আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫ ০৫:২২ পিএম
ছবি-ভোরের আকাশ
বরগুনার আমতলী উপজেলায় নাগাতার ভারী বর্ষণে চরম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত এবং অকার্যকর জলকপাট ব্যবস্থাপনার কারণে পানি নিস্কাশন ব্যাহত হওয়ায় আউশ ধানের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার কৃষক পরিবার চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।
জানা গেছে, জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাত (৮ জুলাই) মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। ফলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু জমিগুলোতে পানি জমে থাকায় সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে কুকুয়া, চাওড়া, আঠারোগাছিয়া, গুলিশাখালী ও হলদিয়া ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার মাঠঘাট এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। আউশ ধান বেড়িয়ে আসার উপযোগী সময় হলেও খেত পানিতে ডুবে থাকায় ফলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৬ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমিতে আউশ ধান এবং ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এখনো আউশ ধান পরিপক্ব হওয়ার আগেই পানিতে তলিয়ে গেছে। বীজতলাও পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত পানি না সরলে আউশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এর ফলে শুধু উৎপাদন নয়, কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া গ্রামের কৃষক শিবলী শরীফ বলেন, আমার আউশ ধানের খেত এখন পুরোটাই পানির নিচে। এই সময় ধান গাছ বের হওয়ার কথা, কিন্তু পানির কারণে তা হচ্ছে না।
গুলিশাখালী ইউনিয়নের বাইনবুনিয়া গ্রামের ইব্রাহিম চৌকিদার বলেন, সুইজগেট গুলো দিয়ে পানি নামছে না। একেক মাঠে পানি জমে আছে। এতদিন পরিশ্রম করে আউশ চাষ করেছি, এখন সব হারানোর ভয় লাগছে।
কুকুয়া গ্রামের কৃষক নুর হোসেন বলেন, একদিকে বৃষ্টির ঝাপটা, আরেকদিকে জলকপাট দিয়ে পানি নামছে না। এমন অবস্থায় ধান চাষে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছি।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাসেল বলেন, লাগাতার বৃষ্টির কারণে আউশ ধানের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। তবে যদি দ্রুত পানি নেমে যায়, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে আউশের বীজতলা তেমন একটা হয়নি, সেক্ষেত্রে কৃষকরা পুনরায় বীজতলা তৈরি করতে পারবেন। কিন্তু যে খেতে আউশ ধান চাষ হয়েছে, সেগুলোর ক্ষতি হলে তা আর পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে আমতলী উপজেলার কৃষকদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সময়মতো পানি না সরলে মৌসুমী ধান চাষ ব্যাহত হয়ে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের জীবন-জীবিকার ওপর বড় ধাক্কা হতে পারে।
ভোরের আকাশ/আজাসা