-->

হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়ায় আলোকিত সেনাকুঞ্জ

এম. সাইফুল ইসলাম
হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়ায়
আলোকিত সেনাকুঞ্জ

অনাড়ম্বরভাবে পালিত হলো এবারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস। এক যুগ পর এবারের সশস্ত্র বাহিনীর দিবসটি ছিল একটু অন্যরকম। এই অনুষ্ঠানটির প্রতি আগে যেমন বিশেষ নজর থাকতো দেশবাসীর। ঠিক তেমনই একটি দিন যেন আবার ফিরে পেলেন তারা। আর সর্বস্তরের মানুষের এই বিশেষ নজরের কারণ আর কেউ নন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি। তবে এবারের অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি অন্যরকম এক অনুভূতি এনে দিয়েছে দেশবাসীর কাছে। এই অনুষ্ঠানে তার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা যেন আলো ছড়িয়েছে সেনাকুঞ্জে। তার উপস্থিতি গোটা অনুষ্ঠানে ভিন্ন আমেজ যোগ হয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের সহধর্মিণী তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে আনন্দিত হয়েছেন ছাত্র-জনতার গণঅভূত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ তার উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেই। বেগম খালেদা জিয়াকে অনুষ্ঠানে সশরীরে দেখতে পেয়ে অনুভূতি জানিয়ে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

এদিকে, দলীয় প্রধানের হাস্যোজ্জ্বল ছবি দলটির নেতাকর্মীদেরকে মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, বহু ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে শেষ হাসিটা জীবনভর ‘আপসহীন ও সংগ্রামী’ বেগম খালেদা জিয়ার মুখে। তিনি ভালো থাকলেই যেন দেশ ও গণতন্ত্রে সুবাতাস বয়ে চলে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল সশস্ত্র বাহিনী দিবস। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন বেগম খালেদা জিয়া। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে তার গাড়িবহর সেনাকুঞ্জের উদ্দেশে রওনা করে। বিকেল ৩টা ৪৩ মিনিটে সেনাকুঞ্জে পৌঁছান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন তার কনিষ্ঠ পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি।

অনুষ্ঠানে একাধিক অংশগ্রহণকারী জানান, বেগম খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান তাকে অভ্যর্থনা জানান। পাশাপাশি তারা কুশলাদি বিনিময় করেন।

বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছানোর পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমে বিএনপি চেয়ারপাসনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূস পাশাপাশি চেয়ারে বসেন। এসময় তাদের বেশ হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত এবং অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান। ড. ইউনূস বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আজ (বৃহস্পতিবার) এখানে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনীতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। আজ সুযোগ পেয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত যে, আপনাকে (খালেদা জিয়াকে) এই সুযোগ দিতে পেরেছি। তিনি বলেন, শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই অনুষ্ঠানে আপনাকে বিশেষভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। এসময় খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।

অনুষ্ঠান চলাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের অবদানের কথা স্মরণ করে তিন উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানান। তাদের সঙ্গেও বেগম খালেদা জিয়া সংক্ষিপ্ত আলাপ করেন। কুশল বিনিময় শেষে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনটি ছবি শেয়ার দিয়ে লেখেন, ‘আপনাকে এই সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা গর্বিত।’ ছাত্র নেতাদের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার কুশল বিনিময়ের একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

ওদিকে, দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে অনুষ্ঠানে দেখে অনেকটাই আপ্লুত হয়ে পড়েন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকে কাঁদতে দেখা গেছে। মহাসচিব ছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দাকার মোশাররফ, ড. আব্দুল মঈন খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলে এলাহী আকবর, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এ কে এম শাসমুল ইসলাম প্রমুখ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

বেগম খালেদা জিয়াকে সম্মান জানানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠানস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এদেশ, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য তার জীবনের সবচেয়ে বড় সময়টা দিয়ে দিয়েছেন। তাকে ১২ বছর পরিকল্পিতভাবে এই সবচেয়ে দেশপ্রেমিক বাহিনী সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী তাদের থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে, তিনি আজকে ম্যাডামকে যে সম্মান দেখিয়েছেন, এতে আমরা যেমন কৃতজ্ঞ হয়েছি, একই সঙ্গে গোটা জাতি আজকে আনন্দবোধ করেছে।

এদিকে, দলীয় প্রধানের দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যারপরনাই খুশি হয়েছেন। তারা আবেগাপ্লুত। তারা দলীয় প্রধানকে ‘আপসহীন ও সংগ্রামী’ উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক।

এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়াসহ তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করেছিল পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বেগম খালেদা জিয়া আজ মানুষের ভালোবাসায় মুক্ত আকাশে হাস্যোজ্জ্বল। দলীয় প্রধানের হাসিমাখা মুখে দলের একজন কর্মী হিসেবে আমরা আশান্বিত ও আপ্লুত। তিনি বলেন, দলীয় প্রধানকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার সময়কার কান্নার ছবি ভাইরাল হয়েছিল সেটা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। ওই ছবিই স্বৈরাচারের জন্য কাল হয়েছে। আজ তা ফিরেছে হাসির ঝিলিক নিয়ে। আজ সেই ক্যান্টনমেন্টের অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি দেশবাসীকে আনন্দিত করেছে।

যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুখে হাসি মানেই গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের জন্য সুবাতাস। দেশ ও মানুষের স্বার্থে তিনি আপসহীন। সারাজীবন সংগ্রামী মানুষটির মুখে হাসি কর্মীদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়েছে।

সর্বশেষ ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ একযুগ পর তিনি ফের সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন গতকাল। ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সিলেট সফর ছিল তার সর্বশেষ কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান। স্বৈরাচারের যাতাকলে কারাবাস ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জালড়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ অর্ধযুগ পর এবার সশরীরে কোনো কর্মসূচিতে যোগ দিলেন।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version