ধানমন্ডি ৩২
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫ ০৭:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে আটক রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমানকে নিয়ে চলছে আলোচনা। তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিসের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে সরকার। পাশাপাশি ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যে কোনো অসংগতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। রোববার (১৭ আগস্ট) জামিন পেয়েছেন মো. আজিজুর রহমান।
আজ অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দায়েরকৃত মামলায় আজিজুর রহমানের সম্পৃক্ততার তদন্ত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সম্প্রতি সংশোধিত সিআরপিসির ১৭৩(এ) ধারা মোতাবেক অতি সত্বর প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হওয়া রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়ের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। গত শনিবার আজিজুরকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম ইসরাত জেনিফার জেরিন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
১৫ আগস্ট ফুল নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন আজিজুর। পরে তাকে ধানমন্ডি থানার পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আজ তাকে গত বছরের ৪ আগস্ট করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান। গত ২ এপ্রিল ধানমন্ডি থানায় মামলাটি করেছিলেন আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে আটক রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমানকে কোনো হত্যা মামলার আসামি করা হয়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গত ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ থেকে মো. আজিজুর রহমান (২৭) কে আটক করা হয়। পরদিন ১৬ আগস্ট তাকে ধানমন্ডি থানায় এপ্রিল মাসের একটি মামলার সন্দিগ্ধ আসামি (সন্দেহভাজন অপরাধী) হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়।
তালেবুর রহমান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ কিছু গণমাধ্যমে আজিজুর রহমানকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। মামলাটি দণ্ডবিধির অধীন একটি নিয়মিত মামলা, হত্যার সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তিনি আরও জানান, এ ধরনের ভ্রান্ত তথ্য প্রচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারণা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিকশাচালক আজিজুরকে হত্যা মামলার আসামি বলে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
শুক্রবার দেখা গেছে, রিকশাচালক আজিজুর একটি ফুলের তোড়া হাতে রিকশা চালিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসেন। এরপর উপস্থিত জনতা তাকে আটক করে। এক পর্যায়ে গণধোলাইয়ের শিকার হন তিনি।
ফুলের তোড়ায় যা লেখা ছিল
ওই ফুলের তোড়ার ওপর লেখা ছিল, ‘১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সাধারণ রিকশাওয়ালা হিসাবে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে শ্রদ্ধা জানাতে নিজের সৎ উপার্জনের টাকা দিয়ে ফুল কিনে এসেছি। আমি কোন দল করি না। শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবাসি।’
ওই কাগজে আজিজুর রহমানের বাবার নাম লেখা ছিল আতিয়ার রহমান। তার বাড়ি ঝিনাইদহ সদর থানার ঘোড়াশাল ইউনিয়নের ঘোড়াশাল গ্রামে।
আজিজুর রহমান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসার সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেন। তখন তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আসিনি। আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। তাই আমার হালাল টাকা দিয়ে কেনা ফুল নিয়ে এসেছি।’
এর কিছুক্ষণ পরেই ধানমন্ডি ৩২ এ থাকা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেন এবং মারধর করেন। এ সময় তার রিকশাটি রাস্তার পাশে উল্টে ফেলে রাখা হয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
সেই রিকশাচালক জামিন পেলেন
৪০০ টাকা দিয়ে ফুল কিনে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধর খেয়ে কারাগারে যাওয়া রিকশাচালক আজিজুর রহমানের জামিন দিয়েছেন আদালত। আজ দুপুরে শুনানি শেষে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তাকে জামিন দেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ