামবাসী জড়ো হয়ে গেলে বিএসএফ পিছিয়ে যায়।
ইউনিয়ন পরিষদের আরেক সদস্য মামুন চৌধুরী বলেন, বিএসএফ গোপনে পুশ-ইন করতে এসেছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতি ও বিজিবির কড়া অবস্থানের কারণে তারা সরে যেতে বাধ্য হয়।’
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাধনা ত্রিপুরা বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। তবে বিজিবির পাশাপাশি প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিষ্ণুপুর বিজিবি ক্যম্পের (সুবেদার) শরিফ মাহাবুব বলেন, গোপন তথ্যে জানতে পারি বিএসএফ ৭৫০ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করাবে। এই খবরে সীমান্ত এলাকার সবাইকে নিয়ে মাইকিং করিয়ে বিএসএফের অপতৎপরতা রুখে দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বিজয়নগর থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। পুশইন চেষ্টার খবরে জনগণ বিজিবির সঙ্গে থেকে প্রতিহত করেছে।
তবে কতজন পুশইন করবে এই ধরণের সংখ্যার ব্যাপারে জানেন না বলে জানান এই বিজিবি কর্মকর্তা।
২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকদের পুশইনের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে ওই এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। এখনও (শুক্রবার বিকাল ৪টা) পর্যন্ত কোনো অনুপ্রবেশ ঘটেনি। পুশইন ও মাদক কোনোভাবেই বাংলাদেশে আসতে পারবে না। এ ব্যাপরে বিজিবি সবসময়ই সতর্ক অবস্থায় আছে। এ ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোতে ঘুরে স্থানীয়দের সচেতন করছেন বিজিবি সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে একটি বড় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।
পুশইনের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও স্থানীয়দের মাঝে সীমান্তের নিরাপত্তা।
ভোরের আকাশ/এসআই