নারী ও শিশু ধর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৫ ১০:০৭ পিএম
নিন্দা প্রতিবাদের ঝড়
নিখিল মানখিন : একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে সারাদেশ। চলছে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়। অবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক নেতারাসহ দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষক-শিক্ষাথীরা। ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ ঘোষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় লাঠি মিছিল করেছে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। মাগুরার সাত বছরের এক শিশু ধর্ষণের ঘটনা সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে মাগুরার এক শিশু। এর ঘটনার পরও গত শনিবার গাজীপুরে এক শিশু এবং কেরানীগঞ্জে এক অন্তঃসত্বা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত ৭ মার্চ কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক তরুণী। এভাবে ধর্ষণ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একজন কর্মচারীকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর তৌহিদী জনতা নাম দিয়ে একদল ব্যক্তি থানার সামনে অবস্থান নিয়ে হট্টগোল করে। পরে গত বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তি আদালতে জামিন পান। একদল লোকের উক্তত্যকারীকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়ার ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে নারী সমাজ। এ ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ব্যক্তির শাস্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন। এর মধ্যেই মাগুরায় একটি শিশু নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। ওই শিশুর অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’ বলে জানিয়েছে কর্তৃক। এমন প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও নারী নির্যাতনের সাথে জড়িত নিপীড়কদের শাস্তির দাবিতে শনিবার মধ্যরাতে হল ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন ঢাবি ছাত্রীরা। পরে তাদের সাথে কয়েকটি হলের ছাত্ররাও যোগ দেন। ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল রোববার ক্লাস বর্জন এবং বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করে গতকাল রোববার দেশজুড়ে চলে বিক্ষোভ-সমাবেশ।
বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ : বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে দেশে অন্তত ছয় হাজার ৩০৫ জন নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৪৭১ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে। চলতি বছরের গত দুই মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে কমপক্ষে ১০৭ জন। যাদের মধ্যে ৬৬ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে। এ সময় ২২৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ৪০১ জন নারী ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে দেশে নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ২৪১টি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তার।
এদিকে, মার্চের গত আট দিনে (৮ মার্চ পর্যন্ত) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গড়ে প্রতিদিনই একটি করে ধর্ষণ ঘটনা ঘটেছে। অপ্রকাশিত ঘটনার সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গতকাল রোববার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি, লোকপ্রশাসন, বাংলা, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বিক্ষোভ করেছেন।
দুপুর ১২টার দিকে ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রীদের। এ সময় তারা ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’, ‘হ্যাং দ্য রেপিস্ট, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করা না পর্যন্ত ধর্ষকদের কেন বিচার শুরু হয় না, তা জানতে চান। অন্তর্বর্তী সরকার দলীয় সরকার না হওয়া সত্ত্বেও ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা কেন করতে পারছে না, তা জানতে চান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘প্রত্যেক ধর্ষিত বোনের পাশে আমরা আছি। তাদের ধর্ষণের বিচারের জন্য আমরা রাস্তায় নামব।’ ঢামেকের অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব তার বক্তব্যে বলেন, যারা ধর্ষণ করে এবং যারা এদের মদদ দেয়, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ধর্ষণের সেঞ্চুরি করা হয়েছে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অপরাজেয় বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা প্রমুখ। সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারাও।
প্রতিবাদ সমাবেশে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, ‘২০০৫ সালে পূজার যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে তাকে যে ধর্ষণ করা হয়েছিল, যে করেছিল, সে কিন্তু এখন জেল থেকে বের হয়ে গেছে। তার মানে আমরা দেখছি, নির্যাতন শুধু ঘটতে দেওয়া হচ্ছেই না, যাদের এটা থামানোর কথা, তারা চোখ বন্ধ করে আছে।’
বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিবাদ সমাবেশের পর দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে তারা অপরাজেয় বাংলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
একই দাবিতে তখন বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও। এছাড়া কাছাকাছি সময়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ।
এছাড়া বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কার্জন হলের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগ। ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেন।
গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে অংশ নেন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির, অধ্যাপক আবু হুসাইন মোহাম্মদ আহসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও বিভাগের প্রভাষক শেহরিন আমিন ভূইয়া।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিবুল বাশার বলেন, ‘আপনি (স্বরাষ্ট উপদেষ্টা) রাত ৩টায় বাইরে ঘুরে আমাদের সিরিয়াসনেস দেখাবেন না। আমরা রাস্তায় আপনার সিরিয়াসনেস দেখতে চাই। আমাদের মা-বোনদের নিরাপদ দেখতে চাই, আমরা এত প্যাঁচ দেখতে চাই না।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরিন আমিন ভূইয়া বলেন, আমরা শুধু আইনের কথা বলি। রুলসের দোহাই দেই। কিন্তু এ রেপিস্টদের শাস্তি দিতে ১০ দিনের বেশি সময় লাগার কথা না। ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অতি দ্রুত প্রকাশ্য শাস্তি কার্যকর করতে পারলে ধর্ষণের ঘটনা কমে যাবে বলে বিশ্বাস করি।
লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আবু হুসাইন মোহাম্মদ আহসান বলেন, আমাদের প্রতিবাদ প্রতিনিয়ত জানাতে হবে। এটা কীটের মতো রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এটাকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে ঢাবিতে লাঠি মিছিল : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ নয় দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় লাঠি মিছিল করেছে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। গতকাল বিকেল পৌনে ৩টায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল শুরু করেন প্ল্যাটফর্মটির সদস্যরা। এ সময় তাদের বেশিরভাগের হাতে বাঁশের লাঠি দেখা যায়। এছাড়া তারা ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই, লড়াই করে বাঁচতে হবে, প্রীতিলতা শিখিয়ে গেছে, অবিলম্বে ধর্ষকদের, শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, অবিলম্বে জাহাঙ্গীরকে পদত্যাগ করতে হবে, এক দুই তিন চার, জাহাঙ্গীর তুই গদি ছাড়, ধর্ষণকারী ধর্ষণ করে ইন্টেরিম কি করে, জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো, বাঁশের লাঠি তৈরি করো, ধর্ষকদের বিদায় করো, বাঁশের লাঠি তৈরি করো, জাহাঙ্গীরকে বিদায় করোসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
নর্থ সাউথ ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ : এদিকে দেশে ধর্ষণ প্রতিরোধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করে ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শর্মি হোসেন ও নোভা আহমেদ এতে নেতৃত্ব দেন। এনএসইউর আট নম্বর গেট থেকে শুরু হয়ে আইইউবির সামনে দিয়ে ঘুরে আবারও এনএসইউর সামনে এসে সমাবেশটি শেষ হয়।
সমাবেশে শর্মি হোসেন নারীর প্রশ্নে বর্তমান সরকারের অবস্থান জানতে চান। পাশাপাশি ধর্ষণ প্রতিরোধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান তিনি। সমাবেশে থাকা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল হোসেন শান্ত বলেন, আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ চাই। ধর্ষণের বিচার এক মাসের মধ্যে হচ্ছে, এমন দেখতে চাই।
ধর্ষকদেরকে ঘৃণা করার আহ্বান জামায়াত আমিরের : ধর্ষকদেরকে ঘৃণা করুন ও সামাজিকভাবে বয়কট করুন- মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই আট বছরের শিশুর ধর্ষককে উল্লেখ করে এই আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানান।
পোস্টে জামায়াতের আমির আরও বলেন, মাগুরার সেই আট বছরের মেয়ে শিশুর ধর্ষক ও ধর্ষণের সহযোগিতাকারীদের অপরাধ এক ও অভিন্ন। এদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত চাই।
প্রকাশ্য শাস্তি চায় হেফাজত : বড় বোনের বাসায় আট বছরের শিশুকন্যা ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা জাহেলি যুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান। গতকাল দলটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর স্বাক্ষর করা এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ধর্ষকদের প্রকাশ্য শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেন।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, নারী হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলোর দ্রুত তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ ঘোষণা করলেন ঢাবি ছাত্রীরা : মাগুরায় আট বছরের শিশু আসিয়া ধর্ষণসহ সম্প্রতি ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ ঘোষণা করা হয়েছে। গত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা এই মঞ্চের ঘোষণা দেন। পরে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাফিয়া রেহনুমা হৃদির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারীর প্রতি সংঘটিত ধর্ষণ, নিপীড়ন, নারীবিদ্বেষী ‘মব’ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই মঞ্চের অবস্থান। এদিকে ঢাকার বাইরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, গাইবান্ধা, মাগুরা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, টাঙ্গাইল, যশোর, পটুয়াখালী, যশোরসহ প্রায় সকল জেলাতেই ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।