ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫ ১০:৩৩ এএম
চীনা ব্যবসায়ীদের সফরে নতুন আশা
চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ সফরে বিনিয়োগে নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তিনি বলেছেন, এত বড় প্রতিনিধি দল, একটা দেশ থেকে আমরা আগে কখনো দেখিনি। আমরা একটা নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। আমরা একটা নতুন মাত্রার আগ্রহ চীনা বিনিয়োগকারীদের থেকে দেখতে পাচ্ছি। সেই আগ্রহের ফলাফল হিসেবে আমরা এই গ্রুপটাকে পেলাম। গতকাল রোববার ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিডা কার্যালয়ে ‘চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলন’ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন চৌধুরী আশিক। গতকাল সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে আপনারা এখানে বিনিয়োগ করুন। এখানে তৈরি পোশাক, জ্বালানি, কৃষি, পাট, তথ্যপ্রযুক্তি সম্ভাবনাময় শিল্প। বাংলাদেশের মোট জনশক্তির অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের নিচে বলে উল্লেখ করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, এই তরুণেরা কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। তাদের কাজে লাগানোর জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, সম্মেলনে সর্বমোট চীনের ১৪৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫০ জন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। বাংলাদেশেরও অনেক ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ছিলেন। সবমিলিয়ে প্রায় ৫শ’র মতো অতিথি অংশ নিয়েছেন। চীনের যে কোম্পানিগুলো এসেছিল, তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন খাতে বেশ বড় ধরনের কোম্পানি। আজ বেশ কিছু বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) এবং বিটুজি (বিজনেস টু গভর্নমেন্ট) দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দিনভর ওই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ১৫০টির বেশি বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তাদের এই সহায়তাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে আমাদের যারা বাংলাদেশি ভালো ব্যবসায়ী বেসরকারি খাতে, তাদের সঙ্গে যাতে ওনারা (চীনা ব্যবসায়ীরা) যৌথ উদ্যোগ বা অংশীদারিত্ব যেতে পারেন। চীনের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে বলেও জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
আশিক বলেন, আমরা একটা দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি পাওয়ার চায়নার সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের। চাঁদপুরের একটা কৃষিভিত্তিক প্রকল্পের জন্য সমঝোতা স্মারকটা স্বাক্ষরিত হয়েছে। অনেকদিন ধরেই এটা নিয়ে কাজ হচ্ছিল, কিন্তু আমরা সরকারে এসে দেখলাম প্রকল্পটা ঝুলে আছে। বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কারণে প্রকল্পটা এগোচ্ছিল না। চৌধুরী আশিক বলেন, এখন ওখানে ওনারা গিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটা দেখবেন। আশা করছি, সেখানে বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হবে। বিশেষ করে নারীদের। ধীরে-ধীরে সেখানে কর্মসংস্থান আরও বাড়বে।
সবমিলিয়ে আমরা মনে করছি এই সফরটা আমাদের জন্য একটা মাইলফলক, একটা ঐতিহাসিক সফর। তবে বিনিয়োগ নিয়ে আসা একটা লম্বা প্রক্রিয়া মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি কারও কাছে প্রত্যাশা করি না যে ওনারা আজকেই একটা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাবেন। আমরা এটা আগেও অনেকবার বলেছি। বিনিয়োগের যাত্রাটা একটা লম্বা প্রক্রিয়া। তো সেটার প্রথম ধাপটা হচ্ছে ওনাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসা। বাংলাদেশের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত করানো। আমাদের সাথে পরিচিত হওয়া, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। ব্যাংক, আইনি প্রতিষ্ঠান, কর নীতিনির্ধারকদের সাথে পরিচিত হওয়া এবং কিছু কারখানা পরিদর্শন করা, যেটা ওনারা কালকে করবেন।
আগামী ছয় মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে কিছু সত্যিকারের বিনিয়োগের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে যেসব চীনা ব্যবসায়ী ইতোমধ্যেই আছেন, সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করছেন তাদেরও ওনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ, তারাই এখানে আমাদের বড় প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে একটা ভূমিকা রাখতে পারেন। ওনারা যাতে এটা সম্পর্কে ধারণা পান যে কেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে হবে।
আমরা আশা করছি, এই সম্মেলন থেকে আমরা যে যোগাযোগগুলো পাব, সেগুলোকে পরিচর্যা করতে করতে আগামী ছয়, ১২, ১৮, ২৪ মাসে কিছু সত্যিকারের বিনিয়োগ আমরা বাংলাদেশে দেখতে পাব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একটি চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ইতোমধ্যেই দেশটির সঙ্গে কাজ করছি। আমরা মনে করছি এটাই তাদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগের পথকে সুগম করবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ