নিখিল মানখিন
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫ ০৯:১১ এএম
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে ভারতের হামলায় ধ্বংস হওয়ার বিশাল মসজিদ। ভারতের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলাওয়ামা জেলার উয়ান এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিমানের ধ্বংসাবশেষ। ছবিটি গতকাল তোলা -রয়টার্স
ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। পাকিস্তানে ভারতের পক্ষ থেকে হামলার মধ্য দিয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে চির বৈরী প্রতিবেশী দেশ দুটি। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পাল্টা হামলা চালাতে দেরি করেনি পাকিস্তানও। এভাবে পাল্টা-পাল্টি হামলায় এপর্যন্ত দু’দেশের মোট ৪১ জনের নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ এবং ভারতে ১৫ জনের নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। পাকিস্তান সীমান্ত পার হয়ে হামলার জন্য সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেয়, ভারত দীর্ঘদিন ধরে এমন অভিযোগ করে আসছে। যা ইসলামাবাদ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। এপ্রিলের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডে ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। এই ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তারা যে চারজনকে পেহেলগাম হামলায় সন্দেহ করছে, তাদের মধ্যে দুইজন পাকিস্তানের নাগরিক-এমন দাবি ভারতের। ওই হামলার থেকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। সীমান্ত বন্ধ করার পাশাপাশি পানি চুক্তি, বাণিজ্য স্থগিত করে প্রতিবেশী দেশ দুটি। আকাশসীমা বন্ধ করার পাশাপাশি কূটনৈতিক পর্যায়েও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর প্রতি রাতেই কাম্মীর সীমান্তে দু’দেশের সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময় চলে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পাল্টা হামলায় চালায় পাকিস্তানও।
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬
পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতের পর পাকিস্তানের কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফ্ফরবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার রাত ১টার পর পাকিস্তানের এআরউয়াই নিউজকে পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কাপুরুষ শত্রু ভারত এখন থেকে কিছু সময় আগে ভাওয়ালপুরের আহমেদ ইস্ট এলাকার সুবহান্নাল্লাহ মসজিদ, কোটলি ও মুজাফ্ফরবাদের অন্তত তিন জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে।’ হামলাগুলো ভারতের আকাশসীমা থেকে চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের সমুচিত জবাব দেবে উল্লেখ করে দেশটির এই সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এই ঘৃণ্য উসকানি জবাব ছাড়া পার পাবে না।’
ভারতের হামলায় হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরে আরও তথ্য জানানো হবে। এর কিছুক্ষণ পর তিনি পাকিস্তানের জিউ নিউজকে ক্ষয়ক্ষতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন।
তাতে বলেছেন, ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট এলাকায় একটি শিশু নিহত ও ১২ জন আহত হওয়ার খবর পেয়েছেন। কোটলিতে দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
তিনি জানান, আহমেদপুরে একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। কাছের একটি বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে একটি শিশু ও তার বাবা-মা আটকা পড়েছেন। তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কোটলিতেও একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। মুজাফ্ফরবাদে একটি সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে এই হামলার জবাব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘ভারতের যুদ্ধ ঘোষণার জবাবে পাকিস্তান জবাব দিচ্ছে ও দেবে। পাকিস্তানি জনগণ ও সশস্ত্রবাহিনী শত্রুর মোকাবিলা করতে জানে।’ গতকাল বুধবার সকালে পাকিস্তানে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আল-জাজিরা এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতে চালানো ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান ও ড্রোন হামলাকে ‘অকারণ যুদ্ধ ঘোষণা’ এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের ‘নগ্ন লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে ভারতের আগ্রাসনের জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি)। গতকাল বুধবার দুপুরে ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে, রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের মিসাইল হামলার জবাবে দেশটির পাঁচটি যুদ্ধবিমান ‘ভূপাতিত’ করার দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। গতকাল বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে এ তথ্য জানান তিনি। এছাড়া কয়েকজন ভারতীয় সেনাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটকের দাবিও করেছেন তিনি।
অন্যদিকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানান, ‘ভূপাতিত’ যুদ্ধবিমানের মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি সু-৩০ ও অন্যটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান। সু-৩০ ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সোভিয়েত আমলে তৈরি।
ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ভারতের পাঁচটি বিমান, কয়েকটি মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ড্রোন) ও নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর কিছু ফাঁড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।
ভারত সরকারের বিবৃতি
ভারত সরকারের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, বিবিসি জানিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’- এর মাধ্যমে ভারত প্রত্যাঘাতের অধিকার প্রয়োগ করেছে। পেহেলগামের হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্তপার থেকে আরও সম্ভাব্য হামলা ঠেকানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদী কাঠামো ধ্বংস করাই ছিল এই হামলার উদ্দেশ্য।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত যে প্রত্যাঘাত করেছে, তা পরিমিত, সমানুপাতিক, দায়িত্বশীল ও যা ছড়িয়ে পড়বে না, এমন। ভারতের লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদীদের অবকাঠামো ভেঙে দেওয়া, যাতে সন্ত্রাসীদের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাঠানো ঠেকানো যায়।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, পেহেলগামে হামলায় জড়িতদের শাস্তি ও বিচারের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গত ২৫ এপ্রিল যে বিবৃতি জারি করেছিল, ভারতের এই প্রত্যাঘাতকে সেই আলোতেই দেখতে হবে। গতকাল বুধবার ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনা ও বিমানবাহিনীর দুই নারী কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং।
ওই দুই কর্মকর্তা দাবি করেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে শুরু করে রাত দেড়টা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তের ওপাশে মোট ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ভারতীয় বাহিনী হামলা চালিয়ে ধ্বংস করেছে।
ব্রিফিংয়ে পাকিস্তান অংশে ধ্বংস করা ঘাঁটির ছবিও দেখান কর্মকর্তারা। ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, অপারেশন সিঁদুর কোনো পাকিস্তানি সেনা ঘাঁটির ওপর আক্রমণ করেনি। সাধারণ মানুষকেও নিশানা করা হয়নি। বেছে বেছে নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
সোফিয়া ও ব্যোমিকা দাবি করেন, প্রথম লক্ষ্য ছিল ভাওয়ালপুরের মারকাজ শুবহান আল্লাহ্। সেখানে জইশ-এ-মহম্মদের জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। বিলাল মসজিদে ছিল লস্কর-ই-ইয়েবার প্রশিক্ষণকেন্দ্র। কোটলিতে যেখানে হামলা হয়েছে, তা লস্করের ঘাঁটি। এরা পুঞ্চে খুবই সক্রিয়। এসব ঘাঁটি পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও হামলা চালিয়েছে জানিয়ে সোফিয়া ও ব্যোমিকা আরও দাবি করেন, শিয়ালকোটের যে সার্জাল ক্যাম্পে হামলা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৬ কিলোমিটার ভেতরে।
এ ছাড়া আক্রমণ চালানো হয় মেহমুনা জোয়া ক্যাম্পে। সেটা হিজবুলের শিবির ছিল। এই শিবিরে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীরাই পেহেলগামে হামলা চালিয়েছিল। এই দুই কর্মকর্তা আরও দাবি করেন, লাহোরের কাছে মুরিদকের মারকাজ তৈয়্যেবায় আক্রমণ চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। সেখানেই ২৬-১১ মুম্বাই হামলার সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। আজমল কাসভ ওখানেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন।
বিক্রম মিশ্রি বিবৃতিতে বলেন, পেহেলগামে হামলা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাভাবিক হয়ে আসা কাশ্মীরের পরিস্থিতি ঘোরালো করে তোলা, যাতে পর্যটকেরা না আসেন, অর্থনীতি ধসে পড়ে, উন্নয়নের কাজ থমকে যায়। তা ছাড়া ওই হামলার আরও উদ্দেশ্য ছিল, জম্মু-কাশ্মীরের পাশাপাশি সারা ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে দেওয়া।
বিক্রম মিশ্রি আরও বলেন, টিআরএফ নামে একটি গোষ্ঠী পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছিল। তারা জাতিসংঘের নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তাইয়েবার শাখা। জাতিসংঘে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে ভারত এদের সম্পর্কে নানা তথ্য জমা দিয়েছিল।
এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। রাতের আঁধারে চালানো এই হামলায় কমপক্ষে ৭০ জন নিহত এবং আরও ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এমনই দাবি করেছে ভারত। একইসঙ্গে ভারতের দাবি, নিহতদের সবাই সন্ত্রাসী।
সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, বুধবার ভোরে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ‘৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে’ ২৪টি সুনির্দিষ্ট মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এই অভিযানে লস্কর-ই-তইবা এবং জইশ-ই-মোহাম্মদের শক্ত ঘাঁটি মুরিদকে ও বাহাওয়ালপুরে হামলা করা হয়।
ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাত থেকে পাকিস্তানের কামানের গোলা হামলায় ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৪৩ জন আহত হয়েছেন। ভারতের সেনাবাহিনীর বরাতে বুধবার বিবিসির লাইভে এ কথা বলা হয়েছে। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুঞ্চ ও তাংধরের বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে পাকিস্তান।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ‘প্রতিক্রিয়া’ স্বরূপ ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করেছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এটি লজ্জার। আমরা যখন ওভাল (অফিসের) দরজা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম তখনই আমরা এটি সম্পর্কে শুনেছিলাম। আমি আশা করি এটি খুব দ্রুত শেষ হবে। তারা (ভারত ও পাকিস্তান) দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে। তারা বহু, বহু দশক ধরে লড়াই করছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি (এই পরিস্থিতি) শেষ হবে।’
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান পরিস্থিতিকে তিনি ‘নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন’।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটারে) তিনি লিখেছেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিস্থিতিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি এই পরিস্থিতির দ্রুত শেষ হবে এবং ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্ব একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে যাবে।’
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের বিষয়ে চীন জানিয়েছে, ‘চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ভারত ও পাকিস্তান এমন দুই প্রতিবেশী, যাদের আলাদা করা যায় না এবং তারা চীনের প্রতিবেশীও। চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে।’ এই পরিস্থিতিতে, দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকেই ‘শান্ত’ ও ‘সংযত’ থাকার বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছে চীন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারত-পাকিস্তানের পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি দুই দেশকে সামরিক দিক থেকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তার মুখপাত্র বলেছেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের সামরিক অভিযানের বিষয়ে মহাসচিব খুবই উদ্বিগ্ন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ভার বিশ্ব বহন করতে পারবে না।’
জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেছেন, ‘২২ এপ্রিল কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসবাদী হামলার বিষয়ে জানাতে চাই, আমাদের দেশ এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করে। কিন্তু এই পরিস্থিতি আরও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার দিকে দুই দেশকে পরিচালিত করতে পারে এবং একটি পূর্ণমাত্রার সামরিক সংঘাতের দিকে তারা এগিয়ে যেতে পারে বলে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’ পহেলগাম হামলার ‘জবাবে’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিন্দুর’- এর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রুভেন আজার। ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে রুভেন আজার লিখেছেন, ‘ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইসরায়েল। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করে পার পেয়ে তাদের লুকানোর কোনো জায়গা নেই।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ