সৌদি আরবে চলতি বছরে রেকর্ড মৃত্যুদণ্ড
সৌদি আরবে গত সোমবার আরও দুই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর ফলে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭-তে, যা চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ঘটনা। সৌদি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।এসপিএ জানায়, সোমবার যাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তারা ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমে’ জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এ ছাড়া গত শনিবার একসঙ্গে সাতজন এবং রোববার আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। শনিবার ও রোববার যাঁদের শাস্তি কার্যকর হয়েছে, তাদের অধিকাংশই বিদেশি নাগরিক এবং মাদকসংক্রান্ত অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে জানায় সংবাদমাধ্যমটি।২০২২ সালের মার্চ মাসের পর এত অল্প সময়ে এত বিপুল সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা সৌদি আরবে এটাই প্রথম। ওই সময় একদিনে ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল দেশটি, যা আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার সৌদি আরবকে মৃত্যুদণ্ডের হার কমানোর আহ্বান জানালেও দেশটির শাস্তি কার্যকরের গতি এখনো থামেনি।মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলো বলছে, সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড সাধারণত জনসমক্ষে কার্যকর করা হয় এবং সেখানে হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাসবাদ, সশস্ত্র ডাকাতি, ধর্মত্যাগ, সমকামিতা, এবং বিশেষত মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হয়। যদিও আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের মানবাধিকার নীতিমালা অনুযায়ী মাদকসংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে অনেকেই ‘অমানবিক’ বলে মনে করেন।বিশ্বের অন্যতম বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ সৌদি আরব চলতি বছরে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি এবং বছরের শেষ নাগাদ তা ২০২৩ সালের মোট মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সৌদি আরবের এ ধারাবাহিক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই বিচারপ্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে পরিচালিত হয় না, অভিযুক্তদের পর্যাপ্ত আইনগত সহায়তা দেওয়া হয় না এবং স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য জোরপূর্বক নির্যাতনের অভিযোগও শোনা যায়।যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, দেশটির আইন ‘শরিয়াহ’ ভিত্তিক এবং অপরাধ দমনে কঠোর শাস্তি প্রদান অপরিহার্য। বিশেষত সন্ত্রাসবাদ ও মাদক অপরাধে তারা কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয়। এদিকে, এত স্বল্প সময়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই হার নতুন করে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সৌদি সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যত দ্রুত সম্ভব মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প শাস্তি ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে।ভোরের আকাশ/তাকা