-->

বিশ্বকাপ ফুটবলের পথচলা শুরু যেভাবে

শামীম হাসান
বিশ্বকাপ ফুটবলের পথচলা শুরু যেভাবে

শামীম হাসান: বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের খেলার প্রচলন রয়েছে। অঞ্চল বা দেশভেদে বিভিন্ন খেলার জনপ্রিয়তা ভিন্ন ভিন্ন। তবে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল। আর বিশ্বকাপ হলো এই খেলার অলংকার। বিশ্বকাপ না হলে ফুটবলের উন্মাদনাই টের পাওয়া যেত না।

 

বিশ্বকাপই বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষকে এক কাতারে নিয়ে আসে। তবে খুব সহজে এই বিশ্বকাপ আজকের অবস্থানে আসেনি। এ জন্য পার হতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। স্বাভাবিকভাবেই প্রথমদিকে ফুটবলের বড় কোনো প্রতিযোগিতা ছিল না। শখের বসেই খেলা হতো।

 

১৮৭২ সালে এটি আন্তর্জাতিক রূপ ধারণ করে। স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। গøাসগোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচটি। বিশ্বজুড়ে বর্তমান সময়ে ফুটবল রয়েছে জনপ্রিয়তা শিখরে। কিন্তু আঠারো শতকের চিত্রটা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। মূলত ব্রিটিশরা ওই সময় ফুটবলে কর্তৃত্ব দেখাত। শৌর্যের প্রতীক হিসেবে তারা ফুটবল খেলতেন।

 

ইউরোপের গুটিকয়েক দেশ ফুটবলের সঙ্গে নিজেদের পরিচিতি ঘটালেও মূলত ব্রিটিশরাই ছিলেন খেলাটির হর্তাকর্তা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেতে থাকে ফুটবলের চিত্র। ইউরোপের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে সেই রেশ। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে ফুটবল।

 

আর সেসব প্রেক্ষাপট থেকে উনিশ শতকের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠা পায় ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল-ফিফা। ১৯০৪ সালের ২১ মে প্যারিসে যাত্রা শুরু করে সংস্থাটি। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও সুইডেন ছিল ফিফার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। জার্মানিও টেলিগ্রাম মারফত ওই দিনই ফিফায় যোগ দেয়।

 

ওই সময় ফুটবলের বৈশ্বিক আসর ছিল অলিম্পিক। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিফার স্বপ্ন ছিল স্বতন্ত্র প্রতিযোগিতা আয়োজনের। যার পূর্ণতা আসে দুই ফরাসি সংগঠক জুলে রিমে ও তার সেক্রেটারি হেনরি দেলাউনের হাত ধরে। ১৯৩২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক থেকে ফুটবল বাদ পড়লে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণা দেন তৎকালীন ফিফা সভাপতি জুলে রিমে। সংবিধানের শত বছর পূর্তি উপলক্ষে সে বিশ্বকাপের আয়োজক হতে আগ্রহ দেখায় লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ে। সে প্রস্তাবের পর উরুগুয়েকে প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজক ঘোষণা করে ফিফা।

 

১৯৩০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আমেরিকার ৭টি, ইউরোপের ৪টি আর উত্তর আমেরিকার ২টি দল অংশ নেয়। ১৩ দেশের অংশগ্রহণে আত্মপ্রকাশ হয় ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতার। ৪টি গ্রæপে ভাগ করা হয় দলগুলোকে। গ্রæপ ‘১’-এ ছিল সর্বোচ্চ চারটি দল। আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, চিলি ও মেক্সিকো।

 

গ্রæপ ‘২’ ব্রাজিলের সঙ্গে ছিল যুগো¯øাভিয়া এবং বলিভিয়া। স্বাগতিক উরুগুয়ে, পেরু ও রোমানিয়া ছিল গ্রæপ ‘৩’-এ। আর তিন মহাদেশের তিন দলÑ যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম ও প্যারাগুয়েকে নিয়ে গড়া হয় গ্রæপ ‘৪’। আগের অলিম্পিক আসরগুলোতে নৈপুণ্য দেখানোয় প্রথম বিশ্বকাপে ফেভারিটও ছিল উরুগুয়ে। বিশ্বকাপে বলিভিয়াকে ৪-০ গোলে হারিয়ে প্রথম জয় পায় ব্রাজিল। প্যারাগুয়ে বেলজিয়ামকে হারায় ১-০ গোলে। উরুগুয়ের কাছে ৪-০ গোলে হারে রোমানিয়া। আর গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে ৩-১ গোলে আর্জেন্টিনার কাছে হারে চিলি।

 

সরাসরি সেমিফাইনালের খেলার টিকিট পেয়েছিল উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুগো¯øাভিয়া। সেখানে আর্জেন্টিনার কাছে ৬-১ গোলে উড়ে যায় ওই সময়ের অন্যতম ফেভারিট যুক্তরাষ্ট্র। আর একই ব্যবধানে যুগো¯øাভিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল উরুগুয়ে। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম ফাইনালেই মুখোমুখি হয়েছিল দুই প্রতিবেশী দেশ, যার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল মাঠের বাইরেও। সীমান্তে নামে মানুষের ঢল। সে চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের।

 

অবশেষে ৩০ জুলাই আসে সে মাহেন্দ্রক্ষণ। মন্টেভিডিওর এস্তাদিও সেন্তনারিও স্টেডিয়ামে ফাইনাল দেখতে উপস্থিত হন প্রায় ৯৩ হাজার দর্শক।

 

এদিকে দুই দল মাঠে এলে কোন বল দিয়ে খেলা হবে, তা নিয়ে ঘটে বিপত্তি। পরে সিদ্ধান্ত হয় ম্যাচের প্রথমার্ধের খেলা হবে আর্জেন্টিনার বলে আর দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিকদের বল দিয়ে। আর্জেন্টিনার বল থেকে আকারে সামান্য বড় ছিল উরুগুয়ের বলটি। নানা উত্তেজনার মাঝেই চলতে থাকে দুই দলের খেলা। জমজমাট লড়াই শেষে ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরে উরুগুয়ে। বিশ্ব পায় ফুটবলের প্রথম চ্যাম্পিয়ন দলকে।

 

১৯৩০ বিশ্বকাপে ১৮ ম্যাচে গোল হয় ৭০টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ গোল করে টুর্নামেন্টসেরা হন আর্জেন্টিনার গুইলার্মো স্তাবিলে। জেতেন গোল্ডেন বুট (ওই সময় সু বলা হতো)। যুক্তরাষ্ট্রের বার্ট প্যাটেনড জিতে নেন ব্রোঞ্জ বুট। আর সিলভার বুট পান উরুগুয়ের প্রেদো সিআ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version