ভারত-পাকিস্তান বিরোধ
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৫ ০১:০৬ পিএম
দুশ্চিন্তায় বিসিবি-বাফুফে
ভারত-পাকিস্তান বিরোধে বাংলাদেশের ক্রিকেট-ফুটবলে কালো মেঘ। ভারত-পাকিস্তান আরেকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানে ভারতের সামরিক হামলার পর ইসলামাবাদের দাবি, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
এদিকে জিও নিউজের খবর, পাকিস্তান সরকার তাদের সেনাবাহিনীকে ভারতের আগ্রাসনের দাঁতভাঙা জবাব দিতে সবুজ সংকেত দিয়েছে। সব মিলিয়ে চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী দেশ আবারও যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। ভারত-পাকিস্তানের রণহুংকার এবং আক্রমণ-পালটা আক্রমণ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। চলমান পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলছেন বাংলাদেশের লেগ-স্পিনার রিশাদ হোসেন (লাহোর কালান্দার্স) ও পেসার নাহিদ রানা (পেশোয়ার জালমি)।
এদিকে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল চ্যাম্পিয়শিপে অংশ নিতে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে গত মঙ্গলবার পৌঁছেছে বাংলাদেশ যুব দল। কাশ্মীরে যুদ্ধ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে যুব ফুটবল দল এবং পাকিস্তানে রিশাদ ও নাহিদের নিরাপত্তা নিয়ে সংগত কারণেই চিন্তিত বাফুফে ও বিসিবি।
বিসিবি কাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। পাকিস্তান সুপার লিগে খেলতে যাওয়া বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা ও ভালো থাকাই এই মুহূর্তে বিসিবির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন ও নাহিদ রানার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে বিসিবির। বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ নিজে ঘটনার বিস্তারিত খোঁজ রাখছেন এবং তাদের নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তি নিশ্চিত করতে পিএসএলের প্রধান নির্বাহী সালমান নাসির ও রিশাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন।
পাকিস্তান সফর নিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা এখনো অপেক্ষা করছি। পরিস্থিতি কীভাবে এগোয়, সেটা দেখার জন্য আরও তিন-চার দিন সময় নিতে পারি। আর এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান উদ্বেগ হলো আমাদের দুই ক্রিকেটার নাহিদ রানা ও রিশাদ হোসেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই এখন সবচেয়ে জরুরি। পিএসএলের ফাইনাল ১৮ মে। বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরে যাওয়ার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি টি ২০ ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে।
বিসিবির সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানের পরিস্থিতি খারাপ থাকলে তাদের সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজটি খেলার প্রস্তাব দেবে বিসিবি। সূচি অনুযায়ী ২১ মে পাকিস্তানে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ দলের।এদিকে বাফুফেও যুব ফুটবল দলের নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছে।
বাফুফের সহ-সভাপতি ও ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাদেহী বলেন, যেখানে যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেখান থেকে অরুণাচল অনেক দূরে। এখন পর্যন্ত যুদ্ধের কোনো প্রভাব এদিকে পড়েনি। তারপরও আমরা সতর্ক নজর রাখছি। কারণ, যুদ্ধ পরিস্থিতি যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় সমস্যা তৈরি করতে পারে। তিনি যোগ করেন, ছেলেদের দিকে আমাদের নজর আছে। প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত সব কিছু স্বাভাবিক।’ টুর্নামেন্টে এ-গ্রুপে শুক্রবার মালদ্বীপ ও রোববার ভুটানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
শঙ্কায় নারী বিশ্বকাপ: গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তার পর থেকেই উত্তেজনার শুরু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। তবে তা এতদিন বর্ডারে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর মধ্যে আর মিডিয়াতে একে ওপরের ওপর দোষারোপ চাপানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে গেল পরশু থেকে প্রতিবেশি দুই দেশ বেশ জোরেশোরেই লিপ্ত হয়েছে সামরিক সংঘাতে। বাংলাদেশ সময় ৬ মে দিবাগত রাত পাকিস্তানের ৯ জায়গায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ভারত। পালটা প্রতিঘাত এসেছে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও।
এ সংঘাতে পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন এবং ভারতে ১০ জন মারা গেছে। এমন হামলায় দুই দেশেই পরিস্থিতি থমথমে। যে কোনো সময় আর বড় হামলার ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই দুই দেশের এমন সংঘাতের প্রভাব পড়তে পারে খেলার মাঠেও। শঙ্কা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের দুটি দ্বীপাক্ষিক সিরিজসহ চলতি বছর ভারতে বসতে যাওয়া নারী বিশ্বকাপ নিয়ে। ভাবাচ্ছে আগামী বছরে বসতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। তবে শুধু ক্রিকেট নয়, আরো অনেক টুর্নামেন্ট নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তার মধ্যে অন্যতম আগামী বছরের শুরুতে পাকিস্তানে বসতে যাওয়া সাফ গেমস নিয়ে। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন এই সংকটে যে আরো ভয়াবহ তিক্ত সম্পর্কের রূপ ধারণ করবে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রীড়াঙ্গনে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই সংকট দীর্ঘায়িত হলে উপমহাদেশের পুরো ক্রীড়াঙ্গন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে; যা প্রভাব ফেলবে গোটা বিশ্বে।
এর মধ্যে চলতি বছর ও আগামী বছর ভারতে বসবে দুটি বিশ্বকাপ। এমন পরিস্থিতিতে খেলা মাঠে গড়াবে কি না, তা নিয়ে ভাবাচ্ছে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে। দুই দেশেই বর্তমানে চলছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট। ভারতে আইপিএল ও পাকিস্তানে চলছে পিএসএল। যেখানে অংশ নিতে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটাররা দেশ দুটিতে অবস্থান করছে। তবে বর্তমান সংঘাতে নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়েই তাদের সেখানে অবস্থান করার পাশাপাশি খেলতে হচ্ছে। হয়তো তাদের মনে ভয় রয়েছে, যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারার।
এদিকে এ মাসের শেষ দিকে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। ইতিমধ্যে টাইগাররা অনুশীলন শুরু করেছে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। আগামী ১৭ ও ১৯ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, সূচি অনুযায়ী ম্যাচ দুটি খেলে সেখান থেকেই বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে যাবে পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলতে। ২৫, ২৭ ও ৩০ মে এবং ১ ও ৩ জুন লাহোর আর ফয়সালাবাদে হবে ম্যাচগুলো।
স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কা জেগেছে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর। বর্তমান উত্তাল পরিস্থিতিতে ক্রিকেটারদের প্রাণঝুঁকি নিয়ে দেশটিতে পাঠানো উচিত হবে কি না, তা নিয়েই রয়েছে ভাবনা। যদিও পরিস্থিতি গভীরভাবেই পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে বিসিবি। তাদের চোখে ঝুঁকি মনে হলে হয়তো থামতে দিতে পারে লিটন দাসদের পাকিস্তান সফর।
অন্যদিকে চলমান সংঘাতে আগামী আগস্ট ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে শঙ্কা আরো বেড়ে গিয়েছে। যদিও এ নিয়ে গেল সপ্তাহ থেকেই চলছিল আলোচনা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ নিয়ে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, আন্তঃসীমান্ত উত্তেজনা উপমহাদেশের ক্রিকেট সূচি ব্যাহত করতে পারে, এর ছায়া পড়তে পারে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজেও।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, এমন একটি সূত্রের বক্তব্য দিয়ে জানিয়েছিল, ‘সফরটি সূচির (এফটিপি) অংশ হলেও কিছুই চূড়ান্ত নয়। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ভারতের বাংলাদেশ সফর না-ও হতে পারে। এমন সম্ভাবনাই বেশি।’ যদিও বিসিবি থেকে এ গুঞ্জনটিকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ভোরের আকাশ/এসএইচ