-->

বিশ্বকাপ ফুটবল : টেলিভিশন বিক্রিতে ভাটা

প্রণব কর্মকার
বিশ্বকাপ ফুটবল : টেলিভিশন বিক্রিতে ভাটা

প্রণব কর্মকার: বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর শুরু হতে যাচ্ছে আগামীকাল রোববার। আন্তর্জাতিক এ আসরকে ঘিরে উৎসবে মেতে উঠেছে পুরো বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা। বাংলাদেশেও এর ব্যাতিক্রম নয়। অলিতে-গলিতে চলছে ফুটবল চর্চা।

 

খেলা শুরু হলেই ফুটবলপ্রেমীরা বসে পড়ে টিভি পর্দার সামনে। আর তাই বিশ্বকাপ এলে বাড়ে টেলিভিশন বিক্রি। প্রতিবার ফুটবল বিশ্বকাপ আগে টেলিভিশন বিক্রির ধুম লাগলেও এবার তাতে ভাটা পড়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে না টেলিভিশন। রাজধানীর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমে গিয়ে দেখা যায়, ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুন নতুন মডেলের ছোট বড় বিভিন্ন আকারের টেলিভিশনের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা, দিচ্ছেন ছাড় ও উপহার। তারপরও নেই ক্রেতা। এতে অনেকটাই হতাশ বিক্রেতা।

 

অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট, এলসি খুলতে না পারা, দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস ও দাম বেশি হওয়ায় মানুষ টেলিভিশন কেনায় তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।

 

কথা হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর সনি র‌্যাংগসের বিক্রেতার সঙ্গে, তিনি জানান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও ফুটবল বিশ^কাপ ঘিরে ভালো বেচা-কেনার আশা করলেও তেমন বিক্রি নেই। টিভির দাম বেড়ে গেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টি টিভি বিক্রি করতাম, এখন ৫টি করি। রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যানে সনি, স্যামসাং, এলজিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিভি বিক্রি করে ড্রিম ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড।

 

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোস্তফা আহমেদ বলেন, গত বিশ্বকাপ এর তুলনায় এ বছর টিভি বিক্রি অনেক কম। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ শুরুর কয়েকদিন আগে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি টিভি বিক্রি করতাম। এ বছর প্রতিদিন বিক্রি হয় ৮ থেকে ৯টি।

 

ইলেকট্রনিক্স পণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি ও খুচরা মার্কেট গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেট। সেখানে কথা হয় সনি র‌্যাংগসের স্টেডিয়াম শাখার ইনচার্জ পরাগের সঙ্গে।

 

তিনি বলেন, টেলিভিশনের বিক্রি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়েও খারাপ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবার মানুষ টেলিভিশন কেনার ওপর তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে আমরা ‘স্পিন অ্যান্ড উইন’ অফার চালু করেছি। এতে ৭০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাকের সুবিধা রয়েছে। তারপরও খুব একটা ক্রেতা নেই।

 

সনি ব্রাভিয়া শো-রুমের ব্যবস্থাপক বকর বলেন, মানুষ বর্তমানে মৌলিক চাহিদাই মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট ও এলসি না খোলায় টেলিভিশনের দাম একটু বেশি। তাই বিশ্বকাপ উপলক্ষে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি বিক্রি থাকলেও তা প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়।

 

স্যামসাং ব্র্যান্ডের স্টেডিয়াম শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক রাকিব বলেন, কিছুটা বেচা-বিক্রি বেড়েছে। তবে ফুটবল বিশ্বকাপ এর আগে যেমন বিক্রির আশা করেছিলাম, তেমন হচ্ছে না। আমরা আমাদের পণ্যে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। তাও ক্রেতাদের তেমন সাড়া পাচ্ছি না। প্রত্যাশা অনুযায়ী না হলেও, ভালোই টেলিভিশন বিক্রি হচ্ছে দেশিয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনের।

 

স্টেডিয়াম মার্কেটের ওয়ালটন শো-রুমের সেলস এক্সিকিউটিভ শুভ বলেন, আগে গড়ে প্রতিদিন ১-২ টেলিভিশন বিক্রি হতো। এখন প্রতিদিন ৩-৪ বিক্রি হচ্ছে। তবে ফুটবল বিশ্বকাপ এর আরো অনেক বেশি টেলিভিশন বিক্রির আশা করেছিলাম।

 

সনি শো-রুমে টেলিভিশন কিনতে এসেছেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আলিফ হাসান। এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ পরিবারের সঙ্গে নতুন টেলিভিশনে দেখবেন বলে সনির ৪৩ ইঞ্চির একটি টিভি কিনেছেন তিনি।

 

জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন দেখার জন্য নতুন টেলিভিশন কিনলাম। এ ছাড়া ফুটবল বিশ^কাপের সময় টেলিভিশন কোম্পানিগুলো নানা ধরনের ছাড় দেয়। তাই পুরানো টেলিভিশন পাল্টানোর জন্য এই সময়কেই বেছে নিলাম।

 

বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে ফুটবল বিশ্বকাপ উপভোগ করার জন্য টেলিভিশন কিনতে এসেছেন দিপু। তিনি বলেন, ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই উন্মাদনা। ছোটবেলা থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে রাত জেগে খেলা দেখি। এবারো দেখব। তাই নতুন টেলিভিশন কিনলাম।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version