নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৩ পিএম
আন্দোলনে মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী ছিলেন হাবিব-হারুন: সাবেক আইজিপির জবানবন্দি
জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় চলতি বছরের ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি এ তথ্য দেন। পাঁচ পৃষ্ঠার ওই জবানবন্দির অনুলিপি সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।
জবানবন্দিতে চৌধুরী মামুন উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম, গুম, খুন এবং জুলাই আন্দোলন দমনের নানা দিক নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতিনিয়ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হতো। এসব বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশীদ, র্যাব মহাপরিচালক, আনসারের ডিজি, এনটিএমসির জিয়াউল আহসানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নিতেন।
চৌধুরী মামুন তার জবানবন্দিতে জানান, আন্দোলনকারীদের দমন করতে প্রথমে ছয়জন সমন্বয়ককে আটক করা হয় এবং ডিবি কার্যালয়ে এনে মানসিক চাপে রাখার পাশাপাশি আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য গণমাধ্যমে বিবৃতি দিতে বলা হয়। তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হারুনকে “জিন” নামে ডাকতেন—কারণ, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে হারুন ছিলেন সবচেয়ে কার্যকর ব্যক্তি।
আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর বিষয়ে মামুন বলেন, “আন্দোলনকারীদের ভয়ভীতিতে রাখার জন্য নজরদারি এবং গুলি চালানোর গোপন পরিকল্পনা হয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয় র্যাবের তৎকালীন ডিজি হারুন অর রশিদের পরামর্শে।”
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন প্রবণ এলাকায় ব্লক রেইড ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ছিল রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই তাকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা বলে লেথাল উইপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহারের কথা জানান। সেই সময় ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব এবং ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জবানবন্দিতে আরও দাবি করা হয়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে উৎসাহ ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
সরকার পতনের দিন নিজের অবস্থান নিয়ে মামুন বলেন, “৫ আগস্ট বিকেলে একটি হেলিকপ্টার পুলিশ সদর দপ্তরে আসে। আমি ওই হেলিকপ্টারে করে তেজগাঁও বিমানবন্দর হয়ে সেনানিবাসে আশ্রয় নিই।”
জবানবন্দির শেষাংশে তিনি আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হতাহত হওয়ার ঘটনায় অনুতপ্ত বলে মন্তব্য করেন এবং সেই সময়ের পুলিশপ্রধান হিসেবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে জবানবন্দির পুরো অংশে নিজের সরাসরি ভূমিকার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন তিনি।
আদালতে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের অঙ্গীকারে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছে।
ভোরের আকাশ//হ.র