× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অর্থের ভাগবাটোয়ারার চাঞ্চল্যকর তথ্য

গণপূর্তের কাজ না করেও বিল আদায়

মাজাহারুল ইসলাম

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫ ১২:৫১ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কি চলছে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগে, যেন দেখার কেউ নেই। কাজ না করেই বা নামসর্বস্ব কাজ খাতা-কলমে দেখিয়ে বিল তুলে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্ট উপ-বিভাগীয় ও অন্য প্রকৌশলীরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ না করে বিল দেওয়া অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

ঢাকার সেগুনবাগিচায় হিসাব ভবনের ৭নং ব্লকের দ্বিতীয় তলায় করিডোরে টাইলস ও ফলস সিলিং লাগানো এবং বিভিন্ন কক্ষে রং নবায়ন কাজের জন্য ১১ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে গত জুন মাসে। ৬ মার্চ দরপত্র গ্রহণ, ১৪ মার্চ চুক্তি সম্পাদন এবং ১৭ মার্চ-২০২৫ চুক্তিবাস্তবায়ন দেখিয়েছেন ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩- এর নির্বাহী প্রকৌশলী।

কিন্তু হিসাব ভবনের সংশ্লিষ্ট ব্লকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, গত মার্চ মাসে এ ধরনের কোনো কাজ হয়নি। টাইলস এবং ফলস সিলিংয়ে কাজ হয়েছে কয়েক বছর আগে।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে গণপূর্ত বিভাগ-৩ স্থাপনা মেরামত বা বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনার (এপিপি) মাধ্যমে ২১০টি কাজে ১১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এ রকম কাজ না করে বা নামসর্বস্ব কাজ খাতা-কলমে দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্ট উপবিভাগীয় ও অন্য প্রকৌশলীরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ না করে বিল দেওয়া অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এভাবে মে ও জুন মাসে তড়িঘড়ি করে গণপূর্ত অধিদপ্তর ঢাকা জোন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনের বিভিন্ন বিভাগে ২০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ দেখানো হয়েছে ভবন মেরামত, রং করাসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মে মাসের শেষদিকে বা জুন মাসে কোনো প্রাক্কলন অনুমোদন হওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। তারপরও অর্থবছর শেষ হওয়ায় কাজ শেষ দেখাতে হয়েছে জুনের মধ্যে। তা না করলে বরাদ্দ অর্থ সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে।

এ কারণে বেশির ভাগ নির্বাহী প্রকৌশলীই গোঁজামিল দিয়ে বা কাজ না করেই কাগজে-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল দিয়ে দিয়েছেন। ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩- এর গত কয়েক বছরের এপিপির কাজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছরই একই ধরনের কাজ দেখিয়ে ৯ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।  

এবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ দিকে ঢাকার সেগুনবাগিচায় অডিট কমপ্লেক্স ভবনের তৃতীয় তলায় বিভিন্ন কক্ষে টাইলস  ও ফলস সিলিং লাগানো এবং রং নবায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজের নামে ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, অডিট কমপ্লেক্স ভবনের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট অডিট অধিদপ্তরের বিভিন্ন কক্ষে ফলস সিলিং ও কাঠের দরজা লাগানো, রং নবায়ন কাজের জন্য ৯ লাখ টাকা, মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুন গুনিয়া রোগের বিস্তাররোধে ঢাকার সেগুনবাগিচার কর অঞ্চল-৪- এর চত্বরে এডিস মশা নিধনের লক্ষ্যে ময়লা আবর্জনা অপসারণ কাজের জন্য ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং হিসাব ভবন চত্বরের আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, হিসাব ভবনের সিএএফও (কৃষি মন্ত্রণালয়) এর করিডোরের টাইসল ও ফলস সিলিং লাগানোর জন্য ১২ লাখ ৩১ হাজার টাকা, হিসাব ভবনের বাইরের ৩টি লিফটের কয়েকটি গ্লাস পরিবর্তন, এসিপি স্থাপন কাজের জন্য ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা এবং অডিট কমপ্লেক্স ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের ও সীমানা প্রাচীরের রং নবায়ন কাজ দেখিয়ে ৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

সেগুনবাগিচায় হিসাব ভবনের সিএএফওর (স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়) কার্যালয়ের করিডোরে টাইলস ও ফলস সিলিং লাগানো, রং নবায়ন ও টয়লেট সংস্কারের নামে ১১ লাখ ১৭ হাজার টাকা এবং অডিট কমপ্লেক্স ভবনের বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের অষ্টম ও নবম তলায় বিভিন্ন শাখা কক্ষে প্লাস্টার নবায়ন, রং নবায়ন, স্যানিটারি ফিটিংকসের জন্য ১৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, হিসাব ভবনের সিএএফওর (শ্রম মন্ত্রণালয়) কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে প্লাস্টার নবায়ন এবং নবায়ন স্যানিটারি ফিটিংস কাজের জন্য ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিসের পুরুষ ও মহিলা নামাজ ঘরের জানালায় থাই গ্লাস লাগানোসহ স্যানিটারি নবায়নের জন্য ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের নতুন মহিলা টয়লেট স্থাপনসহ কোয়ার্টারের যাবতীয় সংস্কারের জন্য ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ হলের টাইলস লাগানোর কাজে ৩ লাখ ও হিসাব ভবনের সিএএফওর (ধর্ম মন্ত্রণালয়) কার্যালয়ের করিডোরে টাইলস ও ফলস সিলিং লাগানো স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তন ও রং নবায়ন কাজের ১৪ লাখ ১১ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের বাংলো-১- এর দরজা, জানালায় থাই গ্লাস লাগানো, টাইলস বসানো, রং করা এবং কেন্দ্রীয় রেকর্ড ভবনের পয়ঃনিষ্কাশন লাইন মেরামত এবং গ্যারেজ কাম-ড্রাইভার কোয়ার্টারের নিচ তলায় গ্যারেজগুলোর সিলিং মেরামত, বিভিন্ন দরজা মেরামত, স্যুয়ারেজ লাইন মেরামত কাজের জন্য ১৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। অথচ গত জুন মাসে এই বাংলোর স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কারের নামে ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে অর্থবছরের শেষ মুহূর্তে অধিকাংশ কাজ না করেই ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩- এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মইনুল ইসলাম এবং ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল-২- এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ অন্য প্রকৌশলীরা কমিশনের বিনিময়ে বিল পরিশোধ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে কাগজে-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখানো হয়েছে- যা সুষ্ঠু তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে। ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩- এর নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগগুলো সঠিক নয় দাবি করে, তিনি এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

একইভাবে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪, মেডিকেল গণপূর্ত বিভাগ, নগর গণপূর্ত বিভাগ, ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১ ও ২, মহাখালী ও মিরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধেও এপিপির বরাদ্দ অর্থের এক-তৃতীয়াংশই কাজ না করে বা নামসর্বস্ব কাজ খাতা-কলমে দেখিয়ে বিল পরিশোধের অভিযোগ রয়েছে।

গত ৫ বছরের এপিপির কাজগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে একই ধরনের কাজ প্রতি বছরই সম্পন্ন দেখানো হয়েছে। অনেক কাজ শুধু কাজের নাম পরিবর্তন করে প্রতিবছর এপিপির তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কাজ না করে বিল-ভাউচার তৈরি করা এবং একই কাজের জন্য একাধিকবার বিল করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া আরবিকালচার বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই-খুদাও কাগজে-কলমে গাছ লাগানোর নামে অর্থবছরের শেষ মুহূর্তে কয়েক কোটি টাকার বিল পরিশোধ করেছেন। তিনিও গাছ লাগানোর জন্য প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ পান। একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেন গণপূর্তের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা কমিশন দিতে হয়।

এর মধ্যে উপসহকারী প্রকৌশলী ৫ শতাংশ, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ৫ শতাংশ, নির্বাহী প্রকৌশলী ৫ থেকে ১০ শতাংশ, সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ২ থেকে ৩ শতাংশ, সার্কেলের স্টাফ অফিসার ১ থেকে ২ শতাংশ, জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ২ শতাংশ এবং জোনের অন্যান্য কর্মচারী পান ২ শতাংশ।  

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর সবসময় কঠোর অবস্থানে। ঠিকাদার-প্রকৌশলীরা গোপনে আঁতাত করে কিছু করলে অনেক সময় সেটা কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারবে না। আর কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা প্রমাণ ছাড়া তো প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করারও সুযোগ নেই। তবে কোনো অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্ত করে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
গণপূর্ত প্রকৌশলী লিটন মল্লিক চাকরিচ্যুত

গণপূর্ত প্রকৌশলী লিটন মল্লিক চাকরিচ্যুত

 টাঙ্গাইলে ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধ্বসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

টাঙ্গাইলে ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধ্বসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

 বিএনপি নেতা আনিসুরের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক

বিএনপি নেতা আনিসুরের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক

 গোপালপুরে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উদযাপনে র‍্যালি ও আলোচনা সভা

গোপালপুরে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উদযাপনে র‍্যালি ও আলোচনা সভা

 সিংড়ায় ৩ লাখ টাকার স্রোতিজাল পুড়িয়ে ধ্বংস

সিংড়ায় ৩ লাখ টাকার স্রোতিজাল পুড়িয়ে ধ্বংস

 নৌপরিবহন উপদেষ্টার সঙ্গে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

নৌপরিবহন উপদেষ্টার সঙ্গে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সংশ্লিষ্ট

রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

এনএসআইয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া সেই জাহিদ ধরা

এনএসআইয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া সেই জাহিদ ধরা

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগ নেত্রী ও কাউন্সিলর নার্গিস গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগ নেত্রী ও কাউন্সিলর নার্গিস গ্রেপ্তার