ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৫ ০১:১৩ পিএম
প্রতি ৪০ মিনিটে ইসরায়েলি বাহিনী একজন শিশুর প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান আবারও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, আর তার সবচেয়ে নির্মম শিকার হচ্ছে শিশুরা। স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে দমন করতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে নতুন করে শুরু হওয়া হামলায় গড়ে প্রতি ৪০ মিনিটে একজন করে শিশু মারা যাচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছে গাজার স্বশাসিত স্বাস্থ্য দফতর। গত মার্চের শুরুতে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল ফের স্থল অভিযান শুরু করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে এক সাংবাদিক বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র মারওয়ান আল-হামস জানান, এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৬,২৭৮ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে, যাদের মধ্যে ৯০৮ জন কোলের শিশু এবং ৩১১ জন সদ্যোজাত। মৃত্যু শুধু সংখ্যার হিসেব নয়, প্রতিটি শিশুর মৃত্যু এক একটি পরিবারের স্বপ্নের অপমৃত্যু, এক একটি জাতিগত ক্ষয়ের দলিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক আকস্মিক হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। প্রথমে উত্তর গাজা, এরপর মধ্যভূমি, আর এখন দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও রাফা প্রতিটি অঞ্চলেই ধ্বংস আর মৃত্যুর ছাপ রেখে চলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল সব কিছুই পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এমনকি চলমান লড়াইয়ের মধ্যে কোনও মানবিক সহায়তা বা ত্রাণ সামগ্রী ঢুকতে দিচ্ছে না তেল আভিভ। ২ মার্চ থেকে এই অবরোধের ফলে খাদ্য ও পানীয় জল চরমভাবে সংকটজনক হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের প্যালেস্টাইনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এপ্রিলের গোড়ায় এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ১৮ মার্চ থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ জন শিশু আহত বা নিহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি সরকার গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় গাজা পুরোপুরি দখলের লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে পরিস্থিতি।
ইতিমধ্যেই গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই নারী ও শিশু। নেতানিয়াহুর সরকার দাবি করলেও যে তারা হামাস নির্মূলের জন্যই এই অভিযান চালাচ্ছে, বাস্তবে তা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে গণহত্যার সমার্থক বলে আখ্যায়িত করছে।
একটি শিশু যখন মায়ের কোলে মারা যায়, অথবা সদ্যোজাত শিশুর দেহ যখন ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হয়—তা শুধু রাজনৈতিক যুদ্ধের ফল নয়, বরং মানবতা, বিবেক, সভ্যতার অপমান। বিশ্ব যখন গৃহযুদ্ধ, রসদ, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে বিভক্ত, তখন গাজার শিশুরা আমাদের চোখের সামনে এক করুণ ইতিহাস লিখে চলেছে রক্ত ও ধ্বংসস্তূপ দিয়ে। তাদের আর্তনাদ যেন গোটা মানবজাতির নীরবতাকে কাঁপিয়ে তোলে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ