টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫ ০৮:৩৭ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান বলেছেন, গাজীপুরকে একটি নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তবে কিছু গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রতিবেদনে তিনি মর্মাহত।
বুধবার (২৭ আগস্ট) সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম আলোর একটি সিরিজ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এত চেষ্টার পরেও যখন আমাদের বিরুদ্ধে এমন নেগেটিভ প্রতিবেদন আসে, আমি সত্যিই মর্মাহত হই।
জিএমপি কমিশনারের অভিযোগ,“যদি সত্যিই নেগেটিভ কিছু থেকে থাকত অনেক মিডিয়া আছে, তাদের চোখে ধরা পড়ত। একটি মাত্র মিডিয়া, শুধু তাদের চোখেই ধরা পড়ল, তারাই তিনটি সিরিজ করল। এটি সবাই বোঝে,আমি এটির জবাব আসলে জানি না।
ঢাকায় বসবাস করে গাজীপুরে অফিস করা প্রসঙ্গে নাজমুল করিম খান জানান, তিনি ঢাকার গুলশানে ডিআইজিদের জন্য বরাদ্দকৃত একটি কোয়ার্টারে সপরিবারে থাকেন। এটি তার নিজস্ব বাড়ি নয়, বরং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত একটি ফ্ল্যাট যার ভাড়া তার বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়। তিনি রাস্তা বন্ধ করে মানুষের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলে অভিহিত করেন।
কমিশনার দীর্ঘদিনের পদোন্নতি বঞ্চনা এবং ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে তাকে চাকরিচ্যুতির ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০০৬ সালে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৮ বছর তিনি একই পদে আটকে ছিলেন। তার ব্যাচমেট এবং এমনকি অনেক জুনিয়র কর্মকর্তা অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পেলেও তিনি বঞ্চিত হন।
তিনি অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ঠিক আগে ‘অদৃশ্য কারণে’ এবং একটি ‘বিশেষ গোষ্ঠীর’ ইচ্ছায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল। তার মতে, এর উদ্দেশ্য ছিল নিরপেক্ষ বা বিরোধী মতের কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নির্বাচনকে ‘নির্বিঘ্ন’ করা।
নাজমুল করিম খান ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের’ সময় পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন,“নির্বিচারে গুলি করেছে, শুধু গুলি করে হত্যা করেনি, লাশ গুম করেছে, সেই লাশ স্তূপ করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এটিকে খুব ঘৃণাভরে আমি দেখেছি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সে সময় পুলিশ জনগণের ‘সর্বোচ্চ ঘৃণার পাত্র’ হয়েছিল।
তিনি পুলিশের এই নেতিবাচক ভাবমূর্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাহিনীর মধ্যে “শুদ্ধি অভিযান” চালানোর আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, নিরীহ জনগণের ওপর গুলি চালিয়েছে, লাশ পুড়িয়েছে বা গুম করেছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে চাকরিচ্যুত করতে হবে এবং জেলে পাঠাতে হবে। এ কথায় তিনি বিশ্বাস করেন,“না হলে এই পুলিশ কখনো মানবিক পুলিশ হিসেবে তৈরি হবে না।
গাজীপুরের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে “অনেকটাই ভালো” বলে দাবি করেন জিএমপি কমিশনার। তবে তিনি জনবল সংকটের কথাও স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, সীমিত জনবল নিয়ে মামলা তদন্ত ও অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও তিনি আলোকপাত করেন। বিশেষ করে সকালে গাজীপুরমুখী এবং বিকেলে ঢাকামুখী পোশাক শ্রমিকদের পরিবহনের জন্য বিআরটি লেনটিকে একমুখী করতে হয়, যা বিপরীতমুখী যানজট সৃষ্টি করে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি রোডস অ্যান্ড হাইওয়েজ এবং সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ কামনা করেছেন।
নাজমুল গণমাধ্যমের একপেশে ভূমিকার বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,“একটি মাত্র মিডিয়া আমার বিরুদ্ধে, মানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা নিয়ে সিরিজ লিখেছে। সফলতা আসলে কেউ লিখে না, খুব কমই লিখে।
ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবাণী উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যদি বাহিনীর ভেতরের “আওয়ামী সুবিধাভোগীরা”, যারা গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে নস্যাৎ করে “পতিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়, তাদের আইনের আওতায় না আনা হয়, তাহলে “জনবান্ধব পুলিশের বদলে দেশে আবারও বিস্তার হবে ফ্যাসিস্ট শাসন আমলের আধিপত্য।
ভোরের আকাশ/জাআ