চট্টগ্রাম টেস্ট
রাজীব দাস
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৩২ এএম
সাদমানের সেঞ্চুরির পরেও শেষের অস্বস্তিতে টাইগাররা
টেস্ট ক্রিকেটে অপেক্ষার ফল যে কতটা মধুর হতে পারে, তার উদাহরণ হয়ে উঠলেন সাদমান ইসলাম। প্রায় ২৮ মাসের দীর্ঘ খরা কাটিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনারদের ঘর থেকে এলো বহু প্রতীক্ষিত সেঞ্চুরি। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে তার সেঞ্চুরিতে ভর করে লিডও নিয়েছে বাংলাদেশ, তবে শেষ বিকেলের ১৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে সেই আনন্দে খানিকটা ছায়া পড়েছে।
জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ইতি মাত্র এক বলে, তাইজুলের স্পিন ঝড় : টেস্টের প্রথম দিনই জিম্বাবুয়ে ব্যাটিংয়ে ধসে পড়ে। দিনের শেষে ৯ উইকেটে ২২৭ রান নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা। দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নামতে না নামতেই, মাত্র একটি বল খেলেই শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম সেই এক বলেই তুলে নেন শেষ উইকেট। এই ইনিংসে তাইজুল ছিলেন অনবদ্য। ২৭.১ ওভার বোলিং করে মাত্র ৬০ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৬টি উইকেট। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন নাঈম হাসান (২টি) ও অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা তরুণ পেসার তানজিম সাকিব (১টি)।
অসাধারণ ওপেনিং, বিজয়-সাদমান জুটিতে উড়ন্ত শুরু : জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। এনামুল হক বিজয় প্রায় তিন বছর পর টেস্ট দলে ফিরেছেন, আর সাদমান খেলছেন ফর্মে ফেরার লক্ষ্যে। এই দুই ওপেনার মিলে ২৬ ওভার ব্যাট করে তোলে ১০৫ রান, যা ছিল দীর্ঘদিন পর ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি অবশ্যই আত্মবিশ্বাসের বড় উৎস। এনামুল ৩৯ রান করে এলবিডব্লিউ হন ব্লেসিং মুজারাবানির বলে। তবে ফিরে যাওয়ার আগে তিনিও নিজের দায়িত্বটা বেশ ভালোভাবেই পালন করেছেন। টেস্টে এটি ছিল তার সর্বোচ্চ ইনিংস।
সাদমানের ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ ইনিংস : সময়ের দাবি মেটালেন- ওপেনার সাদমান ইসলাম ছিলেন পুরো ইনিংসে দারুণ নিয়ন্ত্রিত, পরিণত ও আত্মবিশ্বাসী। প্রথম সেশনেই তিনি তুলে নেন ফিফটি। নিয়মিত বিরতিতে বাউন্ডারি খেলেছেন, ড্রাইভগুলো ছিল নিখুঁত। দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল হককে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ৭৬ রানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি। তার শতরান আসে ১৪২ বলে, যা ছিল তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। প্রথমটি করেছিলেন ২০২১ সালে হারারেতে, একই দলের বিপক্ষেই। দীর্ঘ ২৮ মাস পর ওপেনিংয়ে শতরানের ইনিংস এনে বাংলাদেশকে টেনেছেন সাদমান। তিনি থেমেছেন ১২০ রানে, বেনেটের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। এর মধ্য দিয়েই পেরিয়ে গেছেন টেস্ট ক্যারিয়ারে ১ হাজার রানের মাইলফলক।
মাঝপথে ধস : পরপর আউট সাদমান-মুমিনুল, শান্ত-মুশফিকও ফিরেছেনÑ সাদমান আউট হওয়ার পরপরই ফিরে যান মুমিনুল হক (৩৩), যিনি আগের জুটিতে ভালো ব্যাট করছিলেন। এরপর দলীয় ২৩৪ রানে আউট হন শান্ত (২৩)। অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিমও রানআউট হয়ে ফেরেন ৪০ রানে। এই চার উইকেটের ধাক্কা ছিল ইনিংসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। এছাড়া, তরুণ উইকেটরক্ষক জাকের আলী ৫ রান করে ফিরলে ইনিংসের ভরসা হয়ে রয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। দিন শেষ করেন ১৬ রানে অপরাজিত থেকে। তার সঙ্গে রয়েছেন তাইজুল ইসলাম (৫*)।
শেষ সেশনে ধাক্কা, তবু লিডে স্বস্তি : দিনের শেষ সেশনে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ২০৫ রানে ছিল। কিন্তু দিন শেষে স্কোর দাঁড়িয়েছে ৭ উইকেটে ২৯১। অর্থাৎ মাত্র ৮৬ রানে হারিয়েছে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। যদিও এই ইনিংসেও লিড এসেছে ৬৪ রানের, তবে বাংলাদেশ আরও বড় লিড নিতে পারত যদি শেষ সেশনে এতটা ধস না হতো।
অবস্থান বিশ্লেষণ ও আগামী পরিকল্পনা : বাংলাদেশের লিড যথেষ্ট হলেও, ইনিংসের গতি আর উইকেট হারানোর বিষয়টি ভাবাচ্ছে। তৃতীয় দিন মিরাজ ও তাইজুলকে দায়িত্ব নিতে হবে লোয়ার অর্ডার থেকে রান বের করে নেওয়ার। অন্যদিকে, বোলিং ইউনিট যেভাবে জিম্বাবুয়েকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, সেটা আবার কাজে লাগাতে হবে দ্বিতীয় ইনিংসেও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস : ২২৭ (তাইজুল ৬/৬০)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২৯১/৭ (সাদমান ১২০, মুশফিক ৪০, বিজয় ৩৯)
বাংলাদেশ লিড : ৬৪ রান
ক্রিজে : মেহেদী হাসান মিরাজ ১৬*, তাইজুল ইসলাম ৫*
ভোরের আকাশ/এসএইচ
চট্টগ্রাম টেস্ট
রাজীব দাস
প্রকাশ : ৪ ঘন্টা আগে
আপডেট : ৪ ঘন্টা আগে
সাদমানের সেঞ্চুরির পরেও শেষের অস্বস্তিতে টাইগাররা
টেস্ট ক্রিকেটে অপেক্ষার ফল যে কতটা মধুর হতে পারে, তার উদাহরণ হয়ে উঠলেন সাদমান ইসলাম। প্রায় ২৮ মাসের দীর্ঘ খরা কাটিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনারদের ঘর থেকে এলো বহু প্রতীক্ষিত সেঞ্চুরি। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে তার সেঞ্চুরিতে ভর করে লিডও নিয়েছে বাংলাদেশ, তবে শেষ বিকেলের ১৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে সেই আনন্দে খানিকটা ছায়া পড়েছে।
জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ইতি মাত্র এক বলে, তাইজুলের স্পিন ঝড় : টেস্টের প্রথম দিনই জিম্বাবুয়ে ব্যাটিংয়ে ধসে পড়ে। দিনের শেষে ৯ উইকেটে ২২৭ রান নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা। দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নামতে না নামতেই, মাত্র একটি বল খেলেই শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম সেই এক বলেই তুলে নেন শেষ উইকেট। এই ইনিংসে তাইজুল ছিলেন অনবদ্য। ২৭.১ ওভার বোলিং করে মাত্র ৬০ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৬টি উইকেট। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন নাঈম হাসান (২টি) ও অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা তরুণ পেসার তানজিম সাকিব (১টি)।
অসাধারণ ওপেনিং, বিজয়-সাদমান জুটিতে উড়ন্ত শুরু : জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। এনামুল হক বিজয় প্রায় তিন বছর পর টেস্ট দলে ফিরেছেন, আর সাদমান খেলছেন ফর্মে ফেরার লক্ষ্যে। এই দুই ওপেনার মিলে ২৬ ওভার ব্যাট করে তোলে ১০৫ রান, যা ছিল দীর্ঘদিন পর ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি অবশ্যই আত্মবিশ্বাসের বড় উৎস। এনামুল ৩৯ রান করে এলবিডব্লিউ হন ব্লেসিং মুজারাবানির বলে। তবে ফিরে যাওয়ার আগে তিনিও নিজের দায়িত্বটা বেশ ভালোভাবেই পালন করেছেন। টেস্টে এটি ছিল তার সর্বোচ্চ ইনিংস।
সাদমানের ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ ইনিংস : সময়ের দাবি মেটালেন- ওপেনার সাদমান ইসলাম ছিলেন পুরো ইনিংসে দারুণ নিয়ন্ত্রিত, পরিণত ও আত্মবিশ্বাসী। প্রথম সেশনেই তিনি তুলে নেন ফিফটি। নিয়মিত বিরতিতে বাউন্ডারি খেলেছেন, ড্রাইভগুলো ছিল নিখুঁত। দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল হককে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ৭৬ রানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি। তার শতরান আসে ১৪২ বলে, যা ছিল তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। প্রথমটি করেছিলেন ২০২১ সালে হারারেতে, একই দলের বিপক্ষেই। দীর্ঘ ২৮ মাস পর ওপেনিংয়ে শতরানের ইনিংস এনে বাংলাদেশকে টেনেছেন সাদমান। তিনি থেমেছেন ১২০ রানে, বেনেটের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। এর মধ্য দিয়েই পেরিয়ে গেছেন টেস্ট ক্যারিয়ারে ১ হাজার রানের মাইলফলক।
মাঝপথে ধস : পরপর আউট সাদমান-মুমিনুল, শান্ত-মুশফিকও ফিরেছেনÑ সাদমান আউট হওয়ার পরপরই ফিরে যান মুমিনুল হক (৩৩), যিনি আগের জুটিতে ভালো ব্যাট করছিলেন। এরপর দলীয় ২৩৪ রানে আউট হন শান্ত (২৩)। অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিমও রানআউট হয়ে ফেরেন ৪০ রানে। এই চার উইকেটের ধাক্কা ছিল ইনিংসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। এছাড়া, তরুণ উইকেটরক্ষক জাকের আলী ৫ রান করে ফিরলে ইনিংসের ভরসা হয়ে রয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। দিন শেষ করেন ১৬ রানে অপরাজিত থেকে। তার সঙ্গে রয়েছেন তাইজুল ইসলাম (৫*)।
শেষ সেশনে ধাক্কা, তবু লিডে স্বস্তি : দিনের শেষ সেশনে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ২০৫ রানে ছিল। কিন্তু দিন শেষে স্কোর দাঁড়িয়েছে ৭ উইকেটে ২৯১। অর্থাৎ মাত্র ৮৬ রানে হারিয়েছে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। যদিও এই ইনিংসেও লিড এসেছে ৬৪ রানের, তবে বাংলাদেশ আরও বড় লিড নিতে পারত যদি শেষ সেশনে এতটা ধস না হতো।
অবস্থান বিশ্লেষণ ও আগামী পরিকল্পনা : বাংলাদেশের লিড যথেষ্ট হলেও, ইনিংসের গতি আর উইকেট হারানোর বিষয়টি ভাবাচ্ছে। তৃতীয় দিন মিরাজ ও তাইজুলকে দায়িত্ব নিতে হবে লোয়ার অর্ডার থেকে রান বের করে নেওয়ার। অন্যদিকে, বোলিং ইউনিট যেভাবে জিম্বাবুয়েকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, সেটা আবার কাজে লাগাতে হবে দ্বিতীয় ইনিংসেও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস : ২২৭ (তাইজুল ৬/৬০)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২৯১/৭ (সাদমান ১২০, মুশফিক ৪০, বিজয় ৩৯)
বাংলাদেশ লিড : ৬৪ রান
ক্রিজে : মেহেদী হাসান মিরাজ ১৬*, তাইজুল ইসলাম ৫*
ভোরের আকাশ/এসএইচ