-->

রেকর্ড জয়ে সিরিজ টাইগারদের

এম বদি-উজ-জামান
 রেকর্ড জয়ে সিরিজ টাইগারদের

এম বদি-উজ-জামান: টি-টোয়েন্টি ফরমেটে বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে উড়তে থাকা বাংলাদেশের সামনে ওয়ানডে ফরমেটে উড়ে গেল আয়ারল্যান্ড। প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের রানপাহাড়ে চাপা পড়েছিল সফরকারীরা। বৃহস্পতিবার টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে অবস্থা আরো খারাপ হলো আয়ারল্যান্ডের। বাংলাদেশের ত্রয়ী পেস আক্রমণে পুড়ল সফরকারী দলটি। মাত্র ১০১ রানে অলআউট হয়ে হারতে হলো ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এই প্রথমবার ৫০ ওভারের ফরম্যাটে ১০ উইকেটের জয় পেল বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল। তা না হলে হোয়াইটওয়াশ হতে পারত আয়ারল্যান্ড।

 

এই জয়ের মধ্য দিয়ে শুধুই সিরিজ জয় নয়, আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে এই সিরিজে অনেক কিছুই প্রথম অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজটি শুরু হয়েছিল নিজেদের রেকর্ড সংগ্রহ গড়ার মধ্য দিয়ে। শেষটাও হলো রেকর্ড জয় দিয়েই।

ওয়ানডে ফরমেটের ক্রিকেটে কোনো দেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রানের স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ৩৩৮ রানের ওই রেকর্ড করার পরের ম্যাচেই নিজেদের রেকর্ড ছাড়ায় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ১৮৩ রানের ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ, যা কোনো দেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জেতার রেকর্ড। আর দ্বিতীয় ম্যাচেই এক দিনের ক্রিকেটে নিজেদের ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। এই ম্যাচে বাংলাদেশ করে ৩৪৯ রানের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এই ম্যাচে বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম মাত্র ৬০ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান। এটাও সবচেয়ে কম বলে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সেঞ্চুরি। তবে বৃষ্টির কারণে আয়ারল্যান্ড মাঠে নামতেই পারেনি। ফলে ওই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। আর গতকাল আয়ারল্যান্ড আগে ব্যাট করলেও বাংলাদেশ মাত্র ১৩ দশমিক ১ ওভারে ১০২ রান করে ১০ উইকেটে জয় তুলে নেয়। এটি ওয়ানডেতে ১০ উইকেটের ব্যবধানে বাংলাদেশের প্রথম জয়। বাংলাদেশ পেসাররা প্রথমবারের মতো নেন প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট।

 

ম্যাচটি হবে কিনা, টসের কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও সেটি নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। সকালে একাধিকবার বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়েই দুপুর আড়াইটায় শুরু হয়েছে ম্যাচ। ম্যাচটি শেষ হতেও সময় লাগল না খুব একটা। হাসান মাহমুদের ৫ উইকেটের তোপে ১০১ রানেই গুটিয়ে যাওয়া আয়ারল্যান্ডকে শেষ পর্যন্ত ১০ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

 

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ১০১ রান করে আয়ারল্যান্ড। রান তাড়ায় নেমে নিশ্চিন্তে এবং কোনো ঝুঁকি না নিয়ে ব্যাটিং করেছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবং লিটন কুমার দাস। দুজনের ব্যাটেই দেখা গেছে স্ট্রোকের ফুলঝুরি। একটা সময় মনে হচ্ছিল কেউই ফিফটি পাবেন না। তবে ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে ৩৭ বলে ফিফটি তুলে নেন লিটন। অপরাজিত থাকেন ১০ চারে ৫০* রানে। মাত্র ১৩.১ ওভারেই ১০ উইকেটে জিতে যায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিম অপরাজিত থাকেন ৪১ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৪১* রানে।

 

এর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৮.১ ওভারে মাত্র ১০১ রানে অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সামনে তারা মুখ থুবড়ে পড়ে। দলীয় ১২ রানেই প্রথম শিকার ধরেন হাসান মাহমুদ। অপর ওপেনার পল স্টার্লিংকেও (৭) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। এরপর আর ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়তে পারেনি আইরিশরা। ইবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদরা এতটাই বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন যে, স্পিনারের প্রয়োজনই হয়নি। বাংলাদেশের পেস আক্রমণেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড।

৬৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ৭৯ রানেই নেই ৮টি! সাকিব তো বোলিংই করেননি। নাসুম-মিরাজ করেছেন মোট ৪ ওভার। একটা সময় মনে হচ্ছিল আইরিশরা একশ রানও করতে পারবে না। তবে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করা কার্টিস ক্যাম্ফারের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত তারা ১০১ রানে অলআউট হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ রান লরকান টাকারের। এই দুজন ছাড়া আইরিশদের কেউ দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। গতকাল বাংলাদেশের জয়ে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা তরুণ হাসানের। ক্যারিয়ারসেরা বল করে ৩২ রানে তিনি নেন ৫ উইকেট। এ কারণে ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছেন তিনি। ২৬ রানে ৩ উইকেট নেন তাসকিন। ২৯ রানে ২ উইকেট নেন ইবাদত।

 

‘লাকি থার্টিন’ হাসান

হাসান, তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেনের গতি, সুইং আর মুভমেন্টের সামনে রীতিমতো অসহায় ছিল সফরকারী ব্যাটাররা। তাদের ধরাশায়ী করতে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন ২৩ বছর বয়সি হাসান। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে তিনি ৩২ রানে নেন ৫ উইকেট।

আট ওয়ানডের ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট শিকারের স্বাদ নিলেন হাসান মাহমুদ। ৫০ ওভারের ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫ উইকেট নেয়া বাংলাদেশের ১৩তম বোলার তিনি। যদিও ১৩ সংখ্যাটি ‘আনলাকি’ হিসেবে বিবেচিত, এক্ষেত্রে এই তরুণ পেসার তার অর্জন দিয়ে হয়ে গেলেন ১৩তম ‘সৌভাগ্যবান’ বা ‘লাকি থার্টিন’।

 

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের নবম পেসার হিসেবে ৫ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখালেন হাসান। তার আগে এই নজির স্থাপন করেছেন তাসকিন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ রাহী, জিয়াউর রহমান, আফতাব আহমেদ ও ফরহাদ রেজা। স্পিনার হিসেবে এই সংস্করণে ৫ উইকেট রয়েছে সাকিব আল হাসান, আব্দুর রাজ্জাক, তাইজুল ইসলাম ও মোহাম্মদ রফিকের।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version