হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদল সম্পাদকের নিন্দা
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির। রোববার (৪ মে) রাতে নাসির তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এই নিন্দা জানান।
পোস্টে নাসির লিখেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। পতিত ফ্যাসিস্টদের বিচারের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।’
অন্যদিকে, 'ফ্যাসিস্ট শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে ও সামাজিকভাবে মোকাবিলা না করে সকল মনযোগ শুধু নিজস্ব রাজনৈতিক প্রচারণার পেছনে দেওয়ার কারণে জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকারী জনতা গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক দিশা থেকে ক্রমান্বয়ে বঞ্চিত হচ্ছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নয়, বরং গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখাই আমাদের সকল রাজনৈতিক পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।’
এর আগে, রোববার সন্ধ্যায় গাজীপুরে একদল অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলা চালায় বলে জানা যায়।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। তার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ধানমন্ডির ‘মাহবুব ভবন’। ১৭ বছর আগে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে ঢাকা ছেড়ে ছিলেন জোবাইদা। সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসা ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কের ‘মাহবুব ভবন’। জোবাইদা রহমান মাহবুব আলী খানের ছোট মেয়ে। মাহবুব ভবনে এখন তার সহধর্মিণী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু এবং বড় মেয়ে শাহীনা জামান ও তার পরিবার বসবাস করে। সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু কয়েকদিন আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ছোট মেয়ে জোবাইদা রহমান ঢাকায় এসে বাবার বাসায় উঠবেন বলে বাসার নিরাপত্তা ও সাজসজ্জার কাজ করা হয়েছে।বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান আসবেন এই বাসায়। সে জন্য বাসার সাজ-সজ্জা, নিরাপত্তাব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস, জেনারেটর প্রভৃতি কাজ চলছে। ইনশাল্লাহ উনি (জোবাইদা রহমান) আসার আগেই এই বাসার সব কাজ-কর্ম শেষ হবে। উনাকে রিসিভ করার জন্য বাসা প্রস্তুত হয়ে যাবে। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন মাহবুব ভবনের পুরো কাজকর্মের তদারকি করছেন।তিনি বলেন, আপনারা দেখতেই পারছেন মাহবুব ভবন এমনিতেই পরিপাটি একটি বাসা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তারপরও আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাসার ভেতরে এবং বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক করেছি।তিনি আরো বলেন, বাসার চারপাশে দেয়ালের ওপরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এই বাসার চারপাশে দেয়াল রয়েছে। বাসার আঙিনায় সামনের দিকে রয়েছে ফুলের বাগান। আছে নিরাপত্তায় কর্মীদের জন্য গার্ড রুম।রুমন বলেন, আপনি দেখছেন বাসভবনের তিন দিকে বিভিন্ন জনের বাসা-অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন- আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, নিরাপত্তার নামে এমন কিছু করতে যেও না যাতে প্রতিবেশীদের কোনো অসুবিধা হয়, যাতে মানুষজনকে ডিসট্রার্ব না করা হয়। যেমন- পেছনের দিকে দেয়ালের পাশে ওই ভবনের বারান্দাটা দেখছেন একেবারেই দেয়াল ঘেঁষে।তিনি আরো বলেন, উনারা (প্রতিবেশীরা) ১৭ বছর কিছু করেননি, এখনো তারা কিছু করবেন না, তাদের ডিস্টার্ব করে আমাদের যেন আরাম করা না হয়। বুঝতেই পারছেন চেয়ারম্যান যেমনটি চান এই বাসার পরিবারের সদস্যরা ঠিক সেটাই আমাদের বলেছেন। সব দিক বিবেচনায় রেখে আমরা নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজিয়েছি। জোবাইদা রহমানের জন্য আলাদা গাড়ি ও তার নিরাপত্তার সঙ্গে নিয়োজিত সদস্যদেরও গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।ইতোমধ্যে গত ৩০ মে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে সশস্ত্র গানম্যান, পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় পুলিশ পাহারা, আর্চওয়ে বসানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন। রুমন জানান, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তায় থাকা নিয়োজিত কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে এই বাসভবন দেখে করণীয় ঠিক করে গেছেন।১৭ বছর আগে জোবাইদা রহমান দেশ ছেড়েছিলেন একমাত্র মেয়ে জায়মাকে নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে। এক-এগারোর সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনার সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন স্বামীর সঙ্গে জোবাইদাও। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তার সহধর্মিণী জোবাইদা রহমান জোবাইদা রহমানের মা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই মামলায় জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের ওই সাজা স্থগিত হয়ে যায়। মাহবুব আলী খানের দুই মেয়ের মধ্যে জোবাইদা রহমান ছোট। সে জন্য বাবা-মায়ের খুব আদরের। জন্ম সিলেটে। পড়ালেখা করেছেন ঢাকায়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাবা-মায়ের আগ্রহে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। তিনি সেখান থেকে এমবিবিএস পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মেধায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৫ সালে বিসিএস দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন সরকারি চিকিৎসক হিসেবে। জোবাইদা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস-স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডন যাওয়া পরে শেখ হাসিনার সরকার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। লন্ডন যাওয়ার পরে জোবাইদা ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে স্নাতকোত্তর-এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। জোবাইদা রহমানের বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর ১৯৮৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।ভোরের আকাশ/এসএইচ
অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন ইস্যুকেন্দ্রিক চাপ বেড়েছে। পাল্টে যাচ্ছে দলীয় নেতাদের বক্তব্য ও মন্তব্যের ভাষাও। অনেক দলীয় নেতার বক্তব্যে বেরিয়ে আসছে সরকারের প্রতি হুমকি ও হুঁশিয়ারি বার্তা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দল ও সরকারের মধ্যে অর্থগত স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। রাষ্ট্রের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সরকারকে ভাবতে হয়। আর একটা পর্যায়ে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নিজেদের স্বার্থই প্রাধান্য পায়। অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সরকার ও দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য বাড়ছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার যে কয়েকটি ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে পড়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনী রোডম্যাপ, রাষ্ট্র সংস্কার, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ, নারী সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ এবং মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর। এসব ইস্যুর মধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন এবং বাস্তবায়ন নিয়ে বেশি জটিলতায় পড়ছে সরকার।নির্বাচনী রোডম্যাপ চাপ : ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়ে রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সরকারের এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেনি অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সব সময় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ ও নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। অথচ কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সুকৌশলে এমন একটি আবহ তৈরির অপচেষ্টা চলছে, যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করাটাই যেন অপরাধ। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এসব অবজ্ঞাসূচক বক্তব্য পলাতক স্বৈরাচারকে আনন্দ দেয়।’ গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।আর গত শনিবার ঢাকার মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচনের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি। একটি ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে। তবে যদি এ সময়ের মধ্যে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে, তাহলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পার হওয়া উচিত না।’গত ২০ এপ্রিল বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতারা বলেন, অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। সরকার নির্বাচন নিয়ে অহেতুক কালক্ষেপণ করলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের মধ্যে বৈঠক করে প্রয়োজনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করা হবে।বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক সাইফুল হক বলেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে আন্তরিক। একই সঙ্গে খুনিদের বিচারের দাবিতে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সবাই সোচ্চার। সংস্কার ও বিচার নির্বাচনের জন্য কোনো বাধা নয়। তাই সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ডিসেম্বরের পর নেওয়ার সুযোগ নেই। যারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে, তাদের নতুন কোনো সংকট সৃষ্টির অশুভ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করি।’সংস্কার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ চাপ : রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষের প্রত্যাশার চাপ কাঁধে নিয়েই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। একে একে গঠন করা হয় প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ১১টি সংস্কার কমিশন। গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর এই সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কমিশনের সুপারিশ এবং দলগুলোর মতামতের মধ্যে নানা ধরনের ভিন্নতা এসেছে। একই সঙ্গে দলগুলোর জমা দেয়া মতামতেও ভিন্নমত এসেছে নানা ইস্যুতে। কোনো কোনো ইস্যুতে একেবারে পাল্টাপাল্টি দিয়েছে দলগুলো। এই মতভিন্নতা দূর করতে কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যার প্রধান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইতোমধ্যে মতামত জমা দেয়া দলগুলোর সঙ্গে কমিশন আলোচনা শুরু করেছে।আগামী ১৫ মে পর্যন্ত এই মতামত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আলোচনা হলেও দলগুলোর মতের ভিন্নতা দূর করতে কমিশন কতটা সফল হবে এই প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে। অনেকে বলছেন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজস্ব যে মতামত দিয়েছে তা নিয়ে এক জায়গায় আসা দুরূহ। কারণ দলগুলো নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই মতামত দিয়েছে। এতে দলীয় স্বার্থ রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর দলগুলো জনপ্রত্যাশার চাপ বা আবেগ থেকে হলেও সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্য পোষণ করেছিল। অনেক ক্ষেত্রে কাছাকাছি মনোভাব দেখিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা ও ভোটের রাজনীতির হিসাব থেকে এখন দলীয় চিন্তার ফারাক ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতসহ বিদ্যমান দলগুলো সংস্কার প্রস্তাবে যেসব মতামত দিয়েছে তার অনেক ক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থান নিয়েছে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। সামনে ভোটের মাঠে নবগঠিত দলটি বড় হিস্যা তৈরি করতে চাইছে। এজন্য নানাভাবে তৎপর তারা। সংবিধান সংস্কার কমিশন যেসব মতামত দিয়েছে দলটি তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। তবে তারা নতুন করে সংবিধান প্রণয়নের পক্ষে। এজন্য গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করছে দলটি। তাদের এই গণপরিষদ দাবির সঙ্গে একমত নয় বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো বলেন, সংবিধান, বিচারবিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কারে গঠিত কমিশনের সুপারিশের ওপর দলগুলো যে মতামত দিয়েছে তার মধ্যে মোটা দাগে সংবিধান সংস্কার বিষয়ে বড় ধরনের মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এই ভিন্নতা দূর করা খুব একটা সহজ নয় বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাওয়ায় তারা এখন একে অন্যকে কোনো ধরনের ছাড় দিতে চাইবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।যদিও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলে আসছেন, দলগুলোর মধ্যে মতের অমিলগুলো দূর করতে তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা দলগুলোকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন। অন্তত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য হলে একটা জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে। যে সনদের ওপর ভিত্তি করে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হবে। নবগঠিত এনসিপি বা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম জুলাই সনদ নামে যে সনদ দাবি করে আসছে ঐকমত্যের সনদ এই জুলাই সনদ হিসেবে আইনি কোনো ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চিন্তাও আছে সরকারের।এদিকে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ সব দাবি পূরণ না করা হলে ঢাকাসহ সারাদেশ অচল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।একই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত কিছুদিন আগে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করবে কিনা- সেই সিদ্ধান্ত নাকি আওয়ামী লীগের। আপনি ভুলে যাবেন না, আমরা আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে কিনা- নির্বাচনে আসবে কিনা- এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’গত শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি’তে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ। তারা আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টালবাহানা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে, এই সিদ্ধান্ত জনগণ গত বছরের ৫ আগস্টই দিয়েছে। এরপরও কেউ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে জুলাই যোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করবে।মানবিক করিডোরকেন্দ্রিক চাপ : রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে দেশের রাজনীতিতেও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করিডোর দেওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে মাত্র। যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার ব্যাপারে সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে বলে কয়েকদিন আগে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তার এই মন্তব্যের পরই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির’ মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেন। তার মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডোরের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এ বিষয়টি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। কারণ এর সঙ্গে অনেক নিরাপত্তা বিষয় জড়িত থাকতে পারে।’ গত সোমবার বিকালে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।জাতিসংঘের অনুরোধে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে রাখাইনে করিডোর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। এর নিন্দা জানায়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাব।’ভোরের আকাশ/এসএইচ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।রোববার (৪ মে) এক বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা আমাদের সহযাত্রী, তাদের ওপর হামলা হলে আমরা জুলাই যোদ্ধারা একসঙ্গে তা প্রতিরোধ করব ইনশাআল্লাহ।তিনি বলেন, ৩৬ জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে পুরোনো হোক কিংবা নব্য ফ্যাসিস্ট-কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না।ভোরের আকাশ/এসএইচ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির। রোববার (৪ মে) রাতে নাসির তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এই নিন্দা জানান।পোস্টে নাসির লিখেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। পতিত ফ্যাসিস্টদের বিচারের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।’অন্যদিকে, 'ফ্যাসিস্ট শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে ও সামাজিকভাবে মোকাবিলা না করে সকল মনযোগ শুধু নিজস্ব রাজনৈতিক প্রচারণার পেছনে দেওয়ার কারণে জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকারী জনতা গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক দিশা থেকে ক্রমান্বয়ে বঞ্চিত হচ্ছে।’তিনি আরও যোগ করেন, ‘ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নয়, বরং গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখাই আমাদের সকল রাজনৈতিক পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।’এর আগে, রোববার সন্ধ্যায় গাজীপুরে একদল অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলা চালায় বলে জানা যায়।ভোরের আকাশ/এসএইচ