৫ বছর পর চালুর ৩ মাসেই ভেস্তে গেল চসিক মেয়রের উদ্যোগ

৫ বছর পর চালুর ৩ মাসেই ভেস্তে গেল চসিক মেয়রের উদ্যোগ

এন এস কাঞ্চন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২২ ঘন্টা আগে

আপডেট : ২২ ঘন্টা আগে

৫ বছর পর চালুর ৩ মাসেই ভেস্তে গেল চসিক মেয়রের উদ্যোগ

৫ বছর পর চালুর ৩ মাসেই ভেস্তে গেল চসিক মেয়রের উদ্যোগ

দীর্ঘ ৫ বছর খালি পড়ে থাকার পর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি চালু করা হয় চকবাজার কাঁচাবাজারের দ্বিতীয় তলায় সবজি বাজার। কিন্তু ৩ মাস না যেতেই সেটি এখন বন্ধ হওয়ার পথে। সেখানে রাস্তা-ফুটপাত দখলকারী ৬৮ জন ভাসমান ব্যবসায়ীকে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ৫ মাস বিনামূল্যে ব্যবসা করার সুযোগ দেন। তবে সেই সুযোগ গ্রহণ না করে ৭ জন ছাড়া বাকি সবাই আবারও রাস্তা-ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে। ফলে এলাকায় বেড়েছে যানজট, চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে পথচারীদের। উঠেছে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার সাধারণ মানুষ ও পথচারীরা।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা গেল, কাঁচাবাজারের দ্বিতীয় তলায় বরাদ্দ পাওয়া ৬৮ জন ভাসমান ব্যবসায়ীর মধ্যে আছেন মাত্র ৭ জন। ক্রেতার আনাগোনা একেবারে হাতে গোনা। বাজারের বিপরীতে একটি মন্দিরসংলগ্ন ফুটপাত এবং ধুনীরপুল থেকে বাকলিয়া খালপাড় ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা দখল করে বসেছে অর্ধশতাধিক ভাসমান ব্যবসায়ী। এছাড়া বাজারের সামনে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের ব্যানারে রাস্তা-ফুটপাত দখল করে গাড়িতে বিক্রি করা হচ্ছে ন্যায্যমূল্যের বিভিন্ন পণ্য।

বাজারের দ্বিতীয় তলার ব্যবসায়ীরা জানান, সেখানে কেউ উঠতে চায় না। বেচাকেনা একেবারে কম। দিনশেষে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে সবাইকে। এছাড়া রাস্তায় ভ্যানগাড়িতেও পণ্য বিক্রি কমেনি। তাই সবাই বাধ্য হয়ে রাস্তা-ফুটপাতে আবার বসে পড়েছে।

ভাসমান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা রাস্তা-ফুটপাতে ব্যবসা করছে, তাদের কাছ থেকে হাসিলের পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর এই টাকা আদায় করছে হাসিলদারের লোকজন। প্রতিদিন হাসিল ১৫০ টাকা ও জায়গাভাড়া ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। জায়গাভাড়া না দিলে ব্যবসার সুযোগ নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভাসমান ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন বাজারের হাসিল ১৫০ টাকা ও জায়গাভাড়া ১০০ টাকাসহ মোট ২৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। না দিলে বাজারে বসতে দেওয়া হয় না এবং ব্যবসা করতে বাধা দেওয়া হয়। এলাকার বিএনপি ও যুবদলের লোকজন এ কাজে জড়িত। ডিসি রোডের যুবদল নেতার দুই ভাই অতিরিক্ত টাকাগুলো আদায় করে থাকে। তাদের ভয়ে তটস্থ থাকেন এলাকার ব্যবসায়ীরা।

এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর দৈনিক ভোরের আকাশ-এর অনলাইন ভার্সনে ‘৬ কোটি টাকার চসিকের বাজার খালি ৫ বছর’ এবং ২৭ ডিসেম্বর পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণে ‘চসিকের বাজার কাজে আসছে না’ শিরোনামে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় তলায় সবজি বাজার চালু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে চালুর ৩ মাসেই শেষের পথে মেয়রের সেই উদ্যোগ।

এদিকে দ্বিতীয় তলায় সবজি বাজার চালু হওয়ায় এবং রাস্তায়-ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন এলাকার সাধারণ মানুষ। বর্তমানে রাস্তা-ফুটপাত দখল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা।

তারা বলছেন, আগের মেয়ররা নানা উদ্যোগ নিয়েও চকবাজার কাঁচাবাজারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা চালু করতে পারেননি। কিন্তু বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে খালি পড়ে থাকা একটি ফ্লোর চালু করলেন। তবে তিন মাস না যেতেই সবাই আবারও রাস্তা-ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে। যাদের দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। ফের শুরু হয়েছে রাস্তা-ফুটপাত দখল, বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি।

এদিকে রাস্তা-ফুটপাত দখল করে কেউ যাতে ব্যবসা করতে না পারে, সে বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তাকে ওইদিন পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাজ্জাক বলেন, কাঁচাবাজারের দ্বিতীয় তলা চালু করায় পাল্টে গিয়েছিল চকবাজার এলাকার দৃশ্য। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম। এখন আগের মতো সব হয়ে গেছে। মেয়রের নেওয়া একটি ভালো উদ্যোগ সঠিক নজরদারির অভাবে বেশিদিন স্থায়ী হলো না। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। হঠাৎ তাদের এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।

পথচারী জানে আলম বলেন, চকবাজার কাঁচাবাজারের দ্বিতীয় তলা চালুর পর রাস্তা-ফুটপাত দখলমুক্ত হয়েছিল। এখন আবার আগের দৃশ্য ফিরে এসেছে। ভালো একটি উদ্যোগ সঠিক নজরদারির অভাবে ভেস্তে গেল।

এর আগে ৮ ডিসেম্বর ও ২১ ডিসেম্বর চকবাজারের রাস্তা-ফুটপাত দখলমুক্ত করতে দুদফা অভিযান পরিচালনা করে সিটি করপোরেশন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী। ওই দিন তিনি বলেন, সিটি মেয়র আপনাদের চকবাজার কাঁচাবাজারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা আগামী ৫ মাস কোনোরকম ভাড়া ছাড়াই ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন।

জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত চকবাজার কাঁচাবাজার উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর। উদ্বোধনের পর নিচতলা চালু হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা চালু হয়নি। এ নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সংশ্লিষ্টদের। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন বরাদ্দ পাওয়া দোকান মালিকরা।

এ বিষয়ে জানতে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে সবজি বাজার উদ্বোধনের দিন মেয়র বলেছিলেন, ‘ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি’ গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা প্রতিদিন রাতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তা-ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। চকবাজারে দুবার অভিযান চালানো হয়েছে। চকবাজার কাঁচাবাজার একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। অতীতে এখানে রাস্তা-ফুটপাতে বাজার বসিয়ে বাণিজ্য হতো। সাধারণ মানুষ হাঁটতে পারত না, প্রতিনিয়ত যানজট হতো। বর্তমানে এলাকাবাসীর স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। এই পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা চলবে। কেউ যাতে রাস্তা-ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করতে না পারে, সে লক্ষ্যে দুজনকে নিয়মিত তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ভোরের আকাশ/এসআই

  • শেয়ার করুন-

সংশ্লিষ্ট

মাদকাসক্ত ছেলেকে জবাই করে হত্যার পর পিতার আত্মসমর্পণ

মাদকাসক্ত ছেলেকে জবাই করে হত্যার পর পিতার আত্মসমর্পণ

ইয়াবাসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১২

ইয়াবাসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১২

গাইবান্ধায় আগুনে পুড়লো ৩ দোকান; ১৩ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি

গাইবান্ধায় আগুনে পুড়লো ৩ দোকান; ১৩ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি

আমরা প্রতিহিংসার কিংবা প্রতিশোধের রাজনীতি করি না: ডা. শফিকুর রহমান

আমরা প্রতিহিংসার কিংবা প্রতিশোধের রাজনীতি করি না: ডা. শফিকুর রহমান

মন্তব্য করুন