বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন দেশ দখলের চিন্তা বাদ দিয়ে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ভারত কে যদি বাংলাদেশ দখল করতে হয় তাহলে ২০ কোটি লোকের (সোলজার) রক্ত ফোয়ারা দিয়ে দেশ দখল করতে হবে। মির্জা আব্বাস বলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল বিদেশি শক্তি দ্বারা একটি পরিকল্পিত হামলা। এই হামলায় কখনোই বিএনপি যুক্ত ছিল না। একটা বিদেশি শক্তি এই অপকর্ম করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফাঁসাতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, এমনকি একটি ভুল, মিথ্যা, সাজানো মামলা তৈরি করে সাজানো গল্পের ওপর ভিত্তি করে সাজা দিয়েছিল। বিজয়ের প্রথম দিনে আপনাদের একটি সুখবর দিতে চাই। সেই মামলার রায় আজ প্রকাশ পেয়েছে এবং তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, বিগত দিনগুলোতে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তিনি আমাদের মাঝে শুভেচ্ছান্তে ফিরে আসবেন খুব তাড়াতাড়ি। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থ করেছেন এবং খালাস দিয়েছেন।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলোচনা সভায় স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপত্বিতে বিশেষ অতিতি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব আবুল সালাম আজাদ, গণঅধিকার পরিষের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ প্রমুখ।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা ইউনূস সরকারকে ঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করছি। কিছু লোক দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ট্যাগ করার চেষ্টা করছে। আমি তাদের বলতে চাই। তিনি আরও বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এই কথা আমরা বারবার বলবো, বলতে হবে। কারণ বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সঠিক ইতিহাস ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু আমরা সঠিক কথাগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। বিএনপি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ১৫ বছর যুদ্ধ করেছি। আমরা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম চাই, কিন্তু অপসাংবাদিকতা চাই না। গণতন্ত্র এবং বিএনপি একসঙ্গে যায়। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুট করেছে, মানুষ গুম, খুন করেছে। পানি এবং তেল কখনো মেলে না, তেমনি আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না। ভারতীয় নেতাদের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, “তারা বলে যে ‘বাংলাদেশকে আমরা স্বাধীন করে দিয়েছি’। ভারত আমাদের দেশকে স্বাধীন করে দেয়নি। আমরা বলি, আমরাই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি, বরঞ্চ তোমরা (ভারত) পাকিস্তানকে ভাগ করেছিলে। তোমাদের স্বার্থে, আমাদের স্বার্থে নয়।”
ভারতীয় গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, তারা বলেছে, দু’টি হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে চায়। এমনি বলে, ‘চট্টগ্রাম দখল করতে চায়’। সবাই বলে বাংলাদেশ ছোট, গরিব দেশ। কিন্তু আমি মনে করি বাংলাদেশ উদার ও অনেক শক্তিশালী দেশ। ভারতকে একটা কথা মনে রাখতে, আমাদের সোলজার কম। আমি তাদের ভাবতে বলব, আমরা একাত্তর সালে ট্রেনিং ছাড়া যুদ্ধ করেছি। ২৪’ সালে হাসিনার পতনেও আমরা, আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিনা অস্ত্রে যুদ্ধ করেছি। বাংলাদেশে ২০ কোটি লোক কিন্তু সোলজার। যদি আজকে বাংলাদেশ দখল করতে হয়, তাহলে ২০ কোটি লোকের রক্ত পাড়া দিয়ে দেশ দখল করতে হবে। আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে দেশের সকল ইতিহাস নষ্ট করেছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে সঠিক ইতিহাস নষ্ট করে ফেলেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। দেশের সেক্টর কমান্ডারের অফিস ছিল ভারতে। একমাত্র জিয়াউর রহমানের অফিস ছিল সিলেটে। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ইতিহাস বইয়ে পড়েছে। তারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। আমরা সম্মুখ সারির যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছি। আওয়ামী সরকারের আমলে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এখনো আমাদের কোর্টে যেতে হয়। কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হবে। ইনশা আল্লাহ, সঠিক সময়ে আমরা ন্যায় বিচার পাব। আমার এমন কোনো বছর নাই যে বছর জেলে যাই নাই।মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকারকে বিব্রত করার জন্য একটি চক্রান্ত করছে। কিন্তু আমরাসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল, এই সরকারকে স্বার্থক করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, কিন্তু একটি মহল বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সাথে মেলাচ্ছে। দেশের কিছু ইউটিউবার আছে, যাদের কোনো কাজ নাই তারা এসব কাজ করছে। আমরা প্রমাণ করেছি গণতান্ত্রিক দল। কারণ আমরা সুষ্টুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি। আওয়ামী লীগ যদি সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করত, তাহলে আজকে দেশের এই অবস্থা হতো না।
আলোচনা সভায় দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, শেখ হসিনা সরকার ক্ষমতায় থেকে ইতিহাস বিকৃত করছে যা ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনেত মাধ্যমে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে।তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিব যুদ্ধে পর একদলীয় শাসন কায়েম করার জন্য ৪০ হাজার দেশ প্রেমিক মানুষকে হত্যা করেছে। বাকশালকে আরও শক্তিশালী করার জন্য শান্তিরক্ষী বাহিনী সৃষ্টি করেছে। ১৫ আগষ্ট যদি ঘটনা না ঘটতো তাহলে বাংলাদেশে আর স্বাধীনতা থাকতো না। যুগে যুগে এইদেশের স্বাধীনতার উন্নয়নে জিয়াউর রহমান অবদান অনেক।
আলোচনা সভা যোগ দিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, শেখ হাসিনার অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো প্রথম লড়াই করেছিল। সেই লড়াইয়ে পরে যুক্ত হয়েছে ছাত্র জনতা।
আর্মি স্টোডিয়ামে কনসার্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, '২৪ এর গণ অভ্যুত্থানে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে বহু ছাত্র জনতা মৃত্যুবরণ করেছে। এমন বিপ্লবে যেখানে হাসপাতালে ছাত্র জনতা আহত অবস্তায় কান্না করছে সেখানে আর্মি স্টোডিয়ামে শিল্পী নিয়ে আনন্দ উল্লাস করছে এটা কিসের ইঙ্গিত। জাতিকে বিপ্লব থেকে দূরে থাকতে এই ধরনের আয়োজন করা হয়েছে। এই গণ হত্যার সাথে জড়িত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে হবে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য