সাফ অনূধ্ব-১৭ নারী ফুটবল
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫ ০৮:৩৪ পিএম
সংগৃহীত ছবি
ভুটানের চ্যাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে রোববার (৩১ আগস্ট) দেখা গেল দুর্দান্ত এক লড়াই। সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে আগেই শিরোপা নিশ্চিত করা ভারতকে রোমাঞ্চকর ম্যাচে ৪-৩ গোলে হারাল বাংলাদেশ। এই জয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করল রানার্সআপ হয়ে। খেলা শুরুর বাঁশি বাজতেই ঘড়ির কাঁটায় ছিল মাত্র ৩০ সেকেন্ড। কিক অফ থেকে ডান দিক দিয়ে দ্রুত আক্রমণে উঠে মামনি চাকমা নিখুঁত ক্রস পাঠান বক্সে। সেখান থেকে দুর্দান্ত বুলেট গতির হেডে জাল খুঁজে নেন পুর্ণিমা মারমা। তৈরি করেন টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দ্রুততম গোলের রেকর্ড। এতদিন রেকর্ডটি ছিল ভারতের মেনাকা লৌরেমবামের দখলে, যিনি ২০২৩ আসরে ভুটানের বিপক্ষে তৃতীয় মিনিটে গোল করেছিলেন।
প্রথম গোল হজমের পর ভারত আক্রমণ সাজাতে শুরু করে। সপ্তম মিনিটে আনুশকা কুমারির শট ক্রসবার কাঁপিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। দুই মিনিট পর ক্যাপ্টেন অর্পিতা বিশ্বাসের ভুলে বল হারিয়ে সমতায় ফেরে ভারত। দ্রুত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোলকিপারকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে গোল করেন আনুশকা।
প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের আক্রমণ থেকে ফের গোল আসে। ৩৪তম মিনিটে সৌরভী আকন্দ প্রীতির শট ফিরিয়ে দেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার, কিন্তু আলপি আক্তার ফিরতি শটে বল পাঠান জালে। বিরতির ঠিক আগে আনুশকার ফ্রি কিক পোস্টে লেগে ফিরে এলে স্বস্তি পায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান বাড়ায় বাংলাদেশ। সতীর্থের লং পাস ধরে বক্সে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় গোল করেন প্রীতি। স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-১। কিন্তু ভারতও থেমে থাকেনি। ৬৪তম মিনিটে প্রীতিকা বর্মণ দারুণ এক চিপ শটে ব্যবধান কমান (৩-২)। ৭৬তম মিনিটে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পান প্রীতি। রক্ষণের ফাঁক গলে একেবারে গোলকিপারের সামনে চলে গিয়েছিলেন। তবে প্রথম টাচে বল নিয়ন্ত্রণ হারালে সুযোগ হাতছাড়া হয়। কয়েক মিনিট পর তার আরেকটি শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট বাকি থাকতে ভারতের নঙ্গমাইথেম বক্সের বাইরে থেকে উঁচু করে শট নেন। বাংলাদেশ গোলকিপার মেঘলা রানী রায় সামনে বেরিয়ে আসায় লাফিয়ে ধরতে পারেননি বল। ফলে ম্যাচে ফের সমতায় ফেরে ভারত (৩-৩)। তবে বাংলাদেশের মেয়েরা শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়েনি। পাল্টা আক্রমণে গোলরক্ষকের ভুলের সুযোগ নিয়ে আবারও জালের দেখা পান প্রীতি। তার দ্বিতীয় গোলেই ম্যাচ শেষ হয় ৪-৩ ব্যবধানে।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট শেষ করল রানার্সআপ হয়ে। মোট ছয় ম্যাচে চার জয় ও এক ড্রয়ে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৩ পয়েন্টে। শুরুতে ভুটানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ ফিরতি ম্যাচে তাদের সঙ্গে খেলেছিল ১-১ ড্র। নেপালের বিপক্ষে জয় এসেছিল দুইবার ২-০ ও ৪-১ ব্যবধানে।
তবে আগের ম্যাচে ভারতের কাছে ২-০ গোলে হেরে শিরোপার আশা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। ভারত আগেই নেপালকে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেছিল। তবু শেষ ম্যাচে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরল মাহবুবুর রহমান লিটুর শিষ্যারা।
পূর্ণিমার দ্রুততম গোল, প্রীতির জোড়া আঘাত আর দলীয় লড়াই সব মিলিয়ে ম্যাচটি হয়ে উঠেছে স্মরণীয়। শিরোপা না জিতলেও ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রমাণ করল, তারা এখন দক্ষিণ এশীয় ফুটবলে এক শক্তিশালী শক্তি হয়ে উঠছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ