অলরাউন্ড কীর্তির মহাকাব্য
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫ ১০:৩১ এএম
বোথামের পাশে মেহেদী হাসান মিরাজ!
ক্রিকেট এমন এক খেলা, যেখানে ব্যাট-বল দুই দিকেই দক্ষতা দেখানো খুব কম ক্রিকেটারের পক্ষেই সম্ভব হয়। আর সেই অলরাউন্ড কীর্তিকে যদি আরও একধাপ ওপরে নিতে হয়, তবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট কিংবা এক সিরিজে সেঞ্চুরি ও ম্যাচে ১০ উইকেটের মতো কীর্তির কথা বলতে হয়। এই কীর্তিগুলোর তালিকা ছোট অত্যন্ত ছোট। সেই তালিকায় এবার জ্বলজ্বল করে জ্বলছে এক নতুন নাম মেহেদী হাসান মিরাজ।
একই দিনে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট, ইয়ান বোথামের পাশে মিরাজ : চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনটা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে গর্বের অধ্যায় হয়ে থাকবে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাট হাতে তুলে নেন নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি, এরপর বল হাতে নেন পাঁচ উইকেট। এর মধ্য দিয়ে মিরাজ হয়ে উঠলেন ইয়ান বোথাম-এর পর মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড়, যিনি টেস্টে একই দিনে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেওয়ার অসাধারণ কীর্তি গড়লেন। ইয়ান বোথাম এই কীর্তি গড়েছিলেন ১৯৮০ সালে, হেডিংলিতে ভারতের বিপক্ষে। সেই কীর্তি এতদিন ছিল একেবারেই অনন্যসাধারণ ও একক। দীর্ঘ সময় পর সেই কীর্তিতে দ্বিতীয় নাম হিসেবে যোগ হলো মিরাজের।
এক সিরিজে সেঞ্চুরি ও ম্যাচে ১০ উইকেট: ইতিহাসে সপ্তম : সিলেট টেস্টে বল হাতে ১০ উইকেট নেওয়ার পর চট্টগ্রামে ব্যাটে সেঞ্চুরি এর ফলে আরেকটি বিরল কীর্তির অংশ হয়ে গেলেন মিরাজ। টেস্ট ইতিহাসে মাত্র সপ্তম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি গড়েছেন এক সিরিজে সেঞ্চুরি ও ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার অনন্য রেকর্ড। এই বিরল কীর্তির সূচনা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। প্রয়াত ইংলিশ অলরাউন্ডার টনি গ্রেগ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পরপর দুটি টেস্টে করেছিলেন সেঞ্চুরি, আর সিরিজের শেষ টেস্টে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। এরপর ইতিহাসে আসা আরও ছয় অলরাউন্ডার হলেন। ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড), রিচার্ড হ্যাডলি (নিউজিল্যান্ড), ইমরান খান (পাকিস্তান), ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান), সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ), মেহেদী হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ) এই সাত ক্রিকেটার মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ১১ বার এই বিরল কীর্তি দেখা গেছে।
এই অলরাউন্ড মহাতারকাদের কীর্তিতে কারা এগিয়ে : ইয়ান বোথাম একাই তিনবার এই কীর্তি গড়েছেন এক সিরিজে সেঞ্চুরি এবং ম্যাচে ১০ উইকেট। ইমরান খান ও ওয়াসিম আকরাম করেছেন দুবার করে। অন্যরা একবার করে এই অলরাউন্ড মাইলফলক স্পর্শ করেছেন।
এক ম্যাচেই সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট, স্বপ্নের সীমা ছুঁয়ে যাওয়া : এই অলরাউন্ড কীর্তির ভেতরেও সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য ঘটনা হচ্ছে একই টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নেওয়া। ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন খেলোয়াড় এই অনন্য কীর্তি গড়তে পেরেছেন: ইয়ান বোথাম ১৯৮০, হেডিংলি টেস্টে প্রতিপক্ষ ভারত, ইমরান খান ১৯৮৩, ভারতের বিপক্ষে। সাকিব আল হাসান ২০১৪, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, খুলনা টেস্ট। এবার সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় উঠে এলো আরও একটি নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। যদিও তিনি এই ম্যাচে ১০ উইকেট পাননি, কিন্তু পুরো সিরিজ জুড়ে তার অবদান এতটাই পূর্ণতা পেয়েছে যে তিনি টেস্ট ক্রিকেটের অলরাউন্ড রত্নদের শ্রেণিতে জায়গা করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য গর্বের মুহূর্ত: বাংলাদেশ ক্রিকেট এমন এক সময় পার করছে, যেখানে অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে তরুণদের পারফরম্যান্সও দলকে ভরসা জোগাচ্ছে। সাকিবের পর মেহেদী হাসান মিরাজের এই কীর্তি প্রমাণ করে, বাংলাদেশ শুধু ব্যাটিং বা বোলিংয়ে নয়, অলরাউন্ড শক্তির ক্ষেত্রেও এখন বিশ্ব ক্রিকেটে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। ক্রিকেটে এমন অলরাউন্ড কীর্তিগুলো শুধুই পরিসংখ্যান নয় এগুলো আত্মবিশ্বাস, সামর্থ্য ও নিঃসীম প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। মিরাজের এই অর্জন হয়তো ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণার এক শক্ত ভিত হয়ে থাকবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
অলরাউন্ড কীর্তির মহাকাব্য
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ ঘন্টা আগে
আপডেট : ১৫ ঘন্টা আগে
বোথামের পাশে মেহেদী হাসান মিরাজ!
ক্রিকেট এমন এক খেলা, যেখানে ব্যাট-বল দুই দিকেই দক্ষতা দেখানো খুব কম ক্রিকেটারের পক্ষেই সম্ভব হয়। আর সেই অলরাউন্ড কীর্তিকে যদি আরও একধাপ ওপরে নিতে হয়, তবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট কিংবা এক সিরিজে সেঞ্চুরি ও ম্যাচে ১০ উইকেটের মতো কীর্তির কথা বলতে হয়। এই কীর্তিগুলোর তালিকা ছোট অত্যন্ত ছোট। সেই তালিকায় এবার জ্বলজ্বল করে জ্বলছে এক নতুন নাম মেহেদী হাসান মিরাজ।
একই দিনে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট, ইয়ান বোথামের পাশে মিরাজ : চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনটা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে গর্বের অধ্যায় হয়ে থাকবে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাট হাতে তুলে নেন নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি, এরপর বল হাতে নেন পাঁচ উইকেট। এর মধ্য দিয়ে মিরাজ হয়ে উঠলেন ইয়ান বোথাম-এর পর মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড়, যিনি টেস্টে একই দিনে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেওয়ার অসাধারণ কীর্তি গড়লেন। ইয়ান বোথাম এই কীর্তি গড়েছিলেন ১৯৮০ সালে, হেডিংলিতে ভারতের বিপক্ষে। সেই কীর্তি এতদিন ছিল একেবারেই অনন্যসাধারণ ও একক। দীর্ঘ সময় পর সেই কীর্তিতে দ্বিতীয় নাম হিসেবে যোগ হলো মিরাজের।
এক সিরিজে সেঞ্চুরি ও ম্যাচে ১০ উইকেট: ইতিহাসে সপ্তম : সিলেট টেস্টে বল হাতে ১০ উইকেট নেওয়ার পর চট্টগ্রামে ব্যাটে সেঞ্চুরি এর ফলে আরেকটি বিরল কীর্তির অংশ হয়ে গেলেন মিরাজ। টেস্ট ইতিহাসে মাত্র সপ্তম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি গড়েছেন এক সিরিজে সেঞ্চুরি ও ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার অনন্য রেকর্ড। এই বিরল কীর্তির সূচনা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। প্রয়াত ইংলিশ অলরাউন্ডার টনি গ্রেগ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পরপর দুটি টেস্টে করেছিলেন সেঞ্চুরি, আর সিরিজের শেষ টেস্টে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। এরপর ইতিহাসে আসা আরও ছয় অলরাউন্ডার হলেন। ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড), রিচার্ড হ্যাডলি (নিউজিল্যান্ড), ইমরান খান (পাকিস্তান), ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান), সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ), মেহেদী হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ) এই সাত ক্রিকেটার মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ১১ বার এই বিরল কীর্তি দেখা গেছে।
এই অলরাউন্ড মহাতারকাদের কীর্তিতে কারা এগিয়ে : ইয়ান বোথাম একাই তিনবার এই কীর্তি গড়েছেন এক সিরিজে সেঞ্চুরি এবং ম্যাচে ১০ উইকেট। ইমরান খান ও ওয়াসিম আকরাম করেছেন দুবার করে। অন্যরা একবার করে এই অলরাউন্ড মাইলফলক স্পর্শ করেছেন।
এক ম্যাচেই সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট, স্বপ্নের সীমা ছুঁয়ে যাওয়া : এই অলরাউন্ড কীর্তির ভেতরেও সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য ঘটনা হচ্ছে একই টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নেওয়া। ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন খেলোয়াড় এই অনন্য কীর্তি গড়তে পেরেছেন: ইয়ান বোথাম ১৯৮০, হেডিংলি টেস্টে প্রতিপক্ষ ভারত, ইমরান খান ১৯৮৩, ভারতের বিপক্ষে। সাকিব আল হাসান ২০১৪, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, খুলনা টেস্ট। এবার সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় উঠে এলো আরও একটি নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। যদিও তিনি এই ম্যাচে ১০ উইকেট পাননি, কিন্তু পুরো সিরিজ জুড়ে তার অবদান এতটাই পূর্ণতা পেয়েছে যে তিনি টেস্ট ক্রিকেটের অলরাউন্ড রত্নদের শ্রেণিতে জায়গা করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য গর্বের মুহূর্ত: বাংলাদেশ ক্রিকেট এমন এক সময় পার করছে, যেখানে অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে তরুণদের পারফরম্যান্সও দলকে ভরসা জোগাচ্ছে। সাকিবের পর মেহেদী হাসান মিরাজের এই কীর্তি প্রমাণ করে, বাংলাদেশ শুধু ব্যাটিং বা বোলিংয়ে নয়, অলরাউন্ড শক্তির ক্ষেত্রেও এখন বিশ্ব ক্রিকেটে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। ক্রিকেটে এমন অলরাউন্ড কীর্তিগুলো শুধুই পরিসংখ্যান নয় এগুলো আত্মবিশ্বাস, সামর্থ্য ও নিঃসীম প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। মিরাজের এই অর্জন হয়তো ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণার এক শক্ত ভিত হয়ে থাকবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ