ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫ ০৭:০০ পিএম
পৃথিবীর ঘূর্ণন শক্তি থেকে বিদ্যুৎ তৈরি!
বিদ্যুৎ শক্তি আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে অপরিহার্য সম্পদ। বিদ্যুৎ ছাড়া মানবসভ্যতা কার্যত স্থবির হয়ে পড়বে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রচুর জ্বালানির প্রয়োজন হয়। জ্বালানি-সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি পরিবেশদূষণ কমাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন ধরেই সৌর ও বায়ুশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। জিওথার্মাল তাপ ব্যবহার করেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে অনেক দেশ। তবে প্রাকৃতিক এসব উৎসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এবার পৃথিবীর ঘূর্ণনশক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ক্রিস্টোফার চাইবা এবং তার দল একটি বিশেষ ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা পৃথিবীর ঘূর্ণন শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। যদিও এটি একটি নতুন এবং বিতর্কিত ধারণা, তবুও এটি ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য শক্তির একটি সম্ভাব্য উৎস হয়ে উঠতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।
২০১৬ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে কৌশলটি তেমন গুরুত্ব পায়নি সে সময়। এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরির জন্য সিলিন্ডারযুক্ত একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন। বিজ্ঞানীদের দাবি, যন্ত্রটি পৃথিবীর ঘূর্ণনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।
সম্প্রতি “ফিজিক্যাল রিভিউ রিসার্চ” নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, গবেষণায় ব্যবহৃত ডিভাইসটি একটি দুর্বল ম্যাঙ্গানিজ-জিঙ্ক ফেরাইট কন্ডাক্টর এবং দুটি ইলেকট্রোড নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে ৫৭ ডিগ্রি কোণে স্থাপন করেন, যা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থান করে। পরীক্ষার সময় তারা লক্ষ্য করেন যে, ডিভাইসটি ১৭ মাইক্রোভোল্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এই পরিমাণ খুবই নগণ্য, এটি তবুও একটি নতুন ধরণের শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে। এই গবেষণা সম্পর্কে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মতামত মিশ্র।
রিভিউ রিসার্চ” নামক জার্নালেল আরও প্রকাশ করে, কিছু গবেষক একে একটি আকর্ষণীয় পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন, ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ইউ ক্লেয়ারের পদার্থবিদ পল থমাস বলেছেন, “এই ধারণাটি কিছুটা বিপরীতমুখী এবং বহু বছর ধরে এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।” অন্যদিকে, ২০১৮ সালে অনুরূপ একটি পরীক্ষা চালানো বিজ্ঞানী রিনকে উইজেনগারডেন মনে করেন, “আমি এখনো নিশ্চিত যে চাইবা ও তার দলের তত্ত্ব সঠিক নয়।”
বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে, এই ডিভাইসটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। তবে একে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো কঠিন, কারণ ইলেকট্রনসমূহ পুনর্বিন্যাস হতে পারে এবং এর ফলে উৎপন্ন বিদ্যুৎ কমে যেতে পারে।
চাইবা এবং তার দল দাবি করছেন যে, তারা এমন একটি বিশেষ উপাদান ব্যবহার করেছেন, যা ইলেকট্রনদের পুনর্বিন্যাস প্রতিরোধ করে এবং এর ফলে স্থিরভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব হয়। তবে এখনো গবেষণার অনেক কিছু বাকি আছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রযুক্তিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার জন্য আরও বড় আকারে পরীক্ষা চালানো দরকার। বর্তমানে এই ডিভাইসটি খুব কম পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম, যা বাস্তবে কোনো কাজে লাগানো সম্ভব নয়। তবে যদি এটি বড় পরিসরে কার্যকর হয়, তাহলে এটি ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎস হতে পারে।
এই প্রযুক্তি যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে এটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষকরা হিসাব করে দেখেছেন যে, যদি এই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী বড় আকারে ব্যবহৃত হয়, তাহলে একশো বছরে পৃথিবীর ঘূর্ণন মাত্র সাত মিলিসেকেন্ড কমে যেতে পারে। এটি এমনই এক প্রভাব, যা চাঁদের আকর্ষণের কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণন যে হারে ধীর হয়, তার কাছাকাছি।
ভোরের আকশ/এসআই