ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫ ০৮:৪৬ পিএম
সংগৃহীত ছবি
দীর্ঘ আর্থিক মন্দা ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পর জনতা ব্যাংক এখন উন্নয়নের ধারায় ফিরেছে। একসময় খেলাপি ঋণ, লোকসান ও ব্যবস্থাপনা সংকটে ভুগতে থাকা ব্যাংকটি সঠিক কৌশল, প্রযুক্তি নির্ভর সেবা এবং গ্রাহকবান্ধব নীতি গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। জানুয়ারি-২০২৫ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে মাত্র ৭ মাসে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা, নন-ইন্টারেস্ট ইনকাম আনুপাতিকি হারে প্রবৃব্ধি হয়েছে ৬৮১ কোটি টাকা, বড় খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ সম্ভাব্য সকল ধরনের ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে ৪৬০ কোটি টাকা যা গত বছরের তুলনায় অর্জন দ্বিগুণ, প্রবাসী রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে ১৭০০০ কোটি টাকা যা গত বছরের তুলনায় ১.৬০ গুণ বেড়েছে, নতুন ও আকর্ষণীয় ডিপোজিট প্রোডাক্ট প্রবর্তন করায় ও গ্রাহক সেবামান বৃদ্ধি করায় ব্যাংকের গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৬.০০ লক্ষ বেড়ে বর্তমানে ১.০৪ কোটিতে পৌঁছেছে। বৈদেশিক ব্যাংকের এলসি পেমেন্ট অনাদায়ী ছিল ১৮০০ মিলিয়ন ডলার সেখানে জুলাই মাস শেষে কোনো এলসি পেমেন্ট অনাদায়ী নেই।
দৈনন্দিন বাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় জানুয়ারি-২০২৫ পর্যন্ত যেখানে গড়ে পরিমাণ ছিল ২২০০০ কোটি টাকা তা হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ১০০০০ কোটি টাকায় নেমেছে। সর্বপুরি ব্যাংকের সকল সূচক গুণগত ও প্রত্যাশিত ধারায় এগিয়ে চলেছে। ডিজিটাল ব্যাংকিংসেবা প্রসারে গ্রামীণ শাখাগুলোতে নতুন প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। ফলে গ্রাহকরা মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সহজেই লেনদেন, বিল পরিশোধ ও ঋণ আবেদন করতে পারছেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, দিকনির্দেশনা ও তদারকির ফলে জনতা ব্যাংক ধীরে ধীরে আর্থিক সংকট কাটিয়ে পুনরুদ্ধারের পথে এগোচ্ছে। একসময় খেলাপি ঋণ, অনিয়ম ও সুশাসনের ঘাটতিতে জর্জরিত এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এখন পুনর্গঠন কার্যক্রম, ঋণ আদায়ে জোর, ডিজিটালসেবা সম্প্রসারণ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।
সচিবের বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন- খেলাপি ঋণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ, দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা এবং গ্রাহক সেবাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। তার নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক এখন পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ আদায়, নতুন বিনিয়োগে সতর্কতা এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
সচিব দৈনিক ভোরের আকাশকে আরো বলেন, গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন, খেলাপি ঋণ কমানো, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনতা ব্যাংককে একটি আধুনিক, প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুধু ব্যাংকের মুনাফা নয়, দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধিতেও অবদান রাখতে চাই। গ্রাহকের আস্থা অর্জনই আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এ লক্ষ্য অর্জনে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে ব্যাংকের জনবলকে প্রতিনিয়ত বাস্তবিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নীতি-নৈতিকতা ও পেশাদারি শিক্ষা দিয়ে জাগিয়ে তোলা হচ্ছে, কর্মবন্টন পুনঃবিন্যাস করা হয়েছে, গ্রাহকের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করে সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যে জনতা ব্যাংক দেশের সবচেয়ে স্থিতিশীল ও মুনাফাবান ব্যাংকের তালিকায় শীর্ষস্থানে থাকতে পারে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কর্মদক্ষতায় উন্নয়নের ধারা : জনতা ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দক্ষ নেতৃত্ব ও কর্মদক্ষতায় ব্যাংকটি নতুন সাফল্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় নানা আর্থিক চ্যালেঞ্জ, খেলাপি ঋণ এবং প্রশাসনিক জটিলতায় ভুগতে থাকা ব্যাংকটি এখন প্রবৃদ্ধি ও মুনাফার ধারায় ফিরেছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যাংকের সেবা দ্রুততর, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর করার উদ্যোগ নেন। ডিজিটাল ব্যাংকিংসেবা সম্প্রসারণ, অনলাইন লেনদেনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, এবং গ্রাহকবান্ধব নীতি গ্রহণের ফলে গ্রাহকের আস্থা পুনর্গঠিত হয়েছে।
এছাড়া, কৃষি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও নারীদের জন্য বিশেষ ঋণ কর্মসূচি চালু, খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ, এবং গ্রামীণ শাখাগুলোর কার্যক্রম জোরদারের মাধ্যমে ব্যাংকের আমানত ও ঋণ বিতরণে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি এসেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঠিক সিদ্ধান্ত, সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দক্ষ টিমওয়ার্কের ফলেই জনতা ব্যাংক বর্তমানে দেশের অন্যতম স্থিতিশীল ও গ্রাহকবান্ধব ব্যাংকে পরিণত হচ্ছে।
গ্রাহকের আস্থা ও সুবিধা বৃদ্ধি : জনতা ব্যাংক বর্তমানে গ্রাহকের আস্থা অর্জন ও সুবিধা সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। একসময় সীমিত সেবা ও ধীর প্রক্রিয়ার কারণে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়লেও, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি, অনলাইন লেনদেন ব্যবস্থা এবং গ্রাহক বান্ধব নীতি গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাংকটি নতুন আস্থা তৈরি করেছে। গ্রাহকরা এখন মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেকোনো সময় টাকা স্থানান্তর, বিল পরিশোধ, ব্যালেন্স চেক ও ঋণের জন্য আবেদন করতে পারছেন। পাশাপাশি, ব্যাংকের শাখা ও এটিএম নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করায় শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলের মানুষ সহজেই ব্যাংকিংসেবা পাচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাবাহিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে জনতা ব্যাংক গ্রাহক সন্তুষ্টি ও আস্থার দিক থেকে দেশের শীর্ষ ব্যাংকগুলোর মধ্যে অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ