কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর দায়ে ব্যবসায়ীর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
নাটোরে কেমিক্যাল ব্যবহার করে আম পাকানোর অভিযোগে এক ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুর ১টার দিকে আহমেদপুর বাজারে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের নাটোর কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল হাসান।
তিনি জানান, চলতি মে মাসের ১৫ তারিখ থেকে বাজারে গুটি জাতের আম উঠতে শুরু করেছে। এসব আমে কোনো ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানের সময় দোয়াল ট্রেডার্স নামের এক প্রতিষ্ঠানের মালিক শাজাহান আলীর আমের গুদামে ইথোসিন নামের কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। ভোক্তার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এই অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আরও জানান, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ভোরের আকাশ//হ.র
সংশ্লিষ্ট
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আধুনিকতার ছোঁয়া এখন বিশ্বময়। দিনবদলের ঢেউয়ে গ্রামেও এখন শহুরে পরিবেশ। কালের এই বিবর্তনে গ্রামবাংলার অনেক ঐতিহ্যও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যের এমনই এক অনুসঙ্গ ‘হারিকেন’ যা- বিলুপ্তপ্রায়। বৈদ্যুতিক বাতি, চার্জার ও বিদ্যুতের নানা ব্যবহারের ফলে হারিকেনের ব্যবহার আজ আর দেখা যায় না। নতুন প্রজন্মের অনেকে জানেন না, হারিকেন কী, এটির কাজই-বা কী! তবে প্রবীণদের ভাষ্যমতে, একসময় হারিকেন দেখতে যেতে হবে জাদুঘরে।গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে একসময় হারিকেনই ছিল একমাত্র আলোর উৎস। আকাশের আলো নিভে গেলেই সন্ধ্যায় হারিকেন হয়ে উঠতো আধারের অবলম্বন। শিশুদের লেখাপড়া বাসগৃহকে আলোকিত করা, বাজারের কেনাবেচা এমনকি রাতে চলাফেরার জন্যও হারিকেন ছিল গ্রামের মানুষের একমাত্র সারথি। তবে এখন প্রযুক্তির ভিড়ে হারিকেন ছেড়ে বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে গ্রামের মানুষও।গল্পে গল্পে হারিকেনের কথা বলতেই চমকে যান গাইবান্ধা সদর উপজেলার মাঠেরপাড় গ্রামের বয়োবৃদ্ধা হেনা বেগম (৮৫) বলেন, ‘মুই যখন ছোট আছিলুম, তখন প্রত্যাক সন্ধ্যাবেলাত হ্যারিকেনের কাচের চিকনি খুলি, ধুয়া, মুছি পরিষ্কার করি ক্যারাসিন ত্যাল ঢালি মেচ দিয়া আগুন জ্বালাছোম। আগে হ্যারিকেনের ক্যারাসিন ত্যাল থোয়ার জন্য সবার বাড়িত বাড়িত কাচের বোতলত দড়ি দিয়্যা লাগায় বাঁশের খুঁটিত ঝুলিয়ে রাখা হইতো। এখন কোনটি তার এগল্লা পাবেন। এ দেশ থাকি হ্যারিকেন উঠি গেছে। ’গাইবান্ধা পৌর এলাকার কলেজপাড়ার বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা ল্যাম্প কিংবা হারিকেনের মৃদু আলো জ্বালিয়ে ছাত্রদের লেখাপড়া করিয়েছি। বাতাসের ঝাপটায় কখনো কখনো আলো নিভে গেছে। আবার কাঠির ম্যাচ অথবা ছাত্র বানসার চুলার আগুনে পাটকাঠি দিয়ে আলো জ্বালিয়ে পড়ালেখা শুরু করাতাম। এখন এসব কিছুই অতীত। সবই স্মৃতি হয়ে আছে আমাদের মাঝে। ’মাঠেরপাড় এলাকার মুদি দোকানি মালেক মিয়া বলেন, ‘১৫ থেকে ২০ বছর আগে বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় কেরোসিন তেল নেয়ার জন্য মানুষের সিরিয়াল থাকত। গ্রামাঞ্চলের সেই ঐতিহ্যবাহী হারিকেন আজ বিলুপ্তির পথে। এখন পুরো বাজারে মুদির দোকানে কেরোসিন তেল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। ’সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর এলাকার ৭৬ বছর বয়সি রিকশাচালক কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আমি এখন রিকশা চালাতে পারি না। তবে আজ থেকে ২০ বছর আগেও আমি যখন রিকশা চালাই, তখন হারিকেন ছাড়া রাতে চালানো যেত না। তখন হারিকেন ব্যবহার করতে হতো। আমরা রিকশার নিচে পেডেলের পাশে এটা বসিয়ে রিকশা চালাতাম। ১০-১৫ টাকার কেরোসিন তেল দিয়ে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা চালানো যেত রিকশা।’ভোরের আকাশ/আজাসা
বরগুনার পাথরঘাটা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগী সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার পাথরঘাটায় ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’। ২০০৫ সালে বরগুনা-২ আসনের সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম মনির প্রচেষ্টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে শয্যা বাড়লেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে রয়েছে চিকিৎসক ও নার্সসহ সহায়ক লোকবল সংকট। প্রতিদিন পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় একশো থেকে দেড়শো নতুন রোগী আউটডোরে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এছাড়া জরুরি বিভাগে অর্ধশত রোগী সেবা নেন। এর মধ্যে ২০-৩০ জন হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন।সরজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে এখানে ৩১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে ৬ জন চিকিৎসক কর্মরত দেখা গেলেও বাস্তবে এখানে নিয়মিত কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৩ জন। এই ৩ জনের মধ্য থেকেও ১ জন চিকিৎসক সদ্য ট্রেনিংয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২ জন। যে ২ জন চিকিৎসক বর্তমানে কর্মরত আছেন তার মধ্য থেকে একজন হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুব হোসেন। তাকে উপজেলার তিন লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো পরিচালনা করতে হয়। তার পক্ষে আউটডোরে চিকিৎসাসেবা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব হয় না। আর বাকি যে একজন চিকিৎসক আছেন তিনি হলেন ডেন্টিস্ট সার্জন ডা. আল আমিন। তাকেও অন্যান্য চিকিৎসা সেবাও দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ট্রেনিংয়ে থাকায় ‘স্টাফ’ দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মূল ফটক থেকে ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় কয়েকজন রোগী জরুরি বিভাগের সামনের বেঞ্চে শুয়ে আছে। কথা বলে জানা যায়, এখানে মাত্র একজন চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। একজন চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দেয়ায় বাহিরের বেঞ্চে শুয়ে থাকা থাকা রোগীরা বেশ গুরুতর হলেও বাকি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে জোড়া তালি দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা গেলেও আউটডোরের চিকিৎসা সেবা প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে। আর এখানের ভর্তি ওয়ার্ডগুলোতে শুধু নার্স দিয়েই চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে।এখানে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বেঞ্চে বসেছিলেন ছিলেন রেশমি আক্তার। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা সেবা নিতে এসে সকাল থেকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে আছি। এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই।’হাসপাতালে ভর্তি ওয়ার্ড আছেন কুলসুম বেগম। তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এখানে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা শুরু করে চিকিৎসা সেবা নেই। তারপরও বাধ্য হয়ে আছি। কেননা আমরা অত্যন্ত গরিব মানুষ। ভালো ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য নেই। হাসপাতালে ভর্তি ওয়ার্ডে ভর্তিরোগীর এক স্বজন বলেন, ‘এত বড় একটি হাসপাতালে মাত্র দুজন চিকিৎসক। আমার ছেলেকে এখানে ভর্তি পড়ানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসকের তেমন একটা দেখা পাইনি। আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আব্দুর রহিম বলেন, সেবা নিতে আসার পর এক্স-রে সহ আমাকে দুইটা টেস্ট দিয়ে বাহির থেকে কড়িয়ে আনতে বলেছে। আমি তাদের এখানে টেস্টগুলো হবে না এটা জিজ্ঞেস করায় তারা জানিয়েছেন এখানে এই টেস্টগুলোর মেশিন নষ্ট তাই বাড়ি থেকে করাতে হবে। কিন্তু আমি যে দিন আনি দিন খাই তাই আমার পক্ষে এই টেস্টগুলো করানো সম্ভব না। এজন্য আমাকে চিকিৎসা সেবা না নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।পাথরঘাটা পৌর শহরের বাসিন্দা সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম কাজী রাকিব জানান, এই উপজেলার তিন লক্ষ মানুষের বিপরীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ বছর ধরেই চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্সসহ অন্যান্য জনবল সংকট চলে আসছে। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকট থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্যা নিরেশনে এ উপজেলার সাধারণ মানুষ মানববন্ধন থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আসলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো সমাধান হয়নি। এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মাহবুব হোসেন ‘ভোরের আকাশ’কে জানান, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীরাই যে শুধু ভোগান্তিতে পড়ে এমনটি নয় বরং এখানে ৩১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে আমি সহ মাত্র ২ জন চিকিৎসক থাকায় সেবা প্রত্যাশীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে যে শুধুই চিকিৎসক সংকট এমনটি নয় বরং এখানে অন্যান্য নার্স ও স্টাফেরও সংকট রয়েছে।তিনি আরো জানান, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সপ্তাহখানেক আগে বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপসচিব এসেছিল আমরা তাকে এখানে চিকিৎসক সহ অন্যান্য যে সংকট বিষয়গুলো অবহিত করেছি। তিনি আমাদেরকে এখানের চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি অতি দ্রুত সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। ভোরের আকাশ/আজাসা
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার মুরাদপুর এলাকায় একটি খামারে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তারা মিয়া নামে এক বৃদ্ধ খামারিকে হত্যা করেছে ডাকাত দল। মঙ্গলবার (২০ মে) রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে ঘটে এ ঘটনা।চাষাবাদ ও গরু পালনের উদ্দেশ্যে মুরাদপুরের কাউলিয়া চরে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে নাতি মো. ইব্রাহিমকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করছিলেন তারা মিয়া।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতে ১০ থেকে ১২ জনের একটি ডাকাত দল ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড নিয়ে ঘরে ঢুকে প্রথমে নাতি ইব্রাহিমকে বস্তাবন্দি করে এবং পরে দাদা তারা মিয়াকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর খামার থেকে চারটি গরু নিয়ে নৌকায় করে পালিয়ে যায় দলটি।চৌহালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, যেখানে ডাকাতি হয়েছে, সেটা নির্জন ও চর এলাকা। ডাকাতদের চিহ্নিত করা খুবই কঠিন কাজ। আমরা মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন আছে।ভোরের আকাশ/আজাসা
গ্রীষ্মকালেই বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ঢল, একটানা ভারি বৃষ্টি এবং নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ জেলায় গত কয়েক দিন ধরে ভারি বর্ষণ চলছে। চারটি জেলার অনেক হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ও উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী তিন দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা নদী সমতলের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, আগামী তিন দিন ধরে এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এভাবে রংপুর বিভাগের ধরলা নদী, ময়মনসিংহ বিভাগের সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংশ নদী, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের আপার আত্রাই, যমুনেশ্বরী-করতোয়া, পুনর্ভবা ও ঘাগট নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর থেকে জানান, শেরপুর জেলার নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত সোমবার রাত ১০টায় পানির উচ্চতা ছিল ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর, যা রাতেই কিছুটা কমে। তবে ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি এবং উজানে অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে আবারও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, ভোগাই নদীর পানি (নকুগাঁও পয়েন্ট) বিপৎসীমার ৩৭৯ সেন্টিমিটার নিচে, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫৭ সেন্টিমিটার নিচে ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ২০ মে পর্যন্ত জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে, যা জনজীবন ও কৃষি খাতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জেলা কৃষি বিভাগ ইতোমধ্যে কৃষকদের পাকা ধান দ্রুত কেটে উঁচু স্থানে সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিং শুরু হয়েছে।ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বৃষ্টি ও উজানের কারণে পানি বেড়েছে। তবে এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট থেকে জানান, সিলেটের জাফলংয়ে হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল নেমে পিয়াইন নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা উজানের ঢল পিয়াইন নদী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা দ্রুত প্লাবিত হয়। নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এতে আশপাশের বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।স্থানীয় প্রশাসন জানায়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। জাফলংয়ের অধিকাংশ পর্যটন এলাকা ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। প্রতিরাতেই বইছে ঝড়। এই মাসজুড়েই বৃষ্টি থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমনকি মাসের শেষ দিকে বন্যাও হতে পারে। গত বছর সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এক বছরে টানা ৩ বার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় সিলেট। এবারও বর্ষা আসার আগেই বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এপ্রিল মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ-চলতি মাসের শেষ দিকে সিলেটে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা হতে পারে। জাফলং ছাড়াও গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং কানাইঘাট উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতেও পানির প্রবল গতি ও ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেট ও ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদীর পানি আরও বাড়তে পারে এবং বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে আকস্মিক বন্যা সতর্কতা জারি করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এসব নদীর পানি উপচে পড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। উদ্ধার কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম।নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়েই চলেছে। জেলার হালুয়াট ও ধোবাউড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হালুয়াঘাটের বোয়ালমারা গ্রামে থৈ থৈ পানি। বাঁধ মেরামত না হওয়ায় ধোবাউড়ার নিতাই নদীর পানিতে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে নেত্রকোনা দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে গিয়ে নির্মাণাধীন চাপাতলী সেতুর পাশের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করায় আশপাশের কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ