-->

ভালোবাসায় সিক্ত সোনার মেয়েরা

শামীম হাসান
ভালোবাসায় সিক্ত সোনার মেয়েরা

দৃশ্যটা ইউরোপের দেশে বেশ পরিচিত। ক্রীড়াক্ষেত্রে বড় কোনো সাফল্য পেলে বীরদের ছাদখোলা বাসে করে শহর প্রদক্ষিণ করা হয়। সেই দৃশ্য এবার দেখা গেল বাংলাদেশে। নারী সাফজয়ী খেলোয়াড়দের ঠিক তেমনি ছাদখোলা বাসে করে ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করা হলো। ১৮ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো বীরদের এমন সম্মান তো প্রাপ্যই। স্বপ্ন পূরণের সারথিদের বরণে গতকাল ঢাকা শহর অন্যরকম এক উৎসবের শহরে রূপ নিয়েছিল।

ক্রীড়াক্ষেত্রে সাফল্য নিয়ে দেশবাসীর আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার সুুযোগ খুবই কম। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই দেশবাসী উৎসবে মেতেছিল। প্রায় দুই যুগ পর আবার তেমন আনন্দে মেতেছে দেশ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল শিরোপা জিতে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। পূরণ করেছে কাক্সিক্ষত স্বপ্ন।

আগেও বাংলাদেশে ট্রফি এসেছে। বড় ট্রফিই এসেছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফি, বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ট্রফি। তবে তা শুধু ছিল দেখার, অর্জনের নয়। কিন্তু বুধবার বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা যে ট্রফিটি নিয়ে এসেছেন তা শুধু আমাদেরই, লড়াই করে অর্জন করা ট্রফি। স্বপ্নের ট্রফি নিয়ে গতকাল দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশ দলকে বহনকারী বিমান। আর তখনই হৃদয়ে অন্যরকম এক আনন্দ দোলা দেয়। স্বপ্ন পূরণের আনন্দ।

বিমানবন্দরে আগে থেকেই জাতীয় পতাকা হাতে হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকেই ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীরও দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। সাবিনারা ভিভিআইপি দিয়ে প্রবেশের পরপরই মিডিয়াকর্মীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন।

বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বের হতেই তাদের বরণ করে নেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ মন্ত্রণালয় ও বাফুফের কর্মকর্তারা। তাদের ফুলের মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। করানো হয় মিষ্টিমুখ। সেখানে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনসহ অনেক সংস্থা ও ব্যক্তি ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছোট্ট পরিসরে সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে তা আর হতে পারেনি। তবে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর গণমাধ্যমে কথা বলেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তিনি ট্রফি উঁচিয়ে বলেছেন, ‘এই ট্রফি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের। সবাইকে ধন্যবাদ, আমাদের এত সুন্দরভাবে বরণ করে নেয়ার জন্য। আমরা কৃতজ্ঞ। যদি চার-পাঁচ বছরের পরিশ্রম দেখেন, তাহলে দেখবেন সেটার ফল এখন হাতে আছে।’

দেশবাসী নারী খেলোয়াড়দের ইচ্ছা অপূরণ রাখেনি। ইউরোপের ফুটবলে শিরোপাজয়ীদের নিয়ে যেমন দেশবাসী আনন্দে মাতে, তেমনি আনন্দে মেতেছিল বাংলাদেশের ফুটবলভক্তরা। ছাদখোলা বাসে করে শহরের বিভিন্ন রাস্তা পাড়ি দিয়ে বীর ফুটবলারদের বাফুফে ভবনে আনা হয়।

পথে হাজারো মানুষ তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বীর ফুটবলাররা যখন বিমানবন্দরে নামেন রাস্তার দুই ধারে মানুষ আর মানুষ। কেউ ছুটছেন, কেউ দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন। সে এক অন্যরকম দৃশ্য। যারা গাড়িতে আছেন তারাও সাবিনাদের খোলা ছাদবাসের দিকে তাকিয়ে। বিমানবন্দর থেকে সাবিনাদের গাড়ি বের হওয়া মাত্রই এই চিত্র দেখা গেছে। প্রতিটি সড়কে মানুষের জটলা। অনেকে ভিডিও ধারণ করছেন, আবার অনেকের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেলফিবন্দি করে রাখার চেষ্টা। নির্মাণ শ্রমিক, ফুট ওভারব্রিজে সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন দিচ্ছেন। ফলে সাবিনাদের বহনকারী বাস খানিকটা ধীরগতিতে এগোতে হয়েছে। সে কারণে আশপাশের মানুষও এ উৎসবে যোগ দেয়ার কিছুটা সুযোগও পেয়েছে।

খোলা ছাদবাসে সাবিনা ট্রফি নিয়ে দাঁড়িয়ে ফুটবলপ্রেমীদের শুভেচ্ছার জবাব দিয়েছেন। তার সতীর্থরা দেশের ছোট পতাকা নাড়িয়ে দেশবাসীর ভালোবাসার প্রতিধ্বনি করেছেন।গত ১৯ সেপ্টেম্বর নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে স্বাগতিকদের ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ শিরোপা জিতেছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের। বাংলাদেশ পাঁচটি ম্যাচ খেলে সবগুলো জিতেছে। ২৩ গোল করে হজম করেছে একটি।

মন্তব্য

Beta version