পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫ ১২:০০ পিএম
পিরোজপুরে তিল ক্ষেতে মধু চাষে প্রথমবারেই সাফল্য
সবুজ গালিচার মতো বিস্তৃত মাঠ, তার মাঝে তিল গাছে ঝলমল করছে সারি সারি সাদা ফুল। ক্ষেতের চারদিকে মৌমাছি গুনগুন করছে। পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের ঘোষের হাওলা গ্রামে দেখা যায় এমনি এক দৃশ্য যেখানে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে তিল ও মধু চাষে সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তিল গাছে ফুল আসতেই মৌমাছির আনাগোনা দেখে সুযোগটি কাজে লাগাতে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে বসানে হয়েছে মৌচাক। মৌমাছি পরাগায়নের কাজ যেমন করছে, তেমনি সংগ্রহ করছে মধু। ফলে এক জমিতে এখন মিলছে দ্বিগুণ ফসল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এ গ্রামের একটি মাঠে প্রায় ১০০ একর জমিতে তিল চাষ করা হয়েছে, আর সেই ক্ষেতের পাশে কৃত্রিম উপায়ে মৌচাষের মাধ্যমে উৎপাদিত হচ্ছে বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক মধু। কৃষকদের এই যৌথ উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। উৎপাদিত মধুকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য বরগুনা থেকে আনা হয়েছে পেশাদার মৌচাষী। সুইডেন প্রবাসী আরিফুল ইসলামের বাড়ির পাশের বাগানে বসানো হয়েছে ১৩০টি মৌচাক।
স্থানীয় কৃষক মোঃ আবুল হাওলাদার বলেন, আমরা ৫০ থেকে ৬০ জন মিলে বারি-৪ জাতের তিল চাষ করছি। খরচও তুলনামূলক কম প্রতি বিঘায় মাত্র ২৩০০ থেকে ২৪০০ টাকা। সঠিকভাবে যত্ন নিতে পারলে প্রতি বিঘায় লাভ হতে পারে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে মধু চাষ করেও সফলতা এসেছে। মৌমাছি তিল ফুলে পরাগায়নে সাহায্য করছে।
অপর কৃষক মোঃ শাহজাহান বলেন, মৌ চাষের কারনে আমাদের ফলন দ্বিগুণ হওয়ার আশা করছি কেননা মৌমাছির কারনে পরাগায়ন ভালোভাবে হচ্ছে প্রতিটি গাছেই ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।
মৌচাষী শহিদুল ইসলাম রানা বলেন, এখান ১০০ একর জমিতে তিল চাষ করা হয়েছে। সেখানে আমি ১৩০ টি মৌ বক্স স্থাপন করে একবার মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি। হটাৎ বৃষ্টি হওয়ায় দ্বিতীয়বার আর সংগ্রহ করতে না পারলেও প্রথম বারেই ৮ মন মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি যার বাজার মূল্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ৩০ হাজার টাকা খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকাই লাভ রয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইখতেখারুল আলম বলেন, দফায় দফায় মিটিং করে ১০০ একর জমিতে বারি-৪ জাতের তিল চাষে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করেছি। তিল লাভজনক ফসল। তিল চাষকে কেন্দ্র করে মধু চাষ করা হয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে চাষী সফল হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, একই সাথে ১০০ একর জমিতে তিল চাষ ও ১৩০ টি মৌ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। বিষয়টি কৃষকদের মাঝে বেশ সারা ফেলেছে। মধু চাষে কৃষকেরা ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাভবান হবে। পাশাপাশি আশাকরছি তিল চাষে এই মাঠ থেকে কৃষকেরা ৪ লাখ টাকা লাভবান হবে। আমরা কৃষি বিভাগ সবসময় তাদের পাশে রয়েছি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ