১১ মাসে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বৈধ চ্যানেলে দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সে নতুন ইতিহাস গড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে—এই একাদশ মাসে দেশে মোট ২৭ বিলিয়ন ৫০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার (২৭৫০ কোটি ডলার) রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২১৩৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সেই তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে দশমিক ৭০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান প্রবৃদ্ধি ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে প্রবাসী আয়ের মোট পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার দৃঢ় সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি তা হয়, তবে দেশের ইতিহাসে একক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স অর্জনের মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ। এর আগে দেশে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। সেই অর্থবছর জুড়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। আর সবশেষ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরজুড়ে এসেছিল ২৩৯১ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে সদ্যবিদায়ী মে মাসে দেশে এসেছে ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা প্রায় ৩৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। যা দেশের ইতিহাসে কোনো এক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। আর গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ২২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বছর ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৩১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এর আগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে। তবে মে মাসে তা অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড গড়েছে। এদিকে দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২৫ সালের মার্চ মাসে—৩২৯ কোটি ডলার। আর গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। গত জানুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার।
ভোরের আকাশ/আজাসা
সংশ্লিষ্ট
বাংলাদেশে সরকারি খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। শনিবার (১৪ জুন) সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ এ অর্থায়নের অনুমোদন দেয়।‘স্ট্রেংদেনিং ইনস্টিটিউশনস ফর ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটি (এসআইটিএ)’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, সরকারি বিনিয়োগ পরিকল্পনা, ক্রয় প্রক্রিয়া এবং আর্থিক নিরীক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। এর লক্ষ্য হলো সরকারি কাঠামোতে প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও সেবার মান বাড়ানো।এই প্রকল্পে পাঁচটি প্রধান সরকারি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও প্রশাসনিক কাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিকল্পনা বিভাগ, সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ (সিপিপি) এবং মহাহিসাব নিরীক্ষকের দপ্তর (সিএজি)।বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, “ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান দিক। এটি শুধু স্বচ্ছতা বাড়াবে না, দুর্নীতি হ্রাসেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এতে একটি আধুনিক ও দায়িত্বশীল সরকারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।”তিনি আরও বলেন, “এই উদ্যোগের ফলে সরকারি সেবার মান বাড়বে এবং জনসাধারণের কাছে সেবার প্রবেশগম্যতা সহজ হবে, যা সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।”এদিকে, বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, এসআইটিএ প্রকল্পের পাশাপাশি আরও একটি নীতিগত উন্নয়ন ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জুনের শেষদিকে এ প্রস্তাব পর্ষদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। প্রস্তাবিত ঋণ থেকে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থার সংস্কার, ব্যাংক খাত উন্নয়ন, সরকারি বিনিয়োগ, সামাজিক সেবা এবং নিরীক্ষা ও জবাবদিহিতা কাঠামোর উন্নয়ন সম্ভব হবে।প্রকল্পটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ও দলনেতা সুলেমানে কুলিবালি বলেন, “এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ অংশগ্রহণ সরকারের প্রশাসনিক কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে। এটি একটি টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরিতে সহায়ক হবে।”তিনি আরও যোগ করেন, “এসআইটিএ প্রকল্প এবং প্রস্তাবিত উন্নয়ন ঋণ একে অপরের পরিপূরক। এগুলো সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর সেবাপ্রদানে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করবে।”উল্লেখ্য, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। এ পর্যন্ত সংস্থাটি বাংলাদেশকে ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অনুদান ও স্বল্পসুদে ঋণ দিয়েছে। ভোরের আকাশ/হ.র
দেশে আবারও বাড়ানো হয়েছে সোনার দাম। এবার প্রতি ভরিতে ২ হাজার ১৯২ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২২ ক্যারেট মানের সোনার নতুন দাম নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা। নতুন এ মূল্য আগামীকাল রোববার (১৫ জুন) থেকে কার্যকর হবে।শনিবার (১৪ জুন) রাতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার নতুন দামের ঘোষণা দেয়।সংগঠনটি জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে পরিশোধিত সোনার (তেজাবি সোনা) মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।এর আগে, চলতি মাসের ৫ তারিখেও সোনার দাম বাড়ানো হয়েছিল। সেসময় ২২ ক্যারেটের সোনার দাম প্রতি ভরিতে ২ হাজার ৪১৫ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।তবে, রুপার দামে এ সময় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আগের নির্ধারিত মূল্যেই রূপা বিক্রি হচ্ছে। ভোরের আকাশ/হ.র
দেশে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত একটি নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) নবনির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। গত সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে একটি তত্ত্বাবধায়ক (অন্তর্র্বর্তীকালীন) সরকার রয়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। যারা নতুন শিল্প স্থাপন বা ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন, তারাও একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা করছেন।বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যত দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি বৈধ সরকার গঠিত হবে, তত দ্রুত দেশের অর্থনৈতিক গতি ফিরে আসবে, বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।এই শিল্প মালিক জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় তার একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে বেকার যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে শিল্প খাতে নিয়োজিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।মতবিনিময় সভায় সাহিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বারের সভাপতি শহিদুজ্জামান তোরিক, জামান গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান আসাদ, চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচিসহ স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
ঈদুল ফিতরের ধারাবাহিকতায় ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করেও দেশে রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছে। গত মার্চে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা এক মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয়। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মে মাসেও এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। এমনকি জুন মাসের শুরুতেই এই ধারা বজায় রয়েছে। জুনের প্রথম তিন দিনে এসেছে ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ আয়। এদিকে দ্বিতীয় মাসের মতো সৌদি আরব থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। মাঝে বেশ কিছু মাস এটি যুক্তরাষ্ট্রের দখলে থাকলেও পূর্বে সৌদি আরব থেকেই বাংলাদেশে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসত।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ২১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে মাত্র এক অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এই প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী এ সংখ্যা ২০ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।উল্লেখ্য, এই হিসাব পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়বদ্ধ ও অলভ্যাংশ বাদ দিয়ে কেবল প্রকৃত রিজার্ভ দেখানো হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের জন্য বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠিয়ে থাকেন, যাতে দেশে তাদের প্রিয়জনেরা উৎসব আনন্দে অংশ নিতে পারেন। এই উৎসবকালীন প্রেরণায় প্রবাসী আয় অনেক সময় দ্বিগুণ হয়ে যায়। মে মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছেন ২৯৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে প্রাপ্ত মোট ২৯৭ কোটি ডলারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার এসেছে সৌদি আরব থেকে, যা প্রায় ১৮ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত (৩৫ কোটি ১৫ লাখ ডলার) ও তৃতীয় যুক্তরাজ্য (৩৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার)। এরপর রয়েছে মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, ইতালি, কুয়েত, কাতার ও সিঙ্গাপুর। অপরদিকে, মার্চে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এরপরে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (৫০ কোটি ৮৩ লাখ), সৌদি আরব (৪৪ কোটি ৮৪ লাখ), যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া।রেমিট্যান্সের প্রকৃত উৎস নির্ধারণ : বিগত বছরগুলোতে রেমিট্যান্সের উৎস হিসেবে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র, আমিরাত বা যুক্তরাজ্যকে শীর্ষে দেখা গেলেও বাস্তবে অনেক সময়ই এগুলো ছিল ‘ক্লিয়ারিং দেশের’ ভিত্তিতে।সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স মূলত আনুষ্ঠানিক চ্যানেল হিসেবে ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে দেশে আসে। এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে সংগৃহীত রেমিট্যান্স স্থানীয় ব্যাংকগুলো কিনে নেয় এবং সুবিধাভোগীদের কাছে টাকা পরিশোধ করে। দেশের মোট রেমিট্যান্সের বড় অংশই আসে এই এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে। যেসব দেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ নিবন্ধিত, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সবচেয়ে এগিয়ে। ফলে প্রবাসীরা পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই টাকা পাঠান না কেন, অনেক সময় সেই অর্থ ক্লিয়ার হয় ওই নিবন্ধিত দেশ থেকেই।উদাহরণস্বরূপ, কেউ সৌদি আরব থেকে অর্থ পাঠালেও, যদি তা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে পাঠানো হয়, তাহলে তা রেকর্ড হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্স হিসেবে। এই প্রক্রিয়ার কারণে বেশ কিছু বছর ধরে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশ হিসেবে প্রকৃত উৎস নয়, বরং এক্সচেঞ্জ হাউস- নিবন্ধনের দেশগুলোর নাম উঠে আসছে। কারণ, বেশির ভাগ ব্যাংক ক্লিয়ারিং-এর দেশকেই রেমিট্যান্সের উৎস দেশ হিসেবে দেখিয়ে রিপোর্ট করত, প্রকৃত উৎস নয়। এই ভুল রিপোর্টিংয়ের কারণে প্রায় তিন বছর ধরে শীর্ষ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ হিসেবে অনেক সময় প্রকৃত দেশ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম প্রকাশ পেয়েছে।এ পরিস্থিতির পরিবর্তনে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নির্দেশনা জারি করেছে, যাতে প্রতিটি ব্যাংক প্রকৃত উৎস দেশ অনুযায়ী রেমিট্যান্স হিসাব করে রিপোর্ট প্রদান করে। এই নির্দেশনা কার্যকর হওয়ায় এখন রেমিট্যান্সের সঠিক উৎস দেশ চিহ্নিত হচ্ছে এবং তথ্য উপস্থাপনেও স্বচ্ছতা ফিরেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতিমাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের মার্চে, রেকর্ড পরিমাণ ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে। এটি ওই মাসে সর্বোচ্চ উৎস দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী আয়ের এই জোয়ারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো আগের মতো ডলার সংকটে নেই, আর বাজারে অস্থিরতা অনেকটাই কমেছে। আমদানি দায় পরিশোধ, এলসি খোলা কিংবা রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাতেও এখন তুলনামূলক স্বস্তি দেখা যাচ্ছে।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতেই রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে, যা একটি ইতিবাচক মাইলফলক হবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান গণমাধ্যমে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৫ শতাংশ রেমিট্যান্স কর বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর হলে আগামী দিনে প্রবাসীরা আনুষ্ঠানিক চ্যানেল এড়িয়ে অনানুষ্ঠানিক বা হুন্ডি চ্যানেলের দিকে ঝুঁকতে পারেন। এতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ বাড়বে।তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যাংকিং সেবা সহজ ও কার্যকর করা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়ানো এবং কম খরচে দ্রুত টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে সক্রিয় যোগাযোগ জরুরি, যাতে তারা এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অবহিত থাকেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ