সংকট এড়াতে ট্রাম্পকেই দায়িত্ব নিতে হবে

যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্কযুদ্ধ

সংকট এড়াতে ট্রাম্পকেই দায়িত্ব নিতে হবে

ভোরের আকাশ প্রতিবেদন

প্রকাশ : ১ দিন আগে

আপডেট : ১০ মিনিট আগে

সংকট এড়াতে ট্রাম্পকেই  দায়িত্ব নিতে হবে

সংকট এড়াতে ট্রাম্পকেই দায়িত্ব নিতে হবে

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ, যা বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, সেটি থামানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি প্রথমবারের মতো নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, চীনের ওপর আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্কের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা হবে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টও ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছেন। 

তবে, চীনের পক্ষ থেকে সংকট সমাধানে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি, এবং এই অবস্থায় ট্রাম্পকেই প্রধান ভূমিকা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকটের সমাধান চীন থেকে আসবে না, বরং এর পেছনে ট্রাম্পের পদক্ষেপই বড় ভূমিকা পালন করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা উদ্বেগজনক। বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে মার্কিন শেয়ার বাজার ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যার ফলে দেশটির ডলারের দামও পড়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে চীনা মালবাহী জাহাজের বুকিং কমে যাওয়ায় চীনের রপ্তানি খাতও সংকুচিত হয়ে পড়েছে, যা আরও বড় চাপ সৃষ্টি করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু চীন, যে কিনা শক্তিশালী রাজনৈতিক শৃঙ্খলা এবং একক নেতা শি জিনপিংয়ের অধীনে একতাবদ্ধ অবস্থান নিয়েছে, তারা কোনোভাবেই বাণিজ্যযুদ্ধে পিছু হটতে রাজি নয়। তারা মনে করে, তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং ভিন্ন চরিত্রের কারণে তারা এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ীভাবে চালাতে সক্ষম।

এদিকে, ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়। ট্রাম্প চীনের সঙ্গে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্কের অসমতা ঠিক করার চেষ্টা করেছিলেন, এবং চীনকে মার্কিন পণ্য ও পরিষেবা ক্রয়ের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি, কারণ চীন তার প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। এর ফলে, সংকট আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প এখন বলেন, চীনকে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসতেই হবে, তবে চীনা নেতারা এখনও এই অবস্থানকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, কারণ তারা জানেন, ট্রাম্প নিজের মনোভাব অনেকবার পরিবর্তন করতে পারেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্যযুদ্ধের এই সমস্যার সমাধানে একমাত্র সম্ভাবনা হল ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত। চীন জানে, যদি তারা একটি সমঝোতা চুক্তিতে আসে, তবে তা তাদের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক ধরনের বিজয় হিসেবে তুলে ধরা হবে। চীন এমনভাবে এই যুদ্ধকে নিজের পক্ষে উপস্থাপন করতে চায়, যাতে তারা বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে পারে। তবে, এটি ট্রাম্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ তিনি চীনকে কোনো চুক্তির আওতায় আনতে সফল হলে তার জন্য এটি রাজনৈতিকভাবে বড় জয় হতে পারে।

এছাড়া, দুই দেশের মধ্যে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়া জরুরি। চীন বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, যা যদি সফল হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন পণ্যের রপ্তানি কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে, দুটি দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থিতিশীল হতে পারে। অন্যদিকে, ট্রাম্প যদি জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত খাতের বাইরে চীনা বিনিয়োগের জন্য মার্কিন বাজারে কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেন, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পায়নে সহায়ক হতে পারে এবং একই সঙ্গে চীনও মার্কিন বাজারে মুনাফা করে রাজনৈতিকভাবে সফলতার দাবী করতে পারে।

আগামী নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এপিইসি (এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন) সম্মেলনে ট্রাম্প এবং শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে তারা এই সংকট সমাধানে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারেন। এই বৈঠকটি দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এর মাধ্যমে তারা বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান এবং অর্থনৈতিক সংকট কমানোর জন্য একটি পথ খুলে দিতে পারেন। তবে, এই সংকটের সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হলে, তা ট্রাম্পকেই নিতে হবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই দেখা যাচ্ছে, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ট্রাম্পের পদক্ষেপের ওপর। চীন যদি আগেই কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে ট্রাম্পের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্কটির জন্য একটি স্থিতিশীল সমাধান খুঁজে বের করা।

ভোরের আকাশ/এসআই

  • শেয়ার করুন-

সংশ্লিষ্ট

কলকাতায় আবাসিক হোটেলে আগুন, নিহত ১৪

কলকাতায় আবাসিক হোটেলে আগুন, নিহত ১৪

পাকিস্তানকে ভয়ংকর ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে চীন

পাকিস্তানকে ভয়ংকর ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে চীন

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো বিশ্ব চালাচ্ছে ট্রাম্প

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো বিশ্ব চালাচ্ছে ট্রাম্প

ব্যাপক সেনা মোতায়েন ভারতের

ব্যাপক সেনা মোতায়েন ভারতের

মন্তব্য করুন