ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৫ ০৭:৫৮ পিএম
ভালুকায় সুমনের বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে ১৩ জাতের আঙুর
লাল, কালো আর সবুজ রঙের আঙুরে ভরে উঠেছে ময়মনসিংহের একটি ছোট্ট বাগান। লেখাপড়ার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষিতে নতুন চমক আঙুর চাষে সফল হয়েছেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের কৈয়াদী গ্রামের কলেজ পড়ুয়া মেধাবী ছাত্র সুমন মিয়া। মাত্র সাত শতাংশ জমিতে ১৩ জাতের বাহারি আঙুর চাষ করে নজর কেড়েছেন।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কৈয়াদী গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। টাঙ্গাইলের সখীপুর সরকারি মুজিব কলেজে তিনি সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি আঙুর চাষে মন দিয়েছেন তিনি।
সুমন মিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আগ্রহ। বাবার কৃষিকাজ ও স্থানীয় বাজারে পরিবারের কীটনাশকের দোকান আমাকে কৃষিতে যুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করে। এলাকাজুড়ে ড্রাগন ফল, পেয়ারা, কলাসহ বিদেশি ফলের ভালো ফলন দেখে আঙুর চাষের ভাবনা আসে মাথায়। ইউটিউব ও ফেসবুকে বিভিন্ন দেশের চাষপদ্ধতি দেখে ২০২২ সালে যশোর থেকে ভারতীয় জাতের ২৭টি আঙুরের চারা এনে নিজ বাড়ির পাশে রোপণ করি।
তিনি আরও বলেন, প্রথম বছর ফলনে আশানুরূপ মিষ্টতা না থাকায় হতাশ হই। এরপর দুই বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে চলতি বছর নতুনভাবে বাগান সাজাই। নাটোর,ঢাকা সাভার রাজশাহী, ফরিদপুর, জামালপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৩ জাতের ৬০টি চারা সংগ্রহ করি। এর মধ্যে আছে বাইকুনর, একেলো, ভেলেজ, ডিক্সন, জয় সিডলেজ, অস্ট্রেলিয়ান কিং, ব্ল্যাক রুবি, ব্ল্যাক ম্যাজিক, থার্টি ওয়ান, মাসকাট হোয়াইট, আমেরিকান রিলায়েন্স, মার্সেল ফোর্স, ভেলক ও গ্রিন লং।
সুমন মিয়া বলেন, ইউটিউবে দেখে দেখে চাষপদ্ধতি শিখেছি। লতানো গাছের জন্য উঁচু মাচা করে দিয়েছি। ২৫টি গাছ নষ্ট হয়ে গেলেও বাকি ৩৫টি গাছে এবার ফলন ভালো হয়েছে। আঙুর বাগানে শুধু ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া অন্য রাসায়নিকের প্রয়োজন হয় না। এ মাসের শুরু থেকে পাকতে শুরু করেছে আঙুর। আগামী মাসের শেষে পুরো বাগানের ফল বিক্রি শেষ হবে।
তিনি বলেন, স্থানীয়রা আঙুর কিনে নিয়ে যান। সবুজ আঙুর ৪০০ টাকা এবং লাল-কালো আঙুর ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। প্রতিটি গাছে ধরেছে ১৫ থেকে ২০ কেজি ফল। এখন পর্যন্ত বাগানে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে এ তরুণ বলেন, এ বছরই সব খরচ উঠে যাবে আশা করছি। অনেকে আমার কাছ থেকে চারা নিয়ে চাষ শুরু করেছেন। আমি চাই বাংলাদেশে ঘরে ঘরে আঙুরের চাষ হোক। বিদেশ থেকে যেন আর আঙুর আনতে না হয়।
এ কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর সুমনের আঙুর চাষে উল্লেখযোগ্য ফলন হয়েছে। আগামীতেও ফলনের পরিমাণ আরও বাড়বে। দেশজুড়ে যদি এইভাবে উন্নত জাতের আঙুর চাষ বিস্তৃত করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে আঙুর আমদানির প্রয়োজন নাও হতে পারে।
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, ভালুকা উপজেলার মাটি যে কোনো ফল চাষের জন্য উপযোগী। সুমন পরীক্ষামূলকভাবে তার বাড়ির আঙিনায় আঙুর চাষ করেছে। সব দিক বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে ভালুকার মাটি ও আবহাওয়া আঙুর চাষের জন্য উপযুক্ত।
ভোরের আকাশ/এসআই