রাজনীতিবিদদের ব্যক্তি স্বার্থ পরিহার করে জনমানুষের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমঝতার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রজন্মের চেতনা।
সোমবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানী শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
দেশ-জাতির বৃহত্তর স্বার্থে- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ড ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পরিহার করার দাবিতে ছাত্র-যুবকের সমন্বয়ে বেলা ১২টা থেকে একঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কমসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক চর্চা হয় জনগণের কল্যাণে আর আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের একগুয়েমির কারণে জনমানুষ আজ উদ্বেগ-উৎকন্ঠাসহ আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সরকার বলছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন আর বিরোধীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থেকে সরকার পতনের জন্য গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ায় জাতীয় অর্থনীতি আজ হুমকির মুখে। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশের সাপ্লাই চেইনকে ভীষণভাবে বিঘ্নিত করছে। যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে পণ্য উৎপাদন-বাজারজাতকরন, রপ্তানী ও সেবাখাতের উপর। শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষা ও ক্লাস নিয়ে উদ্বিগ্ন। জনমানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, দৈনন্দিন খরচ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই নাশকতাসহ হিংসা-বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডে ক্ষতি হচ্ছে জান-মালের। চলমান সহিংসতার দায় তাঁরা একে অপরের উপর চাপাচ্ছেন। গত ১৫ তারিখ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনী তফশিল অনুযায়ী ভোট ৭ জানুয়ারি। অথচ- রাজনৈতিক দলগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করাসহ জাতীয় শক্তি ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অগ্রযাত্রাকে অর্থবহ করতে, তাঁরা আলোচনার মাধ্যমে আজও ঐক্যমতে পৌঁছানোর কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। তাদের এই অনড় অবস্থান আর নাশকতার ফলে জাতীয় ক্ষয়-ক্ষতির দায় কার?
বক্তারা বলেন, দেশকে বিভ্রান্তি আর অরাজকতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হলে জাতীয় স্বার্থেই সরকার আর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য একান্ত প্রয়োজন। জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ না হলে, জাতির কোনো কল্যাণ হবে না। রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ যদি এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে না পারেন এবং ত্যাগ ও উৎসর্গের মনোভাব নিয়ে জনগণের আস্থা অর্জনে তৎপর না হন, বৃহৎ দলের বা বড় নেতাসুলভ দাম্ভিকতা পরিত্যাগ করে ঐক্য গড়ে তুলতে আন্তরিক না হন, তাহলে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য। তাঁদের এই উপলব্ধি একান্তই প্রয়োজন যে, বিরাজমান সঙ্কট উত্তরণ কেবল সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব। আর যদি তা’না হয়, তাহলে অভাগা এই দেশের কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন করে লাভ কি? এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে- নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হলে, জনগণের কোন লাভ না হলেও কিছু লোকের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার হয়।
বক্তারা আরও বলেন, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয় বিরোধী দলগুলোরও দায়-দায়িত্ব আছে। জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্যই রাজনীতিতে জ্বালাও-পোড়াও-এর পরিবর্তে নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যদিয়ে মতপার্থক্য ও সঙ্কট নিরসন করা। বিরাজমান সঙ্কট সৃষ্টিতে বৈদেশিক শক্তির হাত থাকাটা বিচিত্র কিছু নয়। তারা পারলে এতে মদদ যুগিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারেও দ্বিধা করবে না। তাই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির অবর্তমানে সময়ের বিবর্তনে দেখা দিচ্ছে চরম অরাজকতা, বিপন্ন হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ গোলাম নবী হোসেন, ও সদস্য মো. মাসুদ আলম, ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ছালেক-উর-রহমান সুমন, ও সদস্য আবদুল আলীম পার্থ প্রমুখ। কর্মসূচিটি পরিচালনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এম রাশেদ রাব্বি ।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য