ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫ ০৫:১২ এএম
সারা রাত ইবাদতের সওয়াব পেতে পারেন যেসব আমল পালন করে
রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহভীরু মুমিনদের জন্য এক বিরাট উত্তম কাজ এবং এতে রয়েছে অগণিত সওয়াব। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বারবার রাতের ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, "রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটি তোমার অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করি তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থান মাকামে মাহমুদে।" (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ৭৯)।
তবে সবাই কি প্রতিরাতে দীর্ঘ সময় নামাজ কায়েম করতে পারেন? না, অনেক সময় শরীর ও দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার কারণে তা সম্ভব হয় না। তাই আল্লাহ তা’আলা সহজ ও কার্যকর কিছু আমল বর্ণনা করেছেন, যেগুলো পালন করলে সারা রাত ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়।
নিচে সেসব আমল তুলে ধরা হলো—
১. ফজর ও এশার নামাজ জামাতে আদায় করা
উসমান ইবনু আফফান (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতে আদায় করে, তার জন্য অর্ধরাত্রির নামাজের সওয়াব লেখা হয়। আর যে ব্যক্তি এশা ও ফজর দুই নামাজ জামাতে আদায় করে, তার জন্য পুরো রাত নামাজে কাটানোর সওয়াব লিপিবদ্ধ হয়। (তিরমিজি, হাদিস: ২২১)
২. রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করা
আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। (বুখারি, হাদিস: ৪০০৮) ইমাম নববি (রহ.) বলেন, এটি সারা রাত ইবাদতের সওয়াব অর্জনের জন্য যথেষ্ট।
৩. রাতে একশ আয়াত তিলাওয়াত করা
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে একশ আয়াত পাঠ করবে, তার আমলনামায় রাতভর ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে। (ইবনে খুজাইমাহ, হাদিস: ১১৪২)
৪. উত্তম চরিত্র ও ভদ্র স্বভাব ধারণ করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শরিয়তের ওপর আমলকারী মুসলমান তার ভদ্রতা ও উত্তম চরিত্রের জন্য সেই মর্যাদা পায়, যা তার সমান, যে রাতে দীর্ঘ সময় কোরআন তিলাওয়াত করে ও দিনে অধিক রোজা রাখে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৬৬৪৮) আয়েশা (রা.) বলেন, উত্তম চরিত্রে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি রোজাদার ও রাতভর নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা পায়। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৯৮)
৫. বিধবা ও দরিদ্রদের সাহায্য করা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, বিধবা ও মিসকিনদের সাহায্যকারী আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো মর্যাদা পায়, যা দিনের রোজাদার ও রাতভর নামাজী ব্যক্তির সমতুল্য। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৫৩)
৬. সীমান্ত পাহারা দেওয়া
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, আল্লাহর পথে এক রাত সীমানা পাহারা দেওয়া এক মাসের রোজা ও নামাজের চেয়ে উত্তম। এমন প্রহরী মারা গেলে জান্নাত থেকে তার জন্য রিজিক আসতে থাকে এবং সে কবরের শাস্তি থেকে মুক্ত থাকে। (মুসলিম, হাদিস: ১৯১৩)
৭. তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমানো
আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমায় কিন্তু ঘুমের কারণে উঠতে না পারে, তার জন্য নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব লেখা হয়। আল্লাহ তার ঘুমকেও সদকারূপে গ্রহণ করবেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১৭৮৭)
রাতভর ইবাদত করা সবার পক্ষে সম্ভব না হলেও নিয়ত ও সাধ্য অনুযায়ী কিছু আমল পালন করলেই আল্লাহর কাছ থেকে বিরাট সওয়াব পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও কিছু সময় আল্লাহর স্মরণে ব্যয় করা, যাতে আমরা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
আল্লাহর রহমত অসীম, তিনি বান্দাদের নিয়ত ও সাধ্য অনুযায়ী প্রতিদান দেন। সুতরাং সহজ ও কার্যকর এই আমলগুলো পালন করে রাতভর ইবাদতের বরকত গ্রহণের চেষ্টা করা উচিত।
ভোরের আকাশ//হ.র